Ajker Patrika

জাজিরায় কালিজিরা মধু চাষে সফল কৃষক

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ১৬
জাজিরায় কালিজিরা মধু চাষে সফল কৃষক

সম্প্রতি বিভিন্ন ফুলের মধু চাষে ঝুঁকছেন তরুণেরা। হয়েছেন উদ্যোক্তা। গড়ে তুলেছেন মধুর খামার। পেয়েছেন সফলতা। তরুণদের এই সফলতা ও কৃষি অফিসের পরামর্শে এবার শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ধনে ও কালিজিরাচাষিরাও নেমেছেন মধু চাষে। এতে বেড়েছে ফসলের উৎপাদন। সঙ্গে ফসলের মৌসুমে বাড়তি আয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা।

পদ্মার পলিবিধৌত জাজিরা উপজেলায় ধনে, কালিজিরাসহ পেঁয়াজ-রসুনের মতো নানা ধরনের মসলাজাতীয় ফসলের চাষ হয়। উচ্চমূল্যের মসলার ফসল চাষে রয়েছে নানা উপকারিতা। একদিকে ফসল, অন্যদিকে ওই কালিজিরা ফুল থেকে আসে উন্নত মানের মধু, যাতে রয়েছে ঔষধি গুণ। ফলে দেশে-বিদেশে কালিজিরার মধুর রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিজুড়ে জাজিরাতে দেখা যায় ভ্রাম্যমাণ মৌখামারিদের। যাঁরা আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। প্রতিবছর এ উপজেলায় গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মৌবাক্স বসানো হয় ধনে ও কালিজিরার ফসলের মাঠে। প্রথম দিকে মৌ চাষকে স্থানীয় কৃষকেরা ভালোভাবে নেননি। পরে কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে কৃষকেরা নিজেরাই এই মৌ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফসলি মাঠে মৌবাক্স বসালে ফলন কমে যাবে কিংবা রোগ বা পোকামাকড় বেশি হয় বলে আগে ধারণা ছিল তাঁদের। তবে কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সে ধারণা দূর হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকেরা ফসলের মাঠের পাশাপাশি আমবাগানেও মৌবাক্স বসাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এতে শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে জাজিরাতে প্রতি কেজি কালিজিরার মধু বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০০-৮০০ টাকা।

জাজিরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২৩টি খামারের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মৌবাক্স স্থাপন করা হয়। এসব খামার থেকে প্রায় ৬৫ মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য হতে পারে প্রায় ১০ কোটি টাকা। মধু উৎপাদনের খবর এবং স্থানীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন দেশি কালিজিরার মধুর ব্র্যান্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, যা ইতিমধ্যে অনলাইনসহ দেশের বাজারে বেশ সাড়া ফেলেছে। জাজিরাতে সাতজন মৌ উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। যাঁরা মধু উৎপাদন ও পাইকারি বাজারে বিক্রি করছেন। সেখান থেকে মধু প্রক্রিয়াজাত করে অন্য উদ্যোক্তারা এটিকে বাজারজাত করেন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকার বাজারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে; এ সময় কালিজিরার উৎপাদনের পাশাপাশি বাড়তি মধু উৎপাদন হবে। এতে কৃষক ও মৌচাষিরা অধিক লাভবান হবেন বলে আশা জেলা প্রশাসনসহ মধুচাষিদের।

বড়গোপালপুর ইউনিয়নের কৃষক রাজ্জাক ফকির বলেন, ‘আগে আমাগো দেশে এই মাছির চাষ ছিল না। তহন যেই জিরা পাইতাম, অহন তার চেয়ে বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ কেজি জিরা বেশি পাইতাছি।’

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় পূর্বনাওডোবা ইউনিয়নের শফিক মোড়ল, জয়নগর ইউনিয়নের দবির খান, বিলাশপুর ইউনিয়নের শাজাহান মুন্সিসহ স্থানীয় অনেক কৃষকের। প্রত্যেকেই কালিজিরার পাশাপাশি মধু চাষ করে এখন লাভবান তাঁরা।

পালেরচর ইউনিয়নের মৌ উদ্যোক্তা দুদু মিয়া বলেন, ‘জাজিরাতে আগে সাতক্ষীরাসহ অন্য জেলা থেকে মৌ চাষ করতে আসতেন। স্থানীয় চাষিরা এই চাষ সম্পর্কে জানতেন না। বাড়তি হিসেবে মধু চাষের উপকারিতা জানতে গত বছর উপজেলার একটি মৌমেলায় যাই। সেখান থেকে আগ্রহ জাগে। তখন কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তাঁরা প্রশিক্ষণসহ চারটি মধু চাষের বাক্স দেন। সেখান থেকেই শুরু। এখন আমার খামারে বাক্সের সংখ্যা ৯০। গত মাসে ২ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেছি এবং আশাবাদী ধনে ও কালিজিরা থেকে ৩-সাড়ে ৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করতে পারব।’

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাজিরাতে কালিজিরা ফুলের মধু বাণিজ্যিকভাবে ইতিমধ্যে একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। সেখানে জেলা বীজ প্রশাসনের ব্র‍্যান্ডিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণে গতি আরও বেড়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকসহ মৌ চাষে কারিগরি পরামর্শ দিচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত