Ajker Patrika

থানচি বাজারে সম্প্রীতির ইফতার

অনুপম মারমা, থানচি (বান্দরবান)
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৫: ৪৮
Thumbnail image

ছোট পরিসরে খাবারের আয়োজন। অতিথিও নানা ধর্মাবলম্বীর। তবে একসঙ্গে ইফতার করলেন সবাই। সম্প্রীতির এই ইফতারে সবাইকে দেখা গেল হাসিমুখে আহার করতে।

গত সোমবার বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদর বাজারে দেখা গেছে এই দৃশ্য। বাজারে রিড থানচি ট্রেড সেন্টারে লিয়াকত সওদাগর প্লাস্টিক পণ্যের দোকানে এই ইফতারের আয়োজন করেন দোকানি। প্রতিদিনই স্বল্প পরিসরে তাঁর আয়োজনে অংশ নেন অনেকে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এই ধরনের সম্প্রীতির ইফতার আয়োজন সচরাচর হয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

গত রোববার থেকে দেশে রোজা শুরু হয়েছে। তবে থানচিতে এখনো দরিদ্র-অসহায়দের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ ও ইফতার মাহফিলের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।

উপজেলার থানচি ও বলিপাড়া বাজার এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাশাপাশি অনেক বাঙালি পরিবার বাস করে। সেই সুবাদে থানচি বাজারে পাঁচ শতাধিক দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকে মারমা, ত্রিপুরা, সনাতন ধর্মাবলম্বী, বড়ুয়া, ম্রো ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর লোক। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী বাঙালি। রমজানে রোজাদারদের সম্মানে এখানে অন্য সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ী, বাজারগামী অনেকে ধূমপান থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকেন।

লিয়াকত সওদাগরের প্রতিদিনের আয়োজনে রোজা দ্বিতীয় দিনের ইফতারের অংশ নেন এনজিওকর্মী ইউস ত্রিপুরা, শ্রমিক শিশির বিন্দু দাশ, হৃদয় দাশ, শৈসাচিং মারমা, প্রেসক্লাবের সভাপতি মংবোওয়াংচিং মারমাসহ কয়েকজন।

ইউস ত্রিপুরা বলেন, ‘রোজা এক মাস এ রকমে প্রতিটি ঘরে, দোকানে স্বল্প পরিসরে সাধ্যমতো করা গেলে মনে হবে, পাহাড়ি-বাঙালি ভাই-ভাই। একসঙ্গে থাকব, বাঁচব, মরব, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করব।’ সবাইকে এই মনোভাবে কাজ করার আহ্বান জানাই।

থানচি বাজার পরিচালনা কমিটি সভাপতি স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ইসলাম ধর্মে রোজা হচ্ছে আবশ্যিক। রমজান মাসের রোজা রাখা তাঁদের দায়িত্ব। আর রোজাদারদের সম্মান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমাদের সবসময় সম্প্রীতির মনোভাব নিয়ে চলাফেরা, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করা উচিত।’ এ জন্য সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।

ব্যবসায়ী লিয়াকত সওদাগর বলেন, ‘আমার পাশে মারমা, সনাতন ধর্মাবলম্বী, বড়ুয়া দোকানদার রয়েছেন। আমি সারা দিন রোজা রাখি, ইফতারের সময় তাঁদের ফেলে ইফতার করা সম্ভব নয়। তাই পার্শ্ববর্তী দোকানদারদের নিয়ে ভালোবাসা-সম্প্রীতির ইফতার করি। আল্লাহ রোজা ফরজ করেছেন। সবাইকে নিয়ে ইফতার আমি আল্লার নামে উপভোগ করি।’

থানচি ট্রেড সেন্টারের ৪০ দোকান রয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। মনোরঞ্জন রেস্টুরেন্টে ইফতার পার্টির পরিবেশ রাখছে কর্তৃপক্ষ।

থানচি ট্রেড সেন্টারে পরিচালনা কমিটি সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কেউ উদ্যোগ নিয়ে হতদরিদ্র, কৃষক-শ্রমিক, দরিদ্র-সুস্থ রোজাদারসহ অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে নিমন্ত্রণ করে ইফতার পার্টি করলে আমরা সহযোগিতা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত