Ajker Patrika

টিকিট ছাড়াই রেল ভ্রমণ!

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
টিকিট ছাড়াই রেল ভ্রমণ!

বেলা সাড়ে ১১টা। এগারো সিন্দুর গোধূলী এক্সপ্রেস ট্রেন কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো। যাত্রীরা স্টেশনে আসছেন ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে। টিকিট ছাড়া যেসব যাত্রী স্টেশনে এসেছেন তাঁদের কাছে রেল পুলিশ গন্তব্য জানতে চায়। যাত্রীরা গন্তব্য ঢাকা জানালে পুলিশ তাঁদের নিয়ে ট্রেনের পরিচারকের (অ্যাটেনডেন্ট) কাছে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

আবার অনেক যাত্রী সরাসরি প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের কাছে যেতেই পরিচারকেরা গন্তব্য জানতে চাচ্ছেন। যাত্রীরা গন্তব্য ঢাকা জানালে পরিচারকেরা দরদাম করে টাকা নিয়ে বগির ভেতর সিটে বসিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিটি বগিতে ১৫-২০ জন যাত্রী এভাবেই বিনা টিকিটে সিটে, মোড়া বা টেবিলে বসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। রেল পুলিশ ও পরিচারক মিলে তাঁদের বিনা টিকিটেই পৌঁছে দেবেন ঢাকা।

গত রোববার কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্মে, স্টেশনের সামনের দোকান ও কাউন্টারের সামনেই দেদার চলছে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি। সাধারণ যাত্রীরা বাধ্য হয়েই কালোবাজারে টিকিট কিনছেন।

অভিযোগ রয়েছে, রেল পুলিশ ও স্টেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলেই এ কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন স্টেশনমাস্টার ও রেল পুলিশ। তাঁরা বলছেন, এমন হওয়ার কথা নয়।

মুরাদ মাহমুদ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘কাউন্টার থেকে টিকিট কেনা ঝামেলা। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে হয়। আবার বেশির ভাগ সময়ই টিকিট পাওয়া যায় না। তাই আমার একজন লোক আছে এখানে। তাঁকে আগে ফোন করে বলে দিই। সে আমার জন্য টিকিট রেখে দেয়। ৫০-১০০ টাকা বেশি নেয়।’ 
এনামুল নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘টিকিট পাইনি। তবে রেলকর্মী বলেছেন, তাঁকে ১৫০ টাকা দিলে সিটে বসিয়ে ট্রেনে করে ঢাকা নিয়ে যাবেন, আর আমার যেতেই হবে ঢাকা, বিকল্প কিছুর ব্যবস্থা নেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেশনের একজন দোকানদার বলেন, ট্রেনের কাছে যান। ব্যবস্থা হয়ে যাবে। পুলিশ ও রেলকর্মীরাই আপনার গন্তব্য জানতে চাইবেন। তাঁরাই টিকিটের খোঁজ দেবেন। প্রয়োজনে সিটে বসিয়ে নিয়ে যাবে আপনার গন্তব্যে। প্রতিদিনই এমন হচ্ছে সবার সামনে। কাউকে দেখিনি কোনো ব্যবস্থা নিতে।

আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে এবং প্ল্যাটফর্মে রেলওয়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করে বিনা টিকিটে ট্রেনে যেতে। নিরীহ যাত্রী ও ছাত্ররা তাঁদের লক্ষ্য। অন্যদিকে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের প্রতিটি বগির সামনে অ্যাটেনডেন্ট (পরিচারক) বুঝেশুনে যাত্রীদের কাছে তাঁদের গন্তব্য জানতে চান। দরদাম হাঁকিয়ে ট্রেনে ওঠান। কেউ বসেন সিটে, কেউ মোড়ায়, আবার কেউ বসেন টেবিলে। কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি আন্তনগর ট্রেনের এই অবস্থা।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনের মাস্টার ইউসুফ বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আমিনুল হক বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত