Ajker Patrika

স্বাস্থ্যসেবা: জেলা হাসপাতালে নেই আর নেই

রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ০৩
স্বাস্থ্যসেবা: জেলা হাসপাতালে  নেই আর নেই

দেশের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর মধ্যে মাত্র চারটিতে এমআরআই এবং নয়টিতে সিটি স্ক্যান মেশিন আছে। এর মধ্যে তিনটি এমআরআই মেশিন এবং তিনটি সিটিস্ক্যান মেশিন অচল পড়ে আছে। দু-একটি জেলা হাসপাতাল ছাড়া কোথাও নেই আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস সেবা। প্রয়োজনের অর্ধেক লোকবল দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি ৬০টি জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার এমন করুণ চিত্র উঠে এসেছে।

পরিদর্শনে দেখা গেছে, এসব হাসপাতালের চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মধ্যে এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম, ওটি টেবিল ও লাইট, ডায়াথার্মি, সাকার, অ্যানেসথেসিয়া মেশিনের সরবরাহ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো পড়ে আছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’। সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি যন্ত্র মেরামত করার আগে ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) প্রত্যয়ন লাগে। নিমিউর মাধ্যমে মেরামতের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত কারণে অনেক সময় লেগে যায়। এতে বেশির ভাগ সময় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।

অধিদপ্তরের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ৬০টি জেলা হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স আছে ১৪৫টি; এর মধ্যে সচল ৮৮টি, অচল পড়ে আছে ৫৭টি, মেরামত অযোগ্য ৩৪টি। ১৯০টি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে সচল ১০৮টি, অচল ৮২টি, মেরামত অযোগ্য ৪৩টি। ইসিজি মেশিন ২৯৭টি; সচল ১৮৫টি, অচল ১১২টি, মেরামত অযোগ্য ৫০টি। আলট্রাসনোগ্রাম (ইউএসজি) মেশিন ১৪৯টি; সচল ৭১টি, অচল ৭৮টি, মেরামত অযোগ্য ২৭টি। ওটি টেবিল ২৩০টি; সচল ১৬২টি, অচল ৬৮টি, মেরামত অযোগ্য ২৬টি। ওটি লাইট (সিলিং) ১৭২টি; সচল ১২২টি, অচল ৫০টি, মেরামত অযোগ্য ২৭টি। ওটি লাইট (পোর্টেবল) মোট ২৩৬টি; সচল ১৫৫টা, অচল ৮১টি, মেরামত অযোগ্য ২৪টি। অ্যানেসথেসিয়া মেশিন আছে ১৪৯টি; সচল ৭১টি, অচল ৭৮টি, মেরামত অযোগ্য ৪১টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে গুণগত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য অবকাঠামোগত স্বল্পতা রয়েছে। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতাল এবং ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

পরিদর্শনকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ জেলা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অপারেশন থিয়েটার পূর্ণমাত্রায় সচল নয়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর একটি সামগ্রিক চিত্র পেয়েছি। প্রথম ধাপে অতিপ্রয়োজনীয় যন্ত্রগুলো কেনার চেষ্টা করছি। কিছু যন্ত্রপাতি কেনার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে, কিছু যন্ত্র সরবরাহ করতে দাতাদের অনুরোধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পদায়ন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলমান আছে। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’

আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকেও কয়েকটি জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করে একই রকম চিত্র পাওয়া গেছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের সংকট ছাড়াও শয্যাসংকট, কর্মচারীসংকট তো আছেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে থেকে করিয়ে আনতে হয়। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে। শয্যাগুলো তেলাপোকার আখড়া। টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে চক্ষু বিভাগের সামনে অর্ধশতাধিক রোগীর ভিড় দেখা যায়। কিন্তু চিকিৎসক অনুপস্থিত। তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, চক্ষু চিকিৎসক কয়েক দিন আগে বদলি হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. হোসেন ইমাম বলেন, ‘কিছু সমস্যা আছে। আমি এবং তত্ত্বাবধায়ক দুজনেই নতুন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই লোকবলসংকটে কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।’

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ১৫০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও বাড়েনি জনবল। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। সোমবার বেলা ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়ন থেকে জেনারেল হাসপাতালে সেবা নিতে আসা এক অন্তঃসত্ত্বা রোগীর স্বামী জানান, হাসপাতালে আসার পর আলট্রাসনোগ্রাম বাইরে থেকে করিয়ে আনতে হয়। জানা যায়, তিন মাসের বাচ্চা পেটের ভেতরে মারা গেছে, একটি ডিএনসি করতে হবে। একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে রাতে তাঁকে ডিএনসি করতে হয়েছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও সেই আলোকে পদায়ন হয়নি। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

পাবনা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক রোগী ও তাদের স্বজনেরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের পরিবেশ থাকার মতো নয়। চারপাশ নোংরা। টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। পাঁচ মাস ধরে বন্ধ এক্স-রে। চার বছর ধরে বন্ধ ইটিটি মেশিন। প্যাকেটবন্দী হয়ে আছে আইসিইউ শয্যাসহ অন্যান্য সামগ্রী। রক্তের কিছু পরীক্ষা ছাড়া বেশির ভাগ পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হচ্ছে।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ওমর ফারুক মীর বলেন, ‘অনেক সীমাবদ্ধতা ও সংকটের মধ্য দিয়ে চালাতে হয়। এক্স-রে ফিল্ম তো আমি যখন তখন সরকারের কাছে চাইলে পাব না। ফুরিয়ে গেলে কিছু করার থাকে না। অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকসহ জনবলের সংকটে আইসিইউ চালু করা যাচ্ছে না।’

[এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নোয়াখালী প্রতিনিধি মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ, পাবনা প্রতিনিধি শাহিন রহমান, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মিলন উল্লাহ।]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

মেয়াদোত্তীর্ণ ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে সার্ভার, ঝুলে আছে ৭ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

যুবককে ধর্ষণের প্রত্যয়নপত্র দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত