Ajker Patrika

বাঁশশিল্পের শৌখিন পণ্য

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৩৪
বাঁশশিল্পের শৌখিন পণ্য

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের পুলহাট বাজার। পথের ধারে ছোট্ট একটি সাইনবোর্ডে লেখা বাঁশের চারা উৎপাদনকারী নার্সারির নাম। বাঁশ বাংলাদেশের অতি পরিচিত উদ্ভিদ হলেও এর চারা উৎপাদনের কোনো নার্সারি কখনো চোখে পড়েনি। সাইনবোর্ডের নিচে ‘ব্রীফ’ নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) নাম লেখা। এনজিওটি দীর্ঘদিন ধরে দিনাজপুর অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে।

বাঁশের বেড়া ঠেলে ব্রীফের কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ি। ভেতরে দেখা গেল, সেটি অফিস কাম শোরুম। বিভিন্ন সৌখিনপণ্যে ঠাসা। সব পণ্যই বাঁশের তৈরি। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। কী নেই সেখানে! বাঁশের চেয়ার-টেবিল থেকে শুরু করে কলমদানি, বিভিন্ন রকমের বাহারি ঝাড়বাতি, ফল রাখার ঝুড়ি, টেবিলে ফাইল রাখার ট্রে, ফুলদানি, দেয়ালঘড়ি, টিস্যু বক্স, পানি খাওয়ার মগ, পানির বোতল, ফ্লাওয়ার স্ট্যান্ড, বিভিন্ন শোপিসসহ অনেক পণ্য অগোছালোভাবে গোটা রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। শুধু তা-ই নয়, প্রাচীন যুগ থেকে বাঁশের তৈরি নানা জিনিসপত্রও রয়েছে। এ যেন বাঁশশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখার লড়াই।

পাশের কক্ষে বাঁশ প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন মেশিন ও অন্যান্য দেশীয় যন্ত্র দিয়ে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। তাঁরা জানালেন, এখানে প্রক্রিয়াজাত করার পর সেই বাঁশ মজুরেরা নিয়ে যান। তারপর চাহিদামতো বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে সেগুলো তাঁরা হাটবাজারসহ বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করেন। এখান থেকে বাঁশের তৈরি পণ্য যায় দেশের বাইরেও। জানা গেল, ইতিমধ্যে দিনাজপুর ও নীলফামারীর তিন শতাধিক নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাঁশ দিয়ে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের পাশাপাশি সৌখিনপণ্য তৈরির কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।

ব্রীফের কার্যালয় থেকে গেলাম পালপাড়ায়। সেখানে একজন জানালেন, বাঁশ দিয়ে তৈরি সৌখিনপণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে। সেখান থেকে গেলাম নীলফামারী সদর উপজেলার বড়ুয়া গ্রামে। সেখানে দেখা যায়, এখনো কুড়িটির মতো পরিবার বাঁশশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

পুলহাটে ব্রীফের কার্যালয়ে ফিরে তাদের বাঁশের চারা উৎপাদন নার্সারি ঘুরে দেখি, সেখানে বিভিন্ন বাঁশের কলম থেকে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। চলছে গবেষণাও। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মূলত এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি-বনায়ন ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শোয়াইবুর রহমান বলেন, সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধব বাঁশ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন সৌখিনপণ্য উৎপাদন করে এ অঞ্চলের বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হতে পারে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব।

ব্রীফের নির্বাহী পরিচালক শাহ আহসান হাবীব বললেন, বাংলাদেশসহ সার্কের আরও পাঁচটি দেশ—ভারত, ভুটান, নেপাল, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে তাঁদের কার্যক্রম রয়েছে। ব্যাম্বু প্রকল্প নামের এই কর্মসূচির যাত্রা শুরু ২০১৭ সালের মার্চ মাসে সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের সহায়তায়। এর উদ্দেশ্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবহেলিত পেশার লোকেদের জীবনমানের উন্নয়ন। কর্মসূচির আওতায় উন্নত প্রশিক্ষণ, নতুন নতুন পণ্যের নকশাসহ উৎপাদিত পণ্যের দেশ-বিদেশে বিপণনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত