Ajker Patrika

স্বাধীনতা ঘোষণার পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চের যে দিন বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, তার আগের দিনই বঙ্গবন্ধুর জনসভায় যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ঢাকার দিকে আসতে থাকেন। ওই দিন, অর্থাৎ ৬ মার্চও হরতাল-অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল ছিল পুরো দেশ। পরদিন ‘জুলুমের জিঞ্জির ভাঙবোই’ প্রধান শিরোনামে আজাদ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলার সাত কোটি মানুষের বুকে আজ বিসুবিয়াসের বহ্নিজ্বালা। তেলিয়া হইতে টেকনাফ—বাংলার এই ৫৪ হাজার বর্গমাইল শ্যামল প্রান্তরে এখন আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গ। কোটি কণ্ঠ আজ একই সুরে সোচ্চার: “মোরা জুলুমের জিঞ্জির ভাঙবোই”। বাংলার বরেণ্য নেতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সমগ্র দেশ এখন যূথবদ্ধ।’

সেদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ জনসাধারণকে দুষ্কৃতকারী আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনও ডাকেন, যা ছিল ভাঁওতা মাত্র। বঙ্গবন্ধুকেও দোষারোপ করেন ইয়াহিয়া। প্রতিবাদে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বেরোয় বিক্ষোভ মিছিল। পল্টনে হয় অলি আহাদের জনসভা আর মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে গণসমাবেশ। পরদিন দৈনিক সংবাদ-এর একটি শিরোনাম ছিল ‘ন্যাপের জনসভায় অধ্যাপক মোজাফফর: মুক্তির জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত’।

ইয়াহিয়া খানের মন্তব্যে দুঃখ প্রকাশ করে ৬ মার্চ লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) নূর খান বলেন, ‘আইনত শেখ মুজিবই দেশের শাসন পরিচালনার অধিকারী।’ ক্ষমতা হস্তান্তারের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে তিনি আহ্বান জানান। ৭ মার্চের ইত্তেফাকে প্রথম পাতায় এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়।

ইয়াহিয়ার ভাষণের বিবরণ প্রকাশিত হয় পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকের মূল খবরে। একাত্তরের ৭ মার্চ ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, আওয়ামী লীগ কমিটির জরুরি বৈঠক’। ইয়াহিয়ার ভাষণের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে তার বাড়িতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও বাংলাদেশ শাখার ওয়ার্কিং কমিটির এক যুক্ত জরুরি বৈঠকে দেশের সবশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এই তথ্যও পরদিন ছেপেছে ইত্তেফাক।

ইয়াহিয়া খানের মন্তব্যে দুঃখ প্রকাশ করে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) নূর খান লাহোরে ৬ মার্চ এক সমাবেশে বলেন, ‘আইনত শেখ মুজিবই দেশের শাসন পরিচালনার অধিকারী।’ ক্ষমতা হস্তান্তারের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে তিনি আহ্বান জানান। ৭ মার্চের ইত্তেফাকে প্রথম পাতায় এসব কথা শিরোনাম করে একটি খবর প্রকাশিত হয়। 

একাত্তরের ৬ মার্চ বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট ভেঙে ৩৪১ জন কয়েদি পালিয়ে যান। পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হন। রাজশাহীতে মিছিলে গুলি চলে, অন্তত একজন নিহত হন। খুলনায় সংঘর্ষ আর গুলিতে ১৮ জন নিহত ও ৮৬ জন আহত হন। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর নেতারা এক বিবৃতিতে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাংলাদেশের সব বেতার কেন্দ্র থেকে রিলে করার দাবি জানান। পরদিন ঢাকার প্রতিটি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় উঠে আসে এসব খবর।

ইত্তেফাকের প্রথম পাতার নিচের অংশে একটি শিরোনামে বলা হয়, ‘ঢাকার রাজপথে স্বাধিকারকামী জনতার দৃপ্ত পদচারণা, কণ্ঠে কণ্ঠে ক্ষুব্ধ গর্জন, প্রাণে প্রাণে সংগ্রামী শপথ’।

পূর্ব বাংলা যে ক্রমেই স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, সেটি তত দিনে টের পেয়ে গিয়েছিলেন পশ্চিমা সাংবাদিকেরাও। একাত্তরের ৬ মার্চ লন্ডনের দ্য টাইমসে একটি নিবন্ধের শিরোনামই ছিল ‘ইস্ট পাকিস্তান লিডার কুড ডিক্লেয়ার ইউডিটি’; অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের নেতা একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারেন। করাচি থেকে নিবন্ধটি লিখেছিলেন সাংবাদিক পিটার হেজেলহাস্ট। নিবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে দুটি বিকল্প আছে—তিনি একতরফাভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেন; অথবা নিজেই কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি ডেকে তাতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত