Ajker Patrika

বরিশাল সিটি নির্বাচনে ভোটের আমেজ নেই ভোটারের মনে

রাশেদ নিজাম ও খান রফিক, বরিশাল থেকে
আপডেট : ১০ জুন ২০২৩, ০৮: ৩১
বরিশাল সিটি নির্বাচনে ভোটের আমেজ নেই ভোটারের মনে

পুরো নগর ছেয়ে গেছে পোস্টারে। কানে আসছে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে মাইকে প্রচার। প্রার্থীরা যাচ্ছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এমন আমেজ তৈরি হলেও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা যেন কম।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ জানালেও অন্য প্রার্থীদের শঙ্কা সুষ্ঠু ভোট নিয়ে। তাঁদের কারও অভিযোগ প্রশাসনের দিকে। কেউবা বলছেন, ফলাফল ঘোষণার আগপর্যন্ত নির্বাচনকে শঙ্কাহীন বলা যাবে না।

পরশু সোমবার ভোট। তাই গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই প্রার্থীরা প্রচারে নেমেছেন। ভোট চেয়েছেন মানুষের কাছে। আজ শনিবার রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে প্রচার। জয়ের বিষয়ে এখনো কেউ জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছেন না।

মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী হলেও মূল আলোচনায় তিন-চারজন। দু-এক জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হরিণ প্রতীকের আলী হোসেন হাওলাদারের পোস্টার দেখা গেছে। তবে জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের মিজানুর রহমান বাচ্চু ও হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামানের কোনো পোস্টার কিংবা প্রচার দেখা যায়নি। 
কীর্তনখোলা নদীর তীরের শহরে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২২৬টি। এবারের নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১৯ এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রার্থী রয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে বলে অভিযোগ জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেনের। দুপুরে গির্জামহল্লা এলাকায় গণসংযোগের সময় তিনি এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একজন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে, যা বরিশালবাসীর চোখে ধরা পড়ছে।

চকবাজার এলাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম নির্বাচনী পরিবেশ এখনো ভালো বলে উল্লেখ করেন। অবশ্য হাতপাখা প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, ‘তবে জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। জানি না ভিন্ন পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় কি না। তাই ফলের আগে পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত নই। ফল যখন হবে, দেখব কারচুপি হয়নি; তখন বলতে পারব সুষ্ঠু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ভোটের ফল পাল্টানোর চেষ্টা করলে আন্দোলন হবে।

অনেকটা নীরবে-নিভৃতে প্রচার চালাচ্ছেন বিএনপি পরিবারের সন্তান টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. কামরুল আহসান (রূপন)। দল থেকে বহিষ্কৃত এই প্রার্থী দুপুরে আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে অভিযোগ করেন, নগর বিএনপির নেতারা অর্থের বিনিময়ে নৌকা ও লাঙ্গলের প্রচারে ব্যস্ত। ইতিমধ্যে এসবের প্রমাণ তিনি কেন্দ্রেও পাঠিয়েছেন। বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি দল এবং তাদের সমমনা প্রার্থী ছাড়া আর কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, সেটা তারা চায় না। তাই তারা বিরোধী প্রার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করছে।

নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেছেন, সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে সমর্থন করছেন। এখানে দলীয় কোনো ব্যাপার নেই। উন্নয়নের স্বার্থে ব্যক্তিগতভাবে জনগণ তাঁকে ভোট দেবেন। প্রচারে এগিয়ে থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জয়ী হলে সব সেক্টরে উন্নয়ন করবেন। বস্তিবাসী যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, এর পরিবর্তন আনা হবে। দুপুরে তিনি নগরের চৌমাথায় মারকাজ মসজিদে জুমার নামাজে মুসল্লিদের কাছে দোয়া চান।

বিভিন্ন প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, নৌকার প্রার্থী দুটি অভিযোগ দিয়েছিলেন হাতপাখার প্রার্থীর বিরুদ্ধে। এগুলো হলো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং টাকা ছড়ানো। এর কোনো প্রমাণ মেলেনি। আবার লাঙ্গলের প্রার্থীর অভিযোগ, একজন প্রতিমন্ত্রী নগরের আশপাশে প্রচার করছেন। এরও সত্যতা পাওয়া যায়নি। এর বাইরে কেউ লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি।

পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের সংগঠক কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বরিশালে কেউ জোর দিয়ে জয়ের ব্যাপারে বলবে, এ অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। এখানে নৌকা একটু এগিয়ে আছে। তবে নৌকার মধ্যে একটা আত্মঘাতী প্রচার বরিশালে যুগে যুগে ছিল। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে এখানে তেমন কাজ হয়নি। নানা সমস্যা রয়েছে। এ কারণে মানুষ খুশি নন। তাই প্রার্থীরাও জয়ের ব্যাপারে নিজের ওপর আস্থা পাচ্ছেন না। 

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সাখাওয়াত ফাহাদ ও নাজমুল হাসান সাগর)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত