Ajker Patrika

সুনীল অর্থনীতির হাতছানি

অরুণ কর্মকার
সুনীল অর্থনীতির হাতছানি

সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) পৃথিবীব্যাপী একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। বর্তমান পৃথিবীর ৮৮ ট্রিলিয়ন ডলারের যে অর্থনীতি, এর মধ্যে ২৪ ট্রিলিয়ন হচ্ছে সমুদ্র অঞ্চলভিত্তিক এই সুনীল অর্থনীতির অবদান। যদিও আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে এর অবদান উল্লেখ করার মতো নয়। আমরা এ ক্ষেত্রে এখনো তেমন অগ্রসর হতে পারিনি।

সুনীল অর্থনীতির হাতছানিতে আমরা যখন নিজেদের সমুদ্র অঞ্চলের দিকে তাকালাম, তখন দেখা গেল, দুই নিকট প্রতিবেশী আমাদের বেশ খানিকটা কোণঠাসা করে রেখেছে। ফলে আমাদের সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র যথেষ্ট সংকুচিত এবং সেখানে আমাদের কার্যক্ষেত্রের সম্প্রসারণ করা বেশ জটিল। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আমাদের সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেছে। ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালের ৭ জুলাই (এখন থেকে ঠিক ১০ বছর আগে) ভারতের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের মীমাংসা হয়েছিল।

ফলে তখন আমাদের সামনে খুলে গেল এক নতুন উন্মুক্ত দিগন্ত। ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলে আমাদের সার্বভৌমত্বের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জিত হলো। তটরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত কন্টিনেন্টাল শেলফ হিসেবে আমাদের বিচরণক্ষেত্র সম্প্রসারিত হলো। কিন্তু এক দশকে আমরা তেমন আর কিছুই করতে পারিনি। যেটুকু পারা যেত, তা-ও আমরা করিনি।

অনেকের ধারণা, সুনীল অর্থনীতি মানে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণ। কিন্তু আসলে তা নয়। ২০১৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সুনীল অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ২৫টি ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে। তেল-গ্যাস আহরণ অবশ্যই এর অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র।

এ ছাড়া রয়েছে মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণ, সমুদ্রভিত্তিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পর্যটন, সমুদ্রের সংরক্ষিত এলাকা (মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া) রক্ষণাবেক্ষণ, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণ, সমুদ্রের ইকোসিস্টেম সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকার ইকোসিস্টেমের টেকসই ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র সম্পদের ওপর উপকূলীয় জনগণের নির্ভরতা প্রভৃতি। এর কোনো একটি ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত আমরা দৃশ্যমান কিছু করে উঠতে পারিনি। অথচ বঙ্গোপসাগরকে বলা হয় প্রাকৃতিক সম্পদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও সমৃদ্ধ ভান্ডার।

যদি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কথা ধরি, ১০ বছরে আমাদের সমুদ্রসীমার সন্নিহিত এলাকায় মিয়ানমার ও ভারত উভয় দেশই বড় আকারের গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। বিশেষজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের অভিমত, এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোর ভূগর্ভস্থ স্ট্রাকচার বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সম্প্রসারিত। কাজেই ওই সব অঞ্চলে অনুসন্ধান করলে বাংলাদেশও বিপুল পরিমাণ গ্যাসের আধার পেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ সমুদ্র অঞ্চলজুড়ে আরও অনেক গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে ২৬টি ব্লক চিহ্নিত করা ছাড়া তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বলতে গেলে শুরুই করতে পারিনি। অবশ্য পেট্রোবাংলা এ ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানি এবং তাদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তিপত্র (পিএসসি) প্রণয়ন করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই দরপত্রে অংশগ্রহণের সময় রয়েছে।

এরপর তা যাচাই-বাছাই শেষে যদি এ বছরের মধ্যে কোনো এক বা একাধিক কোম্পানির সঙ্গে পিএসসি সই করা সম্ভবও হয়, তাহলেও তার ফল পাওয়া শুরু হতে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে; অর্থাৎ ২০৩০ সালের আগে এ খাতে কোনো কিছু অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সমুদ্রের বায়ু ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ বায়ুবিদ্যুৎ এবং বিশাল সমুদ্রতট ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন অল্প সময়ের মধ্যেই করা সম্ভব।

এরপর বলা যায়, মৎস্য সম্পদের কথা। আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে আমরা খুবই সীমিত পরিমাণে মৎস্য আহরণ করতে পারছি। কারণ, সক্ষমতার অভাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরে মাছ আছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির। এ ছাড়া রয়েছে শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, শেলফিশ, হাঙর, অক্টোপাস প্রভৃতি। বিস্তীর্ণ সমুদ্র অঞ্চলজুড়ে এই মৎস্য সম্পদের বিচরণ। এখান থেকে বছরে ৮ মিলিয়ন বা ৮০ লাখ টন মাছ আহরণ করা সম্ভব। কিন্তু আমরা আহরণ করছি ৭ লাখ টন। কারণ গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় জাহাজ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম আমাদের নেই। থাকলে এই মৎস্য সম্পদই জাতীয় অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখতে পারত।

বালুকাবেলাসহ আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে রয়েছে নানা সম্পদ এবং প্রতিনিয়ত পলির সঙ্গে এসে জমা হচ্ছে ১৩ ধরনের মূল্যবান ভারী খনিজ (হেভি মিনারেল)। এর মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, ইলমেনাইট, গার্নেট, জিরকন, রেটাইল, ম্যাগনেটাইল প্রভৃতি। এসব খনিজ স্বর্ণের চেয়েও দামি। অথচ আমরা এগুলো আহরণ করতে পারছি না। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এসব খনিজ আহরণের বিষয়ে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠানও আগ্রহী। আমরা সেই সুযোগও কাজে লাগাচ্ছি না।

আমাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়। সমুদ্রপথ ব্যবহার করে নিজেদের ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের বড় ধরনের সম্প্রসারণ ঘটানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া চোখের সামনে উজ্জ্বল উদাহরণ। অবশ্য আমাদের বন্দরের সীমাবদ্ধতা এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। এই বাধা অতিক্রম করার জন্য কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে কাজেও অগ্রগতি নগণ্য। বঙ্গোপসাগরে আমাদের সমুদ্র অঞ্চলে রয়েছে ছোট-বড় ৭৫টি দ্বীপ। এই দ্বীপগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটন। খুব দ্রুতই যে এটা করা সম্ভব তা নয়। তবে উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যার অভাব রয়েছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানিও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠন করা হয়েছিল ‘ব্লু ইকোনমি সেল’। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি একেবারেই একটি নামমাত্র সংস্থা। এর কোনো কাজ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়; বরং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট’ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ‘ব্লু ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক প্ল্যান’। তাতে মোট ৫৬টি অ্যাকশন পয়েন্ট সন্নিবেশিত হয়েছে। আমরা আশা করব, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সুনীল অর্থনীতির কর্মকাণ্ড বিকশিত হবে।

আর শেষ কথা হলো, ২০৪১ সালে যদি বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হতে হয়, তাহলে সুনীল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন করা এবং লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে সরকারের একার পক্ষে বা শুধু সরকারের উদ্যোগে এটা সম্ভব হবে না। কারণ এ কাজে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার। তাই যুক্ত করতে হবে বেসরকারি খাতকে। বেসরকারি খাতের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও আইনি কাঠামো তৈরি করা দরকার হবে।

বিনিয়োগের ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। অবশ্য ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোস্পারিটি প্ল্যান ২০২২-৪১’-এ ‘ব্লু বন্ড’ ইস্যু করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ‘গ্রিন বন্ড পলিসি’ নামে একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। কিন্তু এসবের ভিত্তিতে কী পরিমাণ অর্থ সুনীল অর্থনীতির বিকাশে বরাদ্দ বা ব্যয় করা হচ্ছে, তার একটি ঠিকঠাক হিসাব প্রকাশ করা জরুরি।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

যমুনা রেলসেতুর পিলারে ফাটল, কর্তৃপক্ষ বলছে গঠনগত কোনো সমস্যা নয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

যমুনা রেলসেতুর পিলারে ফাটল, কর্তৃপক্ষ বলছে গঠনগত কোনো সমস্যা নয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

যমুনা রেলসেতুর পিলারে ফাটল, কর্তৃপক্ষ বলছে গঠনগত কোনো সমস্যা নয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

যমুনা রেলসেতুর পিলারে ফাটল, কর্তৃপক্ষ বলছে গঠনগত কোনো সমস্যা নয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

যমুনা রেলসেতুর পিলারে ফাটল, কর্তৃপক্ষ বলছে গঠনগত কোনো সমস্যা নয়

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত