অরুণ কর্মকার

পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে পানি নিয়ে। কথাটা প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের কোনো একজন প্রেসিডেন্ট। তারপর পৃথিবীময় অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজন বিভিন্ন সময় কথাটার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে পানির ক্রমবর্ধমান সংকট সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের (২২ মার্চ) অনুষ্ঠানাদিতে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত সর্বত্র ওই সংকটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ব পানি সম্মেলনে জাতিসংঘের উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৫০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। ওই সম্মেলনেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পৃথিবীর সেই সব বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিরসনের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছে।
কিন্তু যে গ্রহটির মোট আয়তনের চার ভাগের তিন ভাগই পানি, সেখানে পানির সংকট হবে কেন! প্রথম কারণ হলো, পৃথিবীতে অঢেল পানি থাকলেও ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ খুবই কম। সেই যে কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ তাঁর ‘দ্য রাইম অব দ্য এন্সিয়েন্ট মেরিনার’-এ বলেছেন, ‘...ওয়াটার, ওয়াটার এভরিহোয়্যার, নর এনি ড্রপ টু ড্রিংক’, অনেকটা সে রকম। অথচ আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষ এখনো কোনো কিছুর নগণ্য দাম বোঝাতে ‘পানির দাম’ কথাটা ব্যবহার করে। যদিও সবাই এ কথাও জানে যে পানির অপর নাম জীবন। আর জীবন হচ্ছে অমূল্য। পানি ছাড়া কোনো জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
বিজ্ঞানীরা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগজুড়ে থাকা পানির মোট পরিমাণ ১৩৫ কোটি (১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন) ঘন কিলোমিটার। এটা যে কী বিপুল পরিমাণ পানি, তা আমাদের অনেকের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। তবে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু তথ্য থেকে আমরা অন্য রকম ধারণা পেতে পারি। যেমন ওই ১৩৫ কোটি ঘন কিলোমিটার পানির শতকরা ৯৭ ভাগ হচ্ছে লবণাক্ত পানি। পান করা, কৃষিকাজ কিংবা শিল্পে ব্যবহারের জন্য এই পানি উপযুক্ত নয়।
অবশিষ্ট ৩ শতাংশ হচ্ছে, ব্যবহার উপযোগী মিঠাপানি (ফ্রেশ ওয়াটার)। তবে এই ৩ শতাংশ পানিই পৃথিবীর বর্তমান চাহিদা মেটানোর জন্য যা প্রয়োজন, তার চেয়েও অনেক বেশি। কিন্তু কথা এখানেই শেষ নয়। ওই ৩ শতাংশের বেশির ভাগ পানিই থাকে পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চল আচ্ছাদিত বরফ ও হিমবাহ আকারে এবং ভূগর্ভের অনেক গভীর জলাধারে (ডিপ ওয়াটার অ্যাকুইফার)। মেঘ হয়েও ভেসে বেড়ায় কিছু পানি। এরপর পৃথিবীর মোট পানির মাত্র দশমিক ৩ ভাগ মিঠাপানি থাকে নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ব্যবহারের জন্য। নদী, খাল-বিল, হ্রদ ও অগভীর ভূগর্ভে থাকা এই পানির পরিমাণ এক লাখ ঘন কিলোমিটার।
বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীতে মানবজাতির সব কাজে পানি ব্যবহার হয় ৫ হাজার ঘন কিলোমিটারের কম। এই হিসাবে মিঠাপানির প্রাপ্যতা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু সমস্যা হলো পৃথিবীর সব মহাদেশে ও সব অঞ্চলে এই মিঠাপানি সমপরিমাণে পাওয়া যায় না। বছরের সব মৌসুমেও সর্বত্র সমপরিমাণ মিঠাপানি মেলে না। বর্ষায় প্রচুর অব্যবহৃত পানি সমুদ্রে চলে যায়। ব্যবহারের সুযোগই থাকে না। আবার শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির প্রবাহ থাকে না। পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশ ও অঞ্চলের মতো আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায়ও এই সমস্যা প্রকট। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এই সমস্যাকে বিশ্বব্যাপী প্রকটতর করে তুলেছে।
পৃথিবীর প্রধান প্রধান নদীধারা একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত; অর্থাৎ আন্তর্জাতিক নদী। এসব নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক আইনকানুন রয়েছে। কিন্তু পানির উৎস ও প্রাপ্যতায় যে ব্যাপক মৌসুমি ব্যবধান থাকে, সে কারণে পানিবণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনকানুন ছাপিয়ে প্রধান নির্ধারক হয়ে ওঠে রাজনীতি। যাকে আসলে পানির রাজনীতি বলা যায়। এই রাজনীতিতে উজানের দেশগুলোই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। তারা নিজের দেশের কৃষি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটাতে একতরফাভাবে অনেক বেশি পানি ব্যবহারের সুযোগ নেয়। হিমালয় থেকে উৎসারিত এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা আমাদের দেশের প্রধান নদীগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা এই প্রবণতা দেখি। আর তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে রাজনীতির কোনো কিছুই তো এখন আর অন্তরালে নেই।
আমাদের অভিন্ন নদীগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ কম থাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ত পানি দেশের অভ্যন্তরে অনেক দূর পর্যন্ত ঢুকে পড়ছে। একসময়ের শস্যভান্ডার বরিশাল অঞ্চল এখন খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি এলাকা। কারণ, ছড়িয়ে পড়েছে লবণাক্ততা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলেও লবণাক্ততার আধিক্য পরিবেশ-প্রতিবেশের নিদারুণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানকার মানুষ প্রায় সারা বছর সুপেয় পানির কষ্টে কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় মরুকরণের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শেরপুরের নিজের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরে একজন সাংবাদিক বন্ধু জানান, তাঁদের এলাকায় কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমের শুরুতেই কোনো কোনো খাল-নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।
তবে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও হিস্যা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা, এটাই আমাদের দেশে মিঠা বা সুপেয় পানির প্রাপ্যতা কিংবা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার একমাত্র সমস্যা নয়। আমরা আমাদের নদ-নদী, খাল-বিল, হ্রদ-জলাশয়, পুকুর-ডোবাগুলো নিজেরাই বিপন্ন করে ফেলছি। দখলে-দূষণে আমাদের নিজস্ব পানির এই উৎসগুলোর এখন ত্রাহি অবস্থা। এগুলো রক্ষার জন্য যথেষ্ট আইনকানুন আমাদের দেশে আছে। এসব আইনকানুন প্রয়োগের কর্তৃপক্ষও রয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। সবলের প্রতাপ ও প্রভাবে এসব আইনকানুন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। ঠিক যেমন অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের আন্তর্জাতিক আইনকানুন উজানের বড় এবং শক্তিধর দেশগুলোর কাছে কার্যকরভাবে ঘেঁষতে পারছে না।
আমরা শহর-নগরের খাল-নদী, পুকুর-ডোবা সব দখল ও ভরাট করে ফেলছি আইনের তোয়াক্কা না করে। আমাদের শহর-নগরগুলোতে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা অপ্রতুল। কোথাও কোথাও তা একেবারেই নেই। আমরা ওই সব জলাশয়ে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন করে পানিদূষণ করছি। আর শহর-নগরে ব্যবহারের জন্য গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে যাচ্ছি। ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
আমরা বাধাহীনভাবে শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলি। শহর-নগরের পয়োবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্যে আমরা নদীর পানি এতই দূষিত করে ফেলি যে তা পরিশোধন করেও ব্যবহারের উপযোগী কর যায় না। আমরা এই উৎসগুলোকে দূষণমুক্ত রাখতে পারলে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। প্রতিকারহীনভাবে দেশের সর্বত্র চলছে নদী-জলাশয় দখল। আসলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বলতে আমাদের কিছুই নেই। পয়োনিষ্কাশনেরও একই অবস্থা।
এ বছর বিশ্ব পানি দিবস পালনের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে ত্বরান্বিত পরিবর্তন’। অর্থাৎ এই সংকট সমাধানের পদক্ষেপগুলো দ্রুত কার্যকর করা হবে। কিন্তু বাস্তবে বহুকাল থেকেই আমরা দেখে আসছি, এসব সংকট সমাধানের পরিবর্তে বিপরীত ধারায় চলছে। দ্রুততার সঙ্গে উল্টোমুখী পরিবর্তন ঘটে চলেছে। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে সরকারিভাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত তথ্য হচ্ছে, দেশের ৪১ শতাংশ (প্রায় ৮ কোটি) মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। আর স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ দেশে ৬১ শতাংশ (প্রায় ১২ কোটি)। অথচ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছাতে হবে।
আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মধ্যে একটি হচ্ছে নদী রক্ষা কমিশন (নরক)। এই কমিশনকে যথেষ্ট আইনি ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে; বিশেষ করে নদী দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে। কিন্তু দেশের কোথাও কোনো নদী দখলের প্রতিকার তারা করতে পেরেছেন এমন নজির নেই।
আসলে পানি নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার যে আশঙ্কার কথা শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথিবীর দেশে দেশে সেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। শুরুটা হয়েছে দেশগুলোর অভ্যন্তরে, তৃণমূল পর্যায় থেকে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির ভূমিকা এ ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এই যুদ্ধই পর্যায়ক্রমে দেশগুলোর জাতীয় পর্যায়ে এবং সংকট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার ধারণা করা মোটেই অযৌক্তিক নয়।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে পানি নিয়ে। কথাটা প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের কোনো একজন প্রেসিডেন্ট। তারপর পৃথিবীময় অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজন বিভিন্ন সময় কথাটার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে পানির ক্রমবর্ধমান সংকট সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের (২২ মার্চ) অনুষ্ঠানাদিতে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত সর্বত্র ওই সংকটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ব পানি সম্মেলনে জাতিসংঘের উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৫০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। ওই সম্মেলনেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পৃথিবীর সেই সব বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিরসনের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছে।
কিন্তু যে গ্রহটির মোট আয়তনের চার ভাগের তিন ভাগই পানি, সেখানে পানির সংকট হবে কেন! প্রথম কারণ হলো, পৃথিবীতে অঢেল পানি থাকলেও ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ খুবই কম। সেই যে কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ তাঁর ‘দ্য রাইম অব দ্য এন্সিয়েন্ট মেরিনার’-এ বলেছেন, ‘...ওয়াটার, ওয়াটার এভরিহোয়্যার, নর এনি ড্রপ টু ড্রিংক’, অনেকটা সে রকম। অথচ আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষ এখনো কোনো কিছুর নগণ্য দাম বোঝাতে ‘পানির দাম’ কথাটা ব্যবহার করে। যদিও সবাই এ কথাও জানে যে পানির অপর নাম জীবন। আর জীবন হচ্ছে অমূল্য। পানি ছাড়া কোনো জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
বিজ্ঞানীরা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগজুড়ে থাকা পানির মোট পরিমাণ ১৩৫ কোটি (১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন) ঘন কিলোমিটার। এটা যে কী বিপুল পরিমাণ পানি, তা আমাদের অনেকের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। তবে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু তথ্য থেকে আমরা অন্য রকম ধারণা পেতে পারি। যেমন ওই ১৩৫ কোটি ঘন কিলোমিটার পানির শতকরা ৯৭ ভাগ হচ্ছে লবণাক্ত পানি। পান করা, কৃষিকাজ কিংবা শিল্পে ব্যবহারের জন্য এই পানি উপযুক্ত নয়।
অবশিষ্ট ৩ শতাংশ হচ্ছে, ব্যবহার উপযোগী মিঠাপানি (ফ্রেশ ওয়াটার)। তবে এই ৩ শতাংশ পানিই পৃথিবীর বর্তমান চাহিদা মেটানোর জন্য যা প্রয়োজন, তার চেয়েও অনেক বেশি। কিন্তু কথা এখানেই শেষ নয়। ওই ৩ শতাংশের বেশির ভাগ পানিই থাকে পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চল আচ্ছাদিত বরফ ও হিমবাহ আকারে এবং ভূগর্ভের অনেক গভীর জলাধারে (ডিপ ওয়াটার অ্যাকুইফার)। মেঘ হয়েও ভেসে বেড়ায় কিছু পানি। এরপর পৃথিবীর মোট পানির মাত্র দশমিক ৩ ভাগ মিঠাপানি থাকে নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ব্যবহারের জন্য। নদী, খাল-বিল, হ্রদ ও অগভীর ভূগর্ভে থাকা এই পানির পরিমাণ এক লাখ ঘন কিলোমিটার।
বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীতে মানবজাতির সব কাজে পানি ব্যবহার হয় ৫ হাজার ঘন কিলোমিটারের কম। এই হিসাবে মিঠাপানির প্রাপ্যতা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু সমস্যা হলো পৃথিবীর সব মহাদেশে ও সব অঞ্চলে এই মিঠাপানি সমপরিমাণে পাওয়া যায় না। বছরের সব মৌসুমেও সর্বত্র সমপরিমাণ মিঠাপানি মেলে না। বর্ষায় প্রচুর অব্যবহৃত পানি সমুদ্রে চলে যায়। ব্যবহারের সুযোগই থাকে না। আবার শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির প্রবাহ থাকে না। পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশ ও অঞ্চলের মতো আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায়ও এই সমস্যা প্রকট। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এই সমস্যাকে বিশ্বব্যাপী প্রকটতর করে তুলেছে।
পৃথিবীর প্রধান প্রধান নদীধারা একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত; অর্থাৎ আন্তর্জাতিক নদী। এসব নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক আইনকানুন রয়েছে। কিন্তু পানির উৎস ও প্রাপ্যতায় যে ব্যাপক মৌসুমি ব্যবধান থাকে, সে কারণে পানিবণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনকানুন ছাপিয়ে প্রধান নির্ধারক হয়ে ওঠে রাজনীতি। যাকে আসলে পানির রাজনীতি বলা যায়। এই রাজনীতিতে উজানের দেশগুলোই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। তারা নিজের দেশের কৃষি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটাতে একতরফাভাবে অনেক বেশি পানি ব্যবহারের সুযোগ নেয়। হিমালয় থেকে উৎসারিত এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা আমাদের দেশের প্রধান নদীগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা এই প্রবণতা দেখি। আর তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে রাজনীতির কোনো কিছুই তো এখন আর অন্তরালে নেই।
আমাদের অভিন্ন নদীগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ কম থাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ত পানি দেশের অভ্যন্তরে অনেক দূর পর্যন্ত ঢুকে পড়ছে। একসময়ের শস্যভান্ডার বরিশাল অঞ্চল এখন খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি এলাকা। কারণ, ছড়িয়ে পড়েছে লবণাক্ততা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলেও লবণাক্ততার আধিক্য পরিবেশ-প্রতিবেশের নিদারুণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানকার মানুষ প্রায় সারা বছর সুপেয় পানির কষ্টে কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় মরুকরণের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শেরপুরের নিজের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরে একজন সাংবাদিক বন্ধু জানান, তাঁদের এলাকায় কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমের শুরুতেই কোনো কোনো খাল-নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।
তবে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও হিস্যা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা, এটাই আমাদের দেশে মিঠা বা সুপেয় পানির প্রাপ্যতা কিংবা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার একমাত্র সমস্যা নয়। আমরা আমাদের নদ-নদী, খাল-বিল, হ্রদ-জলাশয়, পুকুর-ডোবাগুলো নিজেরাই বিপন্ন করে ফেলছি। দখলে-দূষণে আমাদের নিজস্ব পানির এই উৎসগুলোর এখন ত্রাহি অবস্থা। এগুলো রক্ষার জন্য যথেষ্ট আইনকানুন আমাদের দেশে আছে। এসব আইনকানুন প্রয়োগের কর্তৃপক্ষও রয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। সবলের প্রতাপ ও প্রভাবে এসব আইনকানুন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। ঠিক যেমন অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের আন্তর্জাতিক আইনকানুন উজানের বড় এবং শক্তিধর দেশগুলোর কাছে কার্যকরভাবে ঘেঁষতে পারছে না।
আমরা শহর-নগরের খাল-নদী, পুকুর-ডোবা সব দখল ও ভরাট করে ফেলছি আইনের তোয়াক্কা না করে। আমাদের শহর-নগরগুলোতে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা অপ্রতুল। কোথাও কোথাও তা একেবারেই নেই। আমরা ওই সব জলাশয়ে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন করে পানিদূষণ করছি। আর শহর-নগরে ব্যবহারের জন্য গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে যাচ্ছি। ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
আমরা বাধাহীনভাবে শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলি। শহর-নগরের পয়োবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্যে আমরা নদীর পানি এতই দূষিত করে ফেলি যে তা পরিশোধন করেও ব্যবহারের উপযোগী কর যায় না। আমরা এই উৎসগুলোকে দূষণমুক্ত রাখতে পারলে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। প্রতিকারহীনভাবে দেশের সর্বত্র চলছে নদী-জলাশয় দখল। আসলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বলতে আমাদের কিছুই নেই। পয়োনিষ্কাশনেরও একই অবস্থা।
এ বছর বিশ্ব পানি দিবস পালনের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে ত্বরান্বিত পরিবর্তন’। অর্থাৎ এই সংকট সমাধানের পদক্ষেপগুলো দ্রুত কার্যকর করা হবে। কিন্তু বাস্তবে বহুকাল থেকেই আমরা দেখে আসছি, এসব সংকট সমাধানের পরিবর্তে বিপরীত ধারায় চলছে। দ্রুততার সঙ্গে উল্টোমুখী পরিবর্তন ঘটে চলেছে। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে সরকারিভাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত তথ্য হচ্ছে, দেশের ৪১ শতাংশ (প্রায় ৮ কোটি) মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। আর স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ দেশে ৬১ শতাংশ (প্রায় ১২ কোটি)। অথচ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছাতে হবে।
আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মধ্যে একটি হচ্ছে নদী রক্ষা কমিশন (নরক)। এই কমিশনকে যথেষ্ট আইনি ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে; বিশেষ করে নদী দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে। কিন্তু দেশের কোথাও কোনো নদী দখলের প্রতিকার তারা করতে পেরেছেন এমন নজির নেই।
আসলে পানি নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার যে আশঙ্কার কথা শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথিবীর দেশে দেশে সেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। শুরুটা হয়েছে দেশগুলোর অভ্যন্তরে, তৃণমূল পর্যায় থেকে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির ভূমিকা এ ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এই যুদ্ধই পর্যায়ক্রমে দেশগুলোর জাতীয় পর্যায়ে এবং সংকট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার ধারণা করা মোটেই অযৌক্তিক নয়।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
অরুণ কর্মকার

পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে পানি নিয়ে। কথাটা প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের কোনো একজন প্রেসিডেন্ট। তারপর পৃথিবীময় অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজন বিভিন্ন সময় কথাটার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে পানির ক্রমবর্ধমান সংকট সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের (২২ মার্চ) অনুষ্ঠানাদিতে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত সর্বত্র ওই সংকটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ব পানি সম্মেলনে জাতিসংঘের উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৫০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। ওই সম্মেলনেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পৃথিবীর সেই সব বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিরসনের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছে।
কিন্তু যে গ্রহটির মোট আয়তনের চার ভাগের তিন ভাগই পানি, সেখানে পানির সংকট হবে কেন! প্রথম কারণ হলো, পৃথিবীতে অঢেল পানি থাকলেও ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ খুবই কম। সেই যে কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ তাঁর ‘দ্য রাইম অব দ্য এন্সিয়েন্ট মেরিনার’-এ বলেছেন, ‘...ওয়াটার, ওয়াটার এভরিহোয়্যার, নর এনি ড্রপ টু ড্রিংক’, অনেকটা সে রকম। অথচ আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষ এখনো কোনো কিছুর নগণ্য দাম বোঝাতে ‘পানির দাম’ কথাটা ব্যবহার করে। যদিও সবাই এ কথাও জানে যে পানির অপর নাম জীবন। আর জীবন হচ্ছে অমূল্য। পানি ছাড়া কোনো জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
বিজ্ঞানীরা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগজুড়ে থাকা পানির মোট পরিমাণ ১৩৫ কোটি (১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন) ঘন কিলোমিটার। এটা যে কী বিপুল পরিমাণ পানি, তা আমাদের অনেকের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। তবে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু তথ্য থেকে আমরা অন্য রকম ধারণা পেতে পারি। যেমন ওই ১৩৫ কোটি ঘন কিলোমিটার পানির শতকরা ৯৭ ভাগ হচ্ছে লবণাক্ত পানি। পান করা, কৃষিকাজ কিংবা শিল্পে ব্যবহারের জন্য এই পানি উপযুক্ত নয়।
অবশিষ্ট ৩ শতাংশ হচ্ছে, ব্যবহার উপযোগী মিঠাপানি (ফ্রেশ ওয়াটার)। তবে এই ৩ শতাংশ পানিই পৃথিবীর বর্তমান চাহিদা মেটানোর জন্য যা প্রয়োজন, তার চেয়েও অনেক বেশি। কিন্তু কথা এখানেই শেষ নয়। ওই ৩ শতাংশের বেশির ভাগ পানিই থাকে পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চল আচ্ছাদিত বরফ ও হিমবাহ আকারে এবং ভূগর্ভের অনেক গভীর জলাধারে (ডিপ ওয়াটার অ্যাকুইফার)। মেঘ হয়েও ভেসে বেড়ায় কিছু পানি। এরপর পৃথিবীর মোট পানির মাত্র দশমিক ৩ ভাগ মিঠাপানি থাকে নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ব্যবহারের জন্য। নদী, খাল-বিল, হ্রদ ও অগভীর ভূগর্ভে থাকা এই পানির পরিমাণ এক লাখ ঘন কিলোমিটার।
বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীতে মানবজাতির সব কাজে পানি ব্যবহার হয় ৫ হাজার ঘন কিলোমিটারের কম। এই হিসাবে মিঠাপানির প্রাপ্যতা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু সমস্যা হলো পৃথিবীর সব মহাদেশে ও সব অঞ্চলে এই মিঠাপানি সমপরিমাণে পাওয়া যায় না। বছরের সব মৌসুমেও সর্বত্র সমপরিমাণ মিঠাপানি মেলে না। বর্ষায় প্রচুর অব্যবহৃত পানি সমুদ্রে চলে যায়। ব্যবহারের সুযোগই থাকে না। আবার শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির প্রবাহ থাকে না। পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশ ও অঞ্চলের মতো আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায়ও এই সমস্যা প্রকট। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এই সমস্যাকে বিশ্বব্যাপী প্রকটতর করে তুলেছে।
পৃথিবীর প্রধান প্রধান নদীধারা একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত; অর্থাৎ আন্তর্জাতিক নদী। এসব নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক আইনকানুন রয়েছে। কিন্তু পানির উৎস ও প্রাপ্যতায় যে ব্যাপক মৌসুমি ব্যবধান থাকে, সে কারণে পানিবণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনকানুন ছাপিয়ে প্রধান নির্ধারক হয়ে ওঠে রাজনীতি। যাকে আসলে পানির রাজনীতি বলা যায়। এই রাজনীতিতে উজানের দেশগুলোই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। তারা নিজের দেশের কৃষি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটাতে একতরফাভাবে অনেক বেশি পানি ব্যবহারের সুযোগ নেয়। হিমালয় থেকে উৎসারিত এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা আমাদের দেশের প্রধান নদীগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা এই প্রবণতা দেখি। আর তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে রাজনীতির কোনো কিছুই তো এখন আর অন্তরালে নেই।
আমাদের অভিন্ন নদীগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ কম থাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ত পানি দেশের অভ্যন্তরে অনেক দূর পর্যন্ত ঢুকে পড়ছে। একসময়ের শস্যভান্ডার বরিশাল অঞ্চল এখন খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি এলাকা। কারণ, ছড়িয়ে পড়েছে লবণাক্ততা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলেও লবণাক্ততার আধিক্য পরিবেশ-প্রতিবেশের নিদারুণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানকার মানুষ প্রায় সারা বছর সুপেয় পানির কষ্টে কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় মরুকরণের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শেরপুরের নিজের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরে একজন সাংবাদিক বন্ধু জানান, তাঁদের এলাকায় কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমের শুরুতেই কোনো কোনো খাল-নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।
তবে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও হিস্যা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা, এটাই আমাদের দেশে মিঠা বা সুপেয় পানির প্রাপ্যতা কিংবা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার একমাত্র সমস্যা নয়। আমরা আমাদের নদ-নদী, খাল-বিল, হ্রদ-জলাশয়, পুকুর-ডোবাগুলো নিজেরাই বিপন্ন করে ফেলছি। দখলে-দূষণে আমাদের নিজস্ব পানির এই উৎসগুলোর এখন ত্রাহি অবস্থা। এগুলো রক্ষার জন্য যথেষ্ট আইনকানুন আমাদের দেশে আছে। এসব আইনকানুন প্রয়োগের কর্তৃপক্ষও রয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। সবলের প্রতাপ ও প্রভাবে এসব আইনকানুন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। ঠিক যেমন অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের আন্তর্জাতিক আইনকানুন উজানের বড় এবং শক্তিধর দেশগুলোর কাছে কার্যকরভাবে ঘেঁষতে পারছে না।
আমরা শহর-নগরের খাল-নদী, পুকুর-ডোবা সব দখল ও ভরাট করে ফেলছি আইনের তোয়াক্কা না করে। আমাদের শহর-নগরগুলোতে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা অপ্রতুল। কোথাও কোথাও তা একেবারেই নেই। আমরা ওই সব জলাশয়ে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন করে পানিদূষণ করছি। আর শহর-নগরে ব্যবহারের জন্য গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে যাচ্ছি। ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
আমরা বাধাহীনভাবে শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলি। শহর-নগরের পয়োবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্যে আমরা নদীর পানি এতই দূষিত করে ফেলি যে তা পরিশোধন করেও ব্যবহারের উপযোগী কর যায় না। আমরা এই উৎসগুলোকে দূষণমুক্ত রাখতে পারলে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। প্রতিকারহীনভাবে দেশের সর্বত্র চলছে নদী-জলাশয় দখল। আসলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বলতে আমাদের কিছুই নেই। পয়োনিষ্কাশনেরও একই অবস্থা।
এ বছর বিশ্ব পানি দিবস পালনের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে ত্বরান্বিত পরিবর্তন’। অর্থাৎ এই সংকট সমাধানের পদক্ষেপগুলো দ্রুত কার্যকর করা হবে। কিন্তু বাস্তবে বহুকাল থেকেই আমরা দেখে আসছি, এসব সংকট সমাধানের পরিবর্তে বিপরীত ধারায় চলছে। দ্রুততার সঙ্গে উল্টোমুখী পরিবর্তন ঘটে চলেছে। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে সরকারিভাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত তথ্য হচ্ছে, দেশের ৪১ শতাংশ (প্রায় ৮ কোটি) মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। আর স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ দেশে ৬১ শতাংশ (প্রায় ১২ কোটি)। অথচ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছাতে হবে।
আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মধ্যে একটি হচ্ছে নদী রক্ষা কমিশন (নরক)। এই কমিশনকে যথেষ্ট আইনি ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে; বিশেষ করে নদী দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে। কিন্তু দেশের কোথাও কোনো নদী দখলের প্রতিকার তারা করতে পেরেছেন এমন নজির নেই।
আসলে পানি নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার যে আশঙ্কার কথা শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথিবীর দেশে দেশে সেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। শুরুটা হয়েছে দেশগুলোর অভ্যন্তরে, তৃণমূল পর্যায় থেকে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির ভূমিকা এ ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এই যুদ্ধই পর্যায়ক্রমে দেশগুলোর জাতীয় পর্যায়ে এবং সংকট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার ধারণা করা মোটেই অযৌক্তিক নয়।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে পানি নিয়ে। কথাটা প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের কোনো একজন প্রেসিডেন্ট। তারপর পৃথিবীময় অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজন বিভিন্ন সময় কথাটার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে পানির ক্রমবর্ধমান সংকট সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের (২২ মার্চ) অনুষ্ঠানাদিতে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত সর্বত্র ওই সংকটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ব পানি সম্মেলনে জাতিসংঘের উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৫০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। ওই সম্মেলনেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পৃথিবীর সেই সব বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিরসনের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছে।
কিন্তু যে গ্রহটির মোট আয়তনের চার ভাগের তিন ভাগই পানি, সেখানে পানির সংকট হবে কেন! প্রথম কারণ হলো, পৃথিবীতে অঢেল পানি থাকলেও ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ খুবই কম। সেই যে কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ তাঁর ‘দ্য রাইম অব দ্য এন্সিয়েন্ট মেরিনার’-এ বলেছেন, ‘...ওয়াটার, ওয়াটার এভরিহোয়্যার, নর এনি ড্রপ টু ড্রিংক’, অনেকটা সে রকম। অথচ আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষ এখনো কোনো কিছুর নগণ্য দাম বোঝাতে ‘পানির দাম’ কথাটা ব্যবহার করে। যদিও সবাই এ কথাও জানে যে পানির অপর নাম জীবন। আর জীবন হচ্ছে অমূল্য। পানি ছাড়া কোনো জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
বিজ্ঞানীরা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগজুড়ে থাকা পানির মোট পরিমাণ ১৩৫ কোটি (১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন) ঘন কিলোমিটার। এটা যে কী বিপুল পরিমাণ পানি, তা আমাদের অনেকের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। তবে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু তথ্য থেকে আমরা অন্য রকম ধারণা পেতে পারি। যেমন ওই ১৩৫ কোটি ঘন কিলোমিটার পানির শতকরা ৯৭ ভাগ হচ্ছে লবণাক্ত পানি। পান করা, কৃষিকাজ কিংবা শিল্পে ব্যবহারের জন্য এই পানি উপযুক্ত নয়।
অবশিষ্ট ৩ শতাংশ হচ্ছে, ব্যবহার উপযোগী মিঠাপানি (ফ্রেশ ওয়াটার)। তবে এই ৩ শতাংশ পানিই পৃথিবীর বর্তমান চাহিদা মেটানোর জন্য যা প্রয়োজন, তার চেয়েও অনেক বেশি। কিন্তু কথা এখানেই শেষ নয়। ওই ৩ শতাংশের বেশির ভাগ পানিই থাকে পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চল আচ্ছাদিত বরফ ও হিমবাহ আকারে এবং ভূগর্ভের অনেক গভীর জলাধারে (ডিপ ওয়াটার অ্যাকুইফার)। মেঘ হয়েও ভেসে বেড়ায় কিছু পানি। এরপর পৃথিবীর মোট পানির মাত্র দশমিক ৩ ভাগ মিঠাপানি থাকে নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ব্যবহারের জন্য। নদী, খাল-বিল, হ্রদ ও অগভীর ভূগর্ভে থাকা এই পানির পরিমাণ এক লাখ ঘন কিলোমিটার।
বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবীতে মানবজাতির সব কাজে পানি ব্যবহার হয় ৫ হাজার ঘন কিলোমিটারের কম। এই হিসাবে মিঠাপানির প্রাপ্যতা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু সমস্যা হলো পৃথিবীর সব মহাদেশে ও সব অঞ্চলে এই মিঠাপানি সমপরিমাণে পাওয়া যায় না। বছরের সব মৌসুমেও সর্বত্র সমপরিমাণ মিঠাপানি মেলে না। বর্ষায় প্রচুর অব্যবহৃত পানি সমুদ্রে চলে যায়। ব্যবহারের সুযোগই থাকে না। আবার শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির প্রবাহ থাকে না। পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশ ও অঞ্চলের মতো আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায়ও এই সমস্যা প্রকট। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এই সমস্যাকে বিশ্বব্যাপী প্রকটতর করে তুলেছে।
পৃথিবীর প্রধান প্রধান নদীধারা একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত; অর্থাৎ আন্তর্জাতিক নদী। এসব নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক আইনকানুন রয়েছে। কিন্তু পানির উৎস ও প্রাপ্যতায় যে ব্যাপক মৌসুমি ব্যবধান থাকে, সে কারণে পানিবণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনকানুন ছাপিয়ে প্রধান নির্ধারক হয়ে ওঠে রাজনীতি। যাকে আসলে পানির রাজনীতি বলা যায়। এই রাজনীতিতে উজানের দেশগুলোই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। তারা নিজের দেশের কৃষি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটাতে একতরফাভাবে অনেক বেশি পানি ব্যবহারের সুযোগ নেয়। হিমালয় থেকে উৎসারিত এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা আমাদের দেশের প্রধান নদীগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা এই প্রবণতা দেখি। আর তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে রাজনীতির কোনো কিছুই তো এখন আর অন্তরালে নেই।
আমাদের অভিন্ন নদীগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ কম থাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ত পানি দেশের অভ্যন্তরে অনেক দূর পর্যন্ত ঢুকে পড়ছে। একসময়ের শস্যভান্ডার বরিশাল অঞ্চল এখন খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি এলাকা। কারণ, ছড়িয়ে পড়েছে লবণাক্ততা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলেও লবণাক্ততার আধিক্য পরিবেশ-প্রতিবেশের নিদারুণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানকার মানুষ প্রায় সারা বছর সুপেয় পানির কষ্টে কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় মরুকরণের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শেরপুরের নিজের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরে একজন সাংবাদিক বন্ধু জানান, তাঁদের এলাকায় কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমের শুরুতেই কোনো কোনো খাল-নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।
তবে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও হিস্যা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা, এটাই আমাদের দেশে মিঠা বা সুপেয় পানির প্রাপ্যতা কিংবা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার একমাত্র সমস্যা নয়। আমরা আমাদের নদ-নদী, খাল-বিল, হ্রদ-জলাশয়, পুকুর-ডোবাগুলো নিজেরাই বিপন্ন করে ফেলছি। দখলে-দূষণে আমাদের নিজস্ব পানির এই উৎসগুলোর এখন ত্রাহি অবস্থা। এগুলো রক্ষার জন্য যথেষ্ট আইনকানুন আমাদের দেশে আছে। এসব আইনকানুন প্রয়োগের কর্তৃপক্ষও রয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। সবলের প্রতাপ ও প্রভাবে এসব আইনকানুন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। ঠিক যেমন অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের আন্তর্জাতিক আইনকানুন উজানের বড় এবং শক্তিধর দেশগুলোর কাছে কার্যকরভাবে ঘেঁষতে পারছে না।
আমরা শহর-নগরের খাল-নদী, পুকুর-ডোবা সব দখল ও ভরাট করে ফেলছি আইনের তোয়াক্কা না করে। আমাদের শহর-নগরগুলোতে পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা অপ্রতুল। কোথাও কোথাও তা একেবারেই নেই। আমরা ওই সব জলাশয়ে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন করে পানিদূষণ করছি। আর শহর-নগরে ব্যবহারের জন্য গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে যাচ্ছি। ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
আমরা বাধাহীনভাবে শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলি। শহর-নগরের পয়োবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্যে আমরা নদীর পানি এতই দূষিত করে ফেলি যে তা পরিশোধন করেও ব্যবহারের উপযোগী কর যায় না। আমরা এই উৎসগুলোকে দূষণমুক্ত রাখতে পারলে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। প্রতিকারহীনভাবে দেশের সর্বত্র চলছে নদী-জলাশয় দখল। আসলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বলতে আমাদের কিছুই নেই। পয়োনিষ্কাশনেরও একই অবস্থা।
এ বছর বিশ্ব পানি দিবস পালনের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে ত্বরান্বিত পরিবর্তন’। অর্থাৎ এই সংকট সমাধানের পদক্ষেপগুলো দ্রুত কার্যকর করা হবে। কিন্তু বাস্তবে বহুকাল থেকেই আমরা দেখে আসছি, এসব সংকট সমাধানের পরিবর্তে বিপরীত ধারায় চলছে। দ্রুততার সঙ্গে উল্টোমুখী পরিবর্তন ঘটে চলেছে। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে সরকারিভাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত তথ্য হচ্ছে, দেশের ৪১ শতাংশ (প্রায় ৮ কোটি) মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। আর স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ দেশে ৬১ শতাংশ (প্রায় ১২ কোটি)। অথচ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছাতে হবে।
আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মধ্যে একটি হচ্ছে নদী রক্ষা কমিশন (নরক)। এই কমিশনকে যথেষ্ট আইনি ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে; বিশেষ করে নদী দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে। কিন্তু দেশের কোথাও কোনো নদী দখলের প্রতিকার তারা করতে পেরেছেন এমন নজির নেই।
আসলে পানি নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার যে আশঙ্কার কথা শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথিবীর দেশে দেশে সেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। শুরুটা হয়েছে দেশগুলোর অভ্যন্তরে, তৃণমূল পর্যায় থেকে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির ভূমিকা এ ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এই যুদ্ধই পর্যায়ক্রমে দেশগুলোর জাতীয় পর্যায়ে এবং সংকট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ার ধারণা করা মোটেই অযৌক্তিক নয়।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে পানি নিয়ে। কথাটা প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের কোনো একজন প্রেসিডেন্ট। তারপর পৃথিবীময় অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজন বিভিন্ন সময় কথাটার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে পানির ক্রমবর্ধমান সংকট সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের
০১ এপ্রিল ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে পানি নিয়ে। কথাটা প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের কোনো একজন প্রেসিডেন্ট। তারপর পৃথিবীময় অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজন বিভিন্ন সময় কথাটার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে পানির ক্রমবর্ধমান সংকট সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের
০১ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে পানি নিয়ে। কথাটা প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের কোনো একজন প্রেসিডেন্ট। তারপর পৃথিবীময় অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজন বিভিন্ন সময় কথাটার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে পানির ক্রমবর্ধমান সংকট সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের
০১ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে পানি নিয়ে। কথাটা প্রথম বলেছিলেন সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের কোনো একজন প্রেসিডেন্ট। তারপর পৃথিবীময় অনেক বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজন বিভিন্ন সময় কথাটার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীতে পানির ক্রমবর্ধমান সংকট সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করা। এ বছর বিশ্ব পানি দিবসের
০১ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫