মামুনুর রশীদ

আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমাদের যৌবনের সূচনাকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্রের গান; যেমন ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে...’ অথবা ‘যত লিখে যাই তবু না ফুরায়, চিঠিতো হয় না শেষ,...তুমি আজ কত দূরে...’। তারপর প্রতিমা মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে বাংলা গানের যাঁরা শিল্পী তাঁদের গান আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাতের বেলায় লেখাপড়া শেষে কোনো এক চায়ের দোকানে দুই কাপ চা চারজনে ভাগ করে নিয়ে ম্যানেজারকে বলে গানগুলো কলের গানে শোনানোর জন্য অনুরোধ জানাতাম। মাঝে মাঝে ম্যানেজার খুব বিরক্ত হতেন, রেকর্ড বদলাতে চাইতেন না। কারণ হিন্দি ও উর্দু গানেরও সমঝদার ছিলাম আমরা, সেই সব গানের ভক্ত ছিলাম। নওশাদের সুরে মোহাম্মদ রফির গান তখন খুবই জনপ্রিয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখন ‘নাগিন’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে বিখ্যাত হয়েছেন। উর্দু গজল, হিন্দি গান সমভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের শিল্পীরাও বেশ জনপ্রিয়—আব্দুল জব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আঞ্জুমান আরা, ফেরদৌসী রহমানসহ আরও অনেক সংগীতশিল্পী ছিলেন। পাশাপাশি আমাদের লোকসংগীতের বিশ্বমানের গায়ক আব্দুল আলীম, আব্বাসউদ্দীন আহমদ, হরলাল রায় আর পাকিস্তানের সুকণ্ঠী গায়িকা নুরজাহান আমাদের সংগীতের শ্রুতিকে মুগ্ধ করে রাখতেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি কিন্তু আমরা মেহেদী হাসান, আবিদ ওয়ালী মোহাম্মদের গানের ভক্ত। আর উচ্চাঙ্গসংগীতের তো কথাই নেই। নাজাকাত-সালামাত দুই ভাইয়ের সংগীতেরও আমরা ভক্ত ছিলাম।
সেই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনেতা-অভিনেত্রী, সুরকার, গায়ক ছাড়াও ছিলেন বোম্বের দিলীপ কুমার, মীনা কুমারী, বৈজয়ন্তী মালা, নার্গিস, মধুবালাসহ আরও বেশ কিছু শিল্পীর অভিনয় ও সংগীত আমাদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করত। সেই সঙ্গে হলিউডের ছবির নায়ক-নায়িকারা এবং তখনকার সময়ে পাশ্চাত্য সংগীতেরও মোহনীয় আবেশে আমরা সময় পার করতাম। এর সঙ্গে তুমুল জনপ্রিয় হলো রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলের গান। ফিরোজা বেগম স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার আগেই তাঁর কণ্ঠ আমাদের কাছে বিস্ময়কর। রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী কলিম শরাফী তখন ঢাকায়, তাঁর গান ছাড়াও সুবিনয় রায়, দেবব্রত বিশ্বাস, অশোক তরু, সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানে আমরা জগৎকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। নজরুলপুত্র কাজী সব্যসাচীর আবৃত্তি এমনই মনোমুগ্ধকর যে আমরা বারবার শুনতে চাইতাম।
কলের গান থেকে টেপ ক্যাসেটে রূপান্তরের এক ক্রান্তিকাল এল। আটাত্তর আরপিএম থেকে লং প্লেতে রেকর্ডে স্থানান্তর হয়েছে, রেডিও থেকে যেমন ট্রানজিস্টরে রূপান্তর হতে যাচ্ছে, তেমনি রেকর্ড থেকে ম্যাগনেটিক টেপে দ্রুত রূপান্তরের কাল শুরু হয়েছে। সেই মোহনীয় কালে রাজনীতির একটা রূপান্তর পর্ব চলছিল। আমরা ক্রমাগত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চলছি। হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি আমাদের স্পর্শ করলেও হৃদয়ে তখন একদিকে সংগীতের মেলোডিতে আমরা মোহাচ্ছন্ন, শিল্পীদের কণ্ঠের মিষ্টি সুরের মূর্ছনা, আর অন্যদিকে পাকিস্তানি মিলিটারি জান্তার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এ দেশের মানুষ তখন ভাই ভাই। জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ শুধু নয়, আবিষ্কারের ভাবনায়ও তখন আমরা আচ্ছন্ন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল পাশে থাকলেও জীবনানন্দ দাস তখন আমাদের মুখে মুখে। এর সঙ্গে আছে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, রশীদ চৌধুরীসহ অপরাপর শিল্পীদের ছবি। আমাদের জন্য স্লোগান ছিল—পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।
একদিকে সংগীত, চিত্রকলা, সাহিত্য আমাদের নিত্যসঙ্গী যার সম্প্রসারণ আমাদের চলচ্চিত্রেও ছিল। জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, আলমগীর কবির বিদেশি চলচ্চিত্রের নতুন আঙ্গিক নিয়ে কথা বলেছেন। উর্দু চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমাদের চলচ্চিত্র বিন্দু থেকে বৃত্তে এসে পৌঁছেছে। একেবারেই ভিন্নধর্মী একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন, যার নাম ফখরুল আলম। ভিন্নধারার ‘মানুষ অমানুষ’, ‘জয়বাংলা’, ‘শনিবারের চিঠি’ নামে তিনটি ছবি তিনি পরিচালনা করেছিলেন।
শুধু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নয়, ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন আমাদের রাজনীতির একটি আলোচনার বিষয়। চীন, রাশিয়ার রাজনীতির একটা অনুপ্রবেশ ঘটেছে, আবার কে সঠিক তা নিয়েও দ্বন্দ্ব চলেছে। কমিউনিস্ট শিবির বিভক্ত হয়ে দুই শিবিরেই যথেষ্ট অনুসারী রয়েছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে জেগে উঠছে পূর্ব বাংলার ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ। এর মধ্যেই বসন্ত উৎসব হয়েছে, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়েছে, একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরি চলেছে। কিন্তু এই সবকিছুতেই পাকিস্তানি শাসকের বৈরিতা। সবচেয়ে বেশি বৈরিতা ছিল নাটকের প্রতি। নাটকের ওপর সেন্সরশিপের খড়্গ চাপা, সহসা অভিনয় করার সুযোগ মিলত না। একমাত্র করা যেত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে। সেখানেও পুলিশের আড়িপাতা আর ছাত্র আন্দোলনের ওপর নানা ধরনের পুলিশি আক্রমণ। আক্রমণ তো চলেছেই, পাকিস্তানপন্থীরা রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে তেমন কিছু করতে পারছিল না। ধর্মকে ব্যবহার করার পর্যায় প্রায় শেষের দিকে।
ওই যে প্রথমে বলেছি কলেজে কলের গানের প্রভাবে ছাত্র-যুবা এমনভাবে উদ্বুদ্ধ, তাদের আর ঠেকানো যাচ্ছিল না। এমনি তার শক্তি! গান গাইতে গাইতেই একসময়ে সাবমেশিন গান হাতে তুলে নিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পাশে ছিল নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ এবং সেই সময়ের কালজয়ী সংগীত। যুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতারের গান, নাটক, সাহিত্যের উদ্ধৃতি এসবও অনুপ্রাণিত করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের বাংকারে, রণাঙ্গনে এবং দেশের ভেতরে, যারা হৃৎপিণ্ডে ধারণ করেছিল একেকটা গ্রেনেড। এভাবেই শিল্প, সাহিত্যের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল রাজনীতি-যুদ্ধ।
খুব অল্প সময়ে মাত্র নয় মাসেই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল। সেই কলেজের কলের গানের প্রজন্ম নতুন রাষ্ট্রের মুখোমুখি হয়ে উঠল। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মাথায় সেই গানের জায়গা দখল করল এক অদ্ভুত আঁধার। মেশিনগান হয়ে দাঁড়াল রাজনীতির প্রকাশমান এক বড় অস্ত্র। সেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবার সংগীত খুঁজতে লাগল, কেউ কেউ সাহিত্য খুঁজল। যার ফলাফলে সুদীর্ঘ পনেরো বছর পরে অস্ত্র নামল বটে, কিন্তু নতুন প্রজন্ম তৈরি হলো না। তাদের অভিজ্ঞতায় নজরুল, রবীন্দ্রনাথের বদলে চলে এল জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধগামী এক জান্তা, তারা কলের গান শোনে না। পরবর্তী প্রযুক্তির রূপান্তরের ফলে এক অদ্ভুত সংগীত শোনে তারা। তাদের দেখে দেখে এই নবজাতক তাদের শৈশব কাটিয়ে কৈশোরে এবং যৌবনে পদার্পণ করে তারাও আইডল খুঁজে পায় না। বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানো কোনো রাজনৈতিক চরিত্রকে দেখতে পাওয়া যায় না। ফলে অদ্ভুত আঁধার আরও ঘনীভূত হয়।
ষাটের দশকে যারা গান শুনতে দিতে চায়নি, সেই শক্তি ধীরে ধীরে পুনর্জীবিত হতে শুরু করে। এই নবপ্রজন্মের সংঘবদ্ধ গান শোনাটা একসময় বন্ধ হয়ে যায়, শিল্পচর্চা হয়ে পড়ে একান্ত ব্যক্তিগত। আর প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে নতুন প্রজন্ম ক্রমাগতভাবে নিমজ্জিত হয় একান্ত ব্যক্তিগত এক অদ্ভুত জীবনাচরণে। গণমাধ্যম খুব দায়িত্ব নিয়ে শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির সুসমন্বয় ঘটাতে পারেনি। কখনো রাজনীতির বা ক্ষমতা শক্তিশালী হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে অর্থ-টাকা। অর্থনীতিবিদেরা তাঁদের মানবিক বিজ্ঞান ভুলে যান, ধনবিজ্ঞানীরা সুকৌশলে সেই জায়গা দখল করে। তাই ধনবিজ্ঞানের এক উল্টোপথে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ।
একসময় পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত অর্থনীতিবিদেরাও রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। সাহিত্যের প্রতি ছিল তাঁদের প্রবল ঝোঁক। সংস্কৃতিকে মনে করতেন রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যার একটা বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন একদা মওলানা ভাসানী, তিনি মজলুম জনতার নেতা ছিলেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে তিনি একটি সম্মেলন ডেকেছিলেন, তিনি তখন আওয়ামী লীগের সভাপতি। মূলত সম্মেলনটি ছিল ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক। কিন্তু সেখানে সংস্কৃতির একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তোরণগুলো ছিল শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং কিছুটা রাজনৈতিক নেতাদের নামে। সেখানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তখনকার দিনের বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল। নৃত্যশিল্পী এবং কবিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মনে করতেন কবি-সাহিত্যিকেরা আন্দোলনের সঙ্গে যতক্ষণ যুক্ত না হবেন, তত দিন কোনো আন্দোলন সফল হবে না। সেই সম্মেলনেই পাকিস্তানকে তিনি বিদায় জানিয়েছিলেন ‘আসসালামু আলাইকুম’ দিয়ে।
এখন সেই কলের গান নেই। তার জায়গায় এসেছে অত্যন্ত শক্তিশালী আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সংগীতের নানাবিধ যন্ত্র। তারুণ্যের মানসপটে ভাঙা কলের গান যে শক্তি জুগিয়েছিল, আজকের প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে যন্ত্রটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমাদের যৌবনের সূচনাকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্রের গান; যেমন ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে...’ অথবা ‘যত লিখে যাই তবু না ফুরায়, চিঠিতো হয় না শেষ,...তুমি আজ কত দূরে...’। তারপর প্রতিমা মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে বাংলা গানের যাঁরা শিল্পী তাঁদের গান আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাতের বেলায় লেখাপড়া শেষে কোনো এক চায়ের দোকানে দুই কাপ চা চারজনে ভাগ করে নিয়ে ম্যানেজারকে বলে গানগুলো কলের গানে শোনানোর জন্য অনুরোধ জানাতাম। মাঝে মাঝে ম্যানেজার খুব বিরক্ত হতেন, রেকর্ড বদলাতে চাইতেন না। কারণ হিন্দি ও উর্দু গানেরও সমঝদার ছিলাম আমরা, সেই সব গানের ভক্ত ছিলাম। নওশাদের সুরে মোহাম্মদ রফির গান তখন খুবই জনপ্রিয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখন ‘নাগিন’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে বিখ্যাত হয়েছেন। উর্দু গজল, হিন্দি গান সমভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের শিল্পীরাও বেশ জনপ্রিয়—আব্দুল জব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আঞ্জুমান আরা, ফেরদৌসী রহমানসহ আরও অনেক সংগীতশিল্পী ছিলেন। পাশাপাশি আমাদের লোকসংগীতের বিশ্বমানের গায়ক আব্দুল আলীম, আব্বাসউদ্দীন আহমদ, হরলাল রায় আর পাকিস্তানের সুকণ্ঠী গায়িকা নুরজাহান আমাদের সংগীতের শ্রুতিকে মুগ্ধ করে রাখতেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি কিন্তু আমরা মেহেদী হাসান, আবিদ ওয়ালী মোহাম্মদের গানের ভক্ত। আর উচ্চাঙ্গসংগীতের তো কথাই নেই। নাজাকাত-সালামাত দুই ভাইয়ের সংগীতেরও আমরা ভক্ত ছিলাম।
সেই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনেতা-অভিনেত্রী, সুরকার, গায়ক ছাড়াও ছিলেন বোম্বের দিলীপ কুমার, মীনা কুমারী, বৈজয়ন্তী মালা, নার্গিস, মধুবালাসহ আরও বেশ কিছু শিল্পীর অভিনয় ও সংগীত আমাদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করত। সেই সঙ্গে হলিউডের ছবির নায়ক-নায়িকারা এবং তখনকার সময়ে পাশ্চাত্য সংগীতেরও মোহনীয় আবেশে আমরা সময় পার করতাম। এর সঙ্গে তুমুল জনপ্রিয় হলো রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলের গান। ফিরোজা বেগম স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার আগেই তাঁর কণ্ঠ আমাদের কাছে বিস্ময়কর। রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী কলিম শরাফী তখন ঢাকায়, তাঁর গান ছাড়াও সুবিনয় রায়, দেবব্রত বিশ্বাস, অশোক তরু, সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানে আমরা জগৎকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। নজরুলপুত্র কাজী সব্যসাচীর আবৃত্তি এমনই মনোমুগ্ধকর যে আমরা বারবার শুনতে চাইতাম।
কলের গান থেকে টেপ ক্যাসেটে রূপান্তরের এক ক্রান্তিকাল এল। আটাত্তর আরপিএম থেকে লং প্লেতে রেকর্ডে স্থানান্তর হয়েছে, রেডিও থেকে যেমন ট্রানজিস্টরে রূপান্তর হতে যাচ্ছে, তেমনি রেকর্ড থেকে ম্যাগনেটিক টেপে দ্রুত রূপান্তরের কাল শুরু হয়েছে। সেই মোহনীয় কালে রাজনীতির একটা রূপান্তর পর্ব চলছিল। আমরা ক্রমাগত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চলছি। হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি আমাদের স্পর্শ করলেও হৃদয়ে তখন একদিকে সংগীতের মেলোডিতে আমরা মোহাচ্ছন্ন, শিল্পীদের কণ্ঠের মিষ্টি সুরের মূর্ছনা, আর অন্যদিকে পাকিস্তানি মিলিটারি জান্তার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এ দেশের মানুষ তখন ভাই ভাই। জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ শুধু নয়, আবিষ্কারের ভাবনায়ও তখন আমরা আচ্ছন্ন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল পাশে থাকলেও জীবনানন্দ দাস তখন আমাদের মুখে মুখে। এর সঙ্গে আছে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, রশীদ চৌধুরীসহ অপরাপর শিল্পীদের ছবি। আমাদের জন্য স্লোগান ছিল—পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।
একদিকে সংগীত, চিত্রকলা, সাহিত্য আমাদের নিত্যসঙ্গী যার সম্প্রসারণ আমাদের চলচ্চিত্রেও ছিল। জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, আলমগীর কবির বিদেশি চলচ্চিত্রের নতুন আঙ্গিক নিয়ে কথা বলেছেন। উর্দু চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমাদের চলচ্চিত্র বিন্দু থেকে বৃত্তে এসে পৌঁছেছে। একেবারেই ভিন্নধর্মী একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন, যার নাম ফখরুল আলম। ভিন্নধারার ‘মানুষ অমানুষ’, ‘জয়বাংলা’, ‘শনিবারের চিঠি’ নামে তিনটি ছবি তিনি পরিচালনা করেছিলেন।
শুধু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নয়, ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন আমাদের রাজনীতির একটি আলোচনার বিষয়। চীন, রাশিয়ার রাজনীতির একটা অনুপ্রবেশ ঘটেছে, আবার কে সঠিক তা নিয়েও দ্বন্দ্ব চলেছে। কমিউনিস্ট শিবির বিভক্ত হয়ে দুই শিবিরেই যথেষ্ট অনুসারী রয়েছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে জেগে উঠছে পূর্ব বাংলার ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ। এর মধ্যেই বসন্ত উৎসব হয়েছে, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়েছে, একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরি চলেছে। কিন্তু এই সবকিছুতেই পাকিস্তানি শাসকের বৈরিতা। সবচেয়ে বেশি বৈরিতা ছিল নাটকের প্রতি। নাটকের ওপর সেন্সরশিপের খড়্গ চাপা, সহসা অভিনয় করার সুযোগ মিলত না। একমাত্র করা যেত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে। সেখানেও পুলিশের আড়িপাতা আর ছাত্র আন্দোলনের ওপর নানা ধরনের পুলিশি আক্রমণ। আক্রমণ তো চলেছেই, পাকিস্তানপন্থীরা রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে তেমন কিছু করতে পারছিল না। ধর্মকে ব্যবহার করার পর্যায় প্রায় শেষের দিকে।
ওই যে প্রথমে বলেছি কলেজে কলের গানের প্রভাবে ছাত্র-যুবা এমনভাবে উদ্বুদ্ধ, তাদের আর ঠেকানো যাচ্ছিল না। এমনি তার শক্তি! গান গাইতে গাইতেই একসময়ে সাবমেশিন গান হাতে তুলে নিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পাশে ছিল নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ এবং সেই সময়ের কালজয়ী সংগীত। যুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতারের গান, নাটক, সাহিত্যের উদ্ধৃতি এসবও অনুপ্রাণিত করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের বাংকারে, রণাঙ্গনে এবং দেশের ভেতরে, যারা হৃৎপিণ্ডে ধারণ করেছিল একেকটা গ্রেনেড। এভাবেই শিল্প, সাহিত্যের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল রাজনীতি-যুদ্ধ।
খুব অল্প সময়ে মাত্র নয় মাসেই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল। সেই কলেজের কলের গানের প্রজন্ম নতুন রাষ্ট্রের মুখোমুখি হয়ে উঠল। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মাথায় সেই গানের জায়গা দখল করল এক অদ্ভুত আঁধার। মেশিনগান হয়ে দাঁড়াল রাজনীতির প্রকাশমান এক বড় অস্ত্র। সেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবার সংগীত খুঁজতে লাগল, কেউ কেউ সাহিত্য খুঁজল। যার ফলাফলে সুদীর্ঘ পনেরো বছর পরে অস্ত্র নামল বটে, কিন্তু নতুন প্রজন্ম তৈরি হলো না। তাদের অভিজ্ঞতায় নজরুল, রবীন্দ্রনাথের বদলে চলে এল জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধগামী এক জান্তা, তারা কলের গান শোনে না। পরবর্তী প্রযুক্তির রূপান্তরের ফলে এক অদ্ভুত সংগীত শোনে তারা। তাদের দেখে দেখে এই নবজাতক তাদের শৈশব কাটিয়ে কৈশোরে এবং যৌবনে পদার্পণ করে তারাও আইডল খুঁজে পায় না। বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানো কোনো রাজনৈতিক চরিত্রকে দেখতে পাওয়া যায় না। ফলে অদ্ভুত আঁধার আরও ঘনীভূত হয়।
ষাটের দশকে যারা গান শুনতে দিতে চায়নি, সেই শক্তি ধীরে ধীরে পুনর্জীবিত হতে শুরু করে। এই নবপ্রজন্মের সংঘবদ্ধ গান শোনাটা একসময় বন্ধ হয়ে যায়, শিল্পচর্চা হয়ে পড়ে একান্ত ব্যক্তিগত। আর প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে নতুন প্রজন্ম ক্রমাগতভাবে নিমজ্জিত হয় একান্ত ব্যক্তিগত এক অদ্ভুত জীবনাচরণে। গণমাধ্যম খুব দায়িত্ব নিয়ে শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির সুসমন্বয় ঘটাতে পারেনি। কখনো রাজনীতির বা ক্ষমতা শক্তিশালী হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে অর্থ-টাকা। অর্থনীতিবিদেরা তাঁদের মানবিক বিজ্ঞান ভুলে যান, ধনবিজ্ঞানীরা সুকৌশলে সেই জায়গা দখল করে। তাই ধনবিজ্ঞানের এক উল্টোপথে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ।
একসময় পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত অর্থনীতিবিদেরাও রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। সাহিত্যের প্রতি ছিল তাঁদের প্রবল ঝোঁক। সংস্কৃতিকে মনে করতেন রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যার একটা বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন একদা মওলানা ভাসানী, তিনি মজলুম জনতার নেতা ছিলেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে তিনি একটি সম্মেলন ডেকেছিলেন, তিনি তখন আওয়ামী লীগের সভাপতি। মূলত সম্মেলনটি ছিল ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক। কিন্তু সেখানে সংস্কৃতির একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তোরণগুলো ছিল শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং কিছুটা রাজনৈতিক নেতাদের নামে। সেখানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তখনকার দিনের বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল। নৃত্যশিল্পী এবং কবিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মনে করতেন কবি-সাহিত্যিকেরা আন্দোলনের সঙ্গে যতক্ষণ যুক্ত না হবেন, তত দিন কোনো আন্দোলন সফল হবে না। সেই সম্মেলনেই পাকিস্তানকে তিনি বিদায় জানিয়েছিলেন ‘আসসালামু আলাইকুম’ দিয়ে।
এখন সেই কলের গান নেই। তার জায়গায় এসেছে অত্যন্ত শক্তিশালী আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সংগীতের নানাবিধ যন্ত্র। তারুণ্যের মানসপটে ভাঙা কলের গান যে শক্তি জুগিয়েছিল, আজকের প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে যন্ত্রটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
মামুনুর রশীদ

আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমাদের যৌবনের সূচনাকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্রের গান; যেমন ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে...’ অথবা ‘যত লিখে যাই তবু না ফুরায়, চিঠিতো হয় না শেষ,...তুমি আজ কত দূরে...’। তারপর প্রতিমা মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে বাংলা গানের যাঁরা শিল্পী তাঁদের গান আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাতের বেলায় লেখাপড়া শেষে কোনো এক চায়ের দোকানে দুই কাপ চা চারজনে ভাগ করে নিয়ে ম্যানেজারকে বলে গানগুলো কলের গানে শোনানোর জন্য অনুরোধ জানাতাম। মাঝে মাঝে ম্যানেজার খুব বিরক্ত হতেন, রেকর্ড বদলাতে চাইতেন না। কারণ হিন্দি ও উর্দু গানেরও সমঝদার ছিলাম আমরা, সেই সব গানের ভক্ত ছিলাম। নওশাদের সুরে মোহাম্মদ রফির গান তখন খুবই জনপ্রিয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখন ‘নাগিন’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে বিখ্যাত হয়েছেন। উর্দু গজল, হিন্দি গান সমভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের শিল্পীরাও বেশ জনপ্রিয়—আব্দুল জব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আঞ্জুমান আরা, ফেরদৌসী রহমানসহ আরও অনেক সংগীতশিল্পী ছিলেন। পাশাপাশি আমাদের লোকসংগীতের বিশ্বমানের গায়ক আব্দুল আলীম, আব্বাসউদ্দীন আহমদ, হরলাল রায় আর পাকিস্তানের সুকণ্ঠী গায়িকা নুরজাহান আমাদের সংগীতের শ্রুতিকে মুগ্ধ করে রাখতেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি কিন্তু আমরা মেহেদী হাসান, আবিদ ওয়ালী মোহাম্মদের গানের ভক্ত। আর উচ্চাঙ্গসংগীতের তো কথাই নেই। নাজাকাত-সালামাত দুই ভাইয়ের সংগীতেরও আমরা ভক্ত ছিলাম।
সেই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনেতা-অভিনেত্রী, সুরকার, গায়ক ছাড়াও ছিলেন বোম্বের দিলীপ কুমার, মীনা কুমারী, বৈজয়ন্তী মালা, নার্গিস, মধুবালাসহ আরও বেশ কিছু শিল্পীর অভিনয় ও সংগীত আমাদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করত। সেই সঙ্গে হলিউডের ছবির নায়ক-নায়িকারা এবং তখনকার সময়ে পাশ্চাত্য সংগীতেরও মোহনীয় আবেশে আমরা সময় পার করতাম। এর সঙ্গে তুমুল জনপ্রিয় হলো রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলের গান। ফিরোজা বেগম স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার আগেই তাঁর কণ্ঠ আমাদের কাছে বিস্ময়কর। রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী কলিম শরাফী তখন ঢাকায়, তাঁর গান ছাড়াও সুবিনয় রায়, দেবব্রত বিশ্বাস, অশোক তরু, সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানে আমরা জগৎকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। নজরুলপুত্র কাজী সব্যসাচীর আবৃত্তি এমনই মনোমুগ্ধকর যে আমরা বারবার শুনতে চাইতাম।
কলের গান থেকে টেপ ক্যাসেটে রূপান্তরের এক ক্রান্তিকাল এল। আটাত্তর আরপিএম থেকে লং প্লেতে রেকর্ডে স্থানান্তর হয়েছে, রেডিও থেকে যেমন ট্রানজিস্টরে রূপান্তর হতে যাচ্ছে, তেমনি রেকর্ড থেকে ম্যাগনেটিক টেপে দ্রুত রূপান্তরের কাল শুরু হয়েছে। সেই মোহনীয় কালে রাজনীতির একটা রূপান্তর পর্ব চলছিল। আমরা ক্রমাগত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চলছি। হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি আমাদের স্পর্শ করলেও হৃদয়ে তখন একদিকে সংগীতের মেলোডিতে আমরা মোহাচ্ছন্ন, শিল্পীদের কণ্ঠের মিষ্টি সুরের মূর্ছনা, আর অন্যদিকে পাকিস্তানি মিলিটারি জান্তার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এ দেশের মানুষ তখন ভাই ভাই। জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ শুধু নয়, আবিষ্কারের ভাবনায়ও তখন আমরা আচ্ছন্ন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল পাশে থাকলেও জীবনানন্দ দাস তখন আমাদের মুখে মুখে। এর সঙ্গে আছে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, রশীদ চৌধুরীসহ অপরাপর শিল্পীদের ছবি। আমাদের জন্য স্লোগান ছিল—পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।
একদিকে সংগীত, চিত্রকলা, সাহিত্য আমাদের নিত্যসঙ্গী যার সম্প্রসারণ আমাদের চলচ্চিত্রেও ছিল। জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, আলমগীর কবির বিদেশি চলচ্চিত্রের নতুন আঙ্গিক নিয়ে কথা বলেছেন। উর্দু চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমাদের চলচ্চিত্র বিন্দু থেকে বৃত্তে এসে পৌঁছেছে। একেবারেই ভিন্নধর্মী একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন, যার নাম ফখরুল আলম। ভিন্নধারার ‘মানুষ অমানুষ’, ‘জয়বাংলা’, ‘শনিবারের চিঠি’ নামে তিনটি ছবি তিনি পরিচালনা করেছিলেন।
শুধু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নয়, ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন আমাদের রাজনীতির একটি আলোচনার বিষয়। চীন, রাশিয়ার রাজনীতির একটা অনুপ্রবেশ ঘটেছে, আবার কে সঠিক তা নিয়েও দ্বন্দ্ব চলেছে। কমিউনিস্ট শিবির বিভক্ত হয়ে দুই শিবিরেই যথেষ্ট অনুসারী রয়েছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে জেগে উঠছে পূর্ব বাংলার ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ। এর মধ্যেই বসন্ত উৎসব হয়েছে, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়েছে, একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরি চলেছে। কিন্তু এই সবকিছুতেই পাকিস্তানি শাসকের বৈরিতা। সবচেয়ে বেশি বৈরিতা ছিল নাটকের প্রতি। নাটকের ওপর সেন্সরশিপের খড়্গ চাপা, সহসা অভিনয় করার সুযোগ মিলত না। একমাত্র করা যেত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে। সেখানেও পুলিশের আড়িপাতা আর ছাত্র আন্দোলনের ওপর নানা ধরনের পুলিশি আক্রমণ। আক্রমণ তো চলেছেই, পাকিস্তানপন্থীরা রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে তেমন কিছু করতে পারছিল না। ধর্মকে ব্যবহার করার পর্যায় প্রায় শেষের দিকে।
ওই যে প্রথমে বলেছি কলেজে কলের গানের প্রভাবে ছাত্র-যুবা এমনভাবে উদ্বুদ্ধ, তাদের আর ঠেকানো যাচ্ছিল না। এমনি তার শক্তি! গান গাইতে গাইতেই একসময়ে সাবমেশিন গান হাতে তুলে নিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পাশে ছিল নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ এবং সেই সময়ের কালজয়ী সংগীত। যুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতারের গান, নাটক, সাহিত্যের উদ্ধৃতি এসবও অনুপ্রাণিত করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের বাংকারে, রণাঙ্গনে এবং দেশের ভেতরে, যারা হৃৎপিণ্ডে ধারণ করেছিল একেকটা গ্রেনেড। এভাবেই শিল্প, সাহিত্যের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল রাজনীতি-যুদ্ধ।
খুব অল্প সময়ে মাত্র নয় মাসেই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল। সেই কলেজের কলের গানের প্রজন্ম নতুন রাষ্ট্রের মুখোমুখি হয়ে উঠল। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মাথায় সেই গানের জায়গা দখল করল এক অদ্ভুত আঁধার। মেশিনগান হয়ে দাঁড়াল রাজনীতির প্রকাশমান এক বড় অস্ত্র। সেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবার সংগীত খুঁজতে লাগল, কেউ কেউ সাহিত্য খুঁজল। যার ফলাফলে সুদীর্ঘ পনেরো বছর পরে অস্ত্র নামল বটে, কিন্তু নতুন প্রজন্ম তৈরি হলো না। তাদের অভিজ্ঞতায় নজরুল, রবীন্দ্রনাথের বদলে চলে এল জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধগামী এক জান্তা, তারা কলের গান শোনে না। পরবর্তী প্রযুক্তির রূপান্তরের ফলে এক অদ্ভুত সংগীত শোনে তারা। তাদের দেখে দেখে এই নবজাতক তাদের শৈশব কাটিয়ে কৈশোরে এবং যৌবনে পদার্পণ করে তারাও আইডল খুঁজে পায় না। বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানো কোনো রাজনৈতিক চরিত্রকে দেখতে পাওয়া যায় না। ফলে অদ্ভুত আঁধার আরও ঘনীভূত হয়।
ষাটের দশকে যারা গান শুনতে দিতে চায়নি, সেই শক্তি ধীরে ধীরে পুনর্জীবিত হতে শুরু করে। এই নবপ্রজন্মের সংঘবদ্ধ গান শোনাটা একসময় বন্ধ হয়ে যায়, শিল্পচর্চা হয়ে পড়ে একান্ত ব্যক্তিগত। আর প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে নতুন প্রজন্ম ক্রমাগতভাবে নিমজ্জিত হয় একান্ত ব্যক্তিগত এক অদ্ভুত জীবনাচরণে। গণমাধ্যম খুব দায়িত্ব নিয়ে শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির সুসমন্বয় ঘটাতে পারেনি। কখনো রাজনীতির বা ক্ষমতা শক্তিশালী হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে অর্থ-টাকা। অর্থনীতিবিদেরা তাঁদের মানবিক বিজ্ঞান ভুলে যান, ধনবিজ্ঞানীরা সুকৌশলে সেই জায়গা দখল করে। তাই ধনবিজ্ঞানের এক উল্টোপথে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ।
একসময় পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত অর্থনীতিবিদেরাও রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। সাহিত্যের প্রতি ছিল তাঁদের প্রবল ঝোঁক। সংস্কৃতিকে মনে করতেন রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যার একটা বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন একদা মওলানা ভাসানী, তিনি মজলুম জনতার নেতা ছিলেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে তিনি একটি সম্মেলন ডেকেছিলেন, তিনি তখন আওয়ামী লীগের সভাপতি। মূলত সম্মেলনটি ছিল ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক। কিন্তু সেখানে সংস্কৃতির একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তোরণগুলো ছিল শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং কিছুটা রাজনৈতিক নেতাদের নামে। সেখানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তখনকার দিনের বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল। নৃত্যশিল্পী এবং কবিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মনে করতেন কবি-সাহিত্যিকেরা আন্দোলনের সঙ্গে যতক্ষণ যুক্ত না হবেন, তত দিন কোনো আন্দোলন সফল হবে না। সেই সম্মেলনেই পাকিস্তানকে তিনি বিদায় জানিয়েছিলেন ‘আসসালামু আলাইকুম’ দিয়ে।
এখন সেই কলের গান নেই। তার জায়গায় এসেছে অত্যন্ত শক্তিশালী আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সংগীতের নানাবিধ যন্ত্র। তারুণ্যের মানসপটে ভাঙা কলের গান যে শক্তি জুগিয়েছিল, আজকের প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে যন্ত্রটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমাদের যৌবনের সূচনাকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্রের গান; যেমন ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে...’ অথবা ‘যত লিখে যাই তবু না ফুরায়, চিঠিতো হয় না শেষ,...তুমি আজ কত দূরে...’। তারপর প্রতিমা মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর থেকে শুরু করে বাংলা গানের যাঁরা শিল্পী তাঁদের গান আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাতের বেলায় লেখাপড়া শেষে কোনো এক চায়ের দোকানে দুই কাপ চা চারজনে ভাগ করে নিয়ে ম্যানেজারকে বলে গানগুলো কলের গানে শোনানোর জন্য অনুরোধ জানাতাম। মাঝে মাঝে ম্যানেজার খুব বিরক্ত হতেন, রেকর্ড বদলাতে চাইতেন না। কারণ হিন্দি ও উর্দু গানেরও সমঝদার ছিলাম আমরা, সেই সব গানের ভক্ত ছিলাম। নওশাদের সুরে মোহাম্মদ রফির গান তখন খুবই জনপ্রিয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখন ‘নাগিন’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে বিখ্যাত হয়েছেন। উর্দু গজল, হিন্দি গান সমভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের শিল্পীরাও বেশ জনপ্রিয়—আব্দুল জব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আঞ্জুমান আরা, ফেরদৌসী রহমানসহ আরও অনেক সংগীতশিল্পী ছিলেন। পাশাপাশি আমাদের লোকসংগীতের বিশ্বমানের গায়ক আব্দুল আলীম, আব্বাসউদ্দীন আহমদ, হরলাল রায় আর পাকিস্তানের সুকণ্ঠী গায়িকা নুরজাহান আমাদের সংগীতের শ্রুতিকে মুগ্ধ করে রাখতেন। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি কিন্তু আমরা মেহেদী হাসান, আবিদ ওয়ালী মোহাম্মদের গানের ভক্ত। আর উচ্চাঙ্গসংগীতের তো কথাই নেই। নাজাকাত-সালামাত দুই ভাইয়ের সংগীতেরও আমরা ভক্ত ছিলাম।
সেই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনেতা-অভিনেত্রী, সুরকার, গায়ক ছাড়াও ছিলেন বোম্বের দিলীপ কুমার, মীনা কুমারী, বৈজয়ন্তী মালা, নার্গিস, মধুবালাসহ আরও বেশ কিছু শিল্পীর অভিনয় ও সংগীত আমাদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করত। সেই সঙ্গে হলিউডের ছবির নায়ক-নায়িকারা এবং তখনকার সময়ে পাশ্চাত্য সংগীতেরও মোহনীয় আবেশে আমরা সময় পার করতাম। এর সঙ্গে তুমুল জনপ্রিয় হলো রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলের গান। ফিরোজা বেগম স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার আগেই তাঁর কণ্ঠ আমাদের কাছে বিস্ময়কর। রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী কলিম শরাফী তখন ঢাকায়, তাঁর গান ছাড়াও সুবিনয় রায়, দেবব্রত বিশ্বাস, অশোক তরু, সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানে আমরা জগৎকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। নজরুলপুত্র কাজী সব্যসাচীর আবৃত্তি এমনই মনোমুগ্ধকর যে আমরা বারবার শুনতে চাইতাম।
কলের গান থেকে টেপ ক্যাসেটে রূপান্তরের এক ক্রান্তিকাল এল। আটাত্তর আরপিএম থেকে লং প্লেতে রেকর্ডে স্থানান্তর হয়েছে, রেডিও থেকে যেমন ট্রানজিস্টরে রূপান্তর হতে যাচ্ছে, তেমনি রেকর্ড থেকে ম্যাগনেটিক টেপে দ্রুত রূপান্তরের কাল শুরু হয়েছে। সেই মোহনীয় কালে রাজনীতির একটা রূপান্তর পর্ব চলছিল। আমরা ক্রমাগত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চলছি। হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি আমাদের স্পর্শ করলেও হৃদয়ে তখন একদিকে সংগীতের মেলোডিতে আমরা মোহাচ্ছন্ন, শিল্পীদের কণ্ঠের মিষ্টি সুরের মূর্ছনা, আর অন্যদিকে পাকিস্তানি মিলিটারি জান্তার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এ দেশের মানুষ তখন ভাই ভাই। জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ শুধু নয়, আবিষ্কারের ভাবনায়ও তখন আমরা আচ্ছন্ন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল পাশে থাকলেও জীবনানন্দ দাস তখন আমাদের মুখে মুখে। এর সঙ্গে আছে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, রশীদ চৌধুরীসহ অপরাপর শিল্পীদের ছবি। আমাদের জন্য স্লোগান ছিল—পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।
একদিকে সংগীত, চিত্রকলা, সাহিত্য আমাদের নিত্যসঙ্গী যার সম্প্রসারণ আমাদের চলচ্চিত্রেও ছিল। জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, আলমগীর কবির বিদেশি চলচ্চিত্রের নতুন আঙ্গিক নিয়ে কথা বলেছেন। উর্দু চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমাদের চলচ্চিত্র বিন্দু থেকে বৃত্তে এসে পৌঁছেছে। একেবারেই ভিন্নধর্মী একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন, যার নাম ফখরুল আলম। ভিন্নধারার ‘মানুষ অমানুষ’, ‘জয়বাংলা’, ‘শনিবারের চিঠি’ নামে তিনটি ছবি তিনি পরিচালনা করেছিলেন।
শুধু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নয়, ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন আমাদের রাজনীতির একটি আলোচনার বিষয়। চীন, রাশিয়ার রাজনীতির একটা অনুপ্রবেশ ঘটেছে, আবার কে সঠিক তা নিয়েও দ্বন্দ্ব চলেছে। কমিউনিস্ট শিবির বিভক্ত হয়ে দুই শিবিরেই যথেষ্ট অনুসারী রয়েছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে জেগে উঠছে পূর্ব বাংলার ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ। এর মধ্যেই বসন্ত উৎসব হয়েছে, পয়লা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়েছে, একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরি চলেছে। কিন্তু এই সবকিছুতেই পাকিস্তানি শাসকের বৈরিতা। সবচেয়ে বেশি বৈরিতা ছিল নাটকের প্রতি। নাটকের ওপর সেন্সরশিপের খড়্গ চাপা, সহসা অভিনয় করার সুযোগ মিলত না। একমাত্র করা যেত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে। সেখানেও পুলিশের আড়িপাতা আর ছাত্র আন্দোলনের ওপর নানা ধরনের পুলিশি আক্রমণ। আক্রমণ তো চলেছেই, পাকিস্তানপন্থীরা রাষ্ট্রযন্ত্রের বাইরে তেমন কিছু করতে পারছিল না। ধর্মকে ব্যবহার করার পর্যায় প্রায় শেষের দিকে।
ওই যে প্রথমে বলেছি কলেজে কলের গানের প্রভাবে ছাত্র-যুবা এমনভাবে উদ্বুদ্ধ, তাদের আর ঠেকানো যাচ্ছিল না। এমনি তার শক্তি! গান গাইতে গাইতেই একসময়ে সাবমেশিন গান হাতে তুলে নিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পাশে ছিল নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ এবং সেই সময়ের কালজয়ী সংগীত। যুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতারের গান, নাটক, সাহিত্যের উদ্ধৃতি এসবও অনুপ্রাণিত করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের বাংকারে, রণাঙ্গনে এবং দেশের ভেতরে, যারা হৃৎপিণ্ডে ধারণ করেছিল একেকটা গ্রেনেড। এভাবেই শিল্প, সাহিত্যের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল রাজনীতি-যুদ্ধ।
খুব অল্প সময়ে মাত্র নয় মাসেই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল। সেই কলেজের কলের গানের প্রজন্ম নতুন রাষ্ট্রের মুখোমুখি হয়ে উঠল। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মাথায় সেই গানের জায়গা দখল করল এক অদ্ভুত আঁধার। মেশিনগান হয়ে দাঁড়াল রাজনীতির প্রকাশমান এক বড় অস্ত্র। সেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবার সংগীত খুঁজতে লাগল, কেউ কেউ সাহিত্য খুঁজল। যার ফলাফলে সুদীর্ঘ পনেরো বছর পরে অস্ত্র নামল বটে, কিন্তু নতুন প্রজন্ম তৈরি হলো না। তাদের অভিজ্ঞতায় নজরুল, রবীন্দ্রনাথের বদলে চলে এল জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধগামী এক জান্তা, তারা কলের গান শোনে না। পরবর্তী প্রযুক্তির রূপান্তরের ফলে এক অদ্ভুত সংগীত শোনে তারা। তাদের দেখে দেখে এই নবজাতক তাদের শৈশব কাটিয়ে কৈশোরে এবং যৌবনে পদার্পণ করে তারাও আইডল খুঁজে পায় না। বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানো কোনো রাজনৈতিক চরিত্রকে দেখতে পাওয়া যায় না। ফলে অদ্ভুত আঁধার আরও ঘনীভূত হয়।
ষাটের দশকে যারা গান শুনতে দিতে চায়নি, সেই শক্তি ধীরে ধীরে পুনর্জীবিত হতে শুরু করে। এই নবপ্রজন্মের সংঘবদ্ধ গান শোনাটা একসময় বন্ধ হয়ে যায়, শিল্পচর্চা হয়ে পড়ে একান্ত ব্যক্তিগত। আর প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে নতুন প্রজন্ম ক্রমাগতভাবে নিমজ্জিত হয় একান্ত ব্যক্তিগত এক অদ্ভুত জীবনাচরণে। গণমাধ্যম খুব দায়িত্ব নিয়ে শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির সুসমন্বয় ঘটাতে পারেনি। কখনো রাজনীতির বা ক্ষমতা শক্তিশালী হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে অর্থ-টাকা। অর্থনীতিবিদেরা তাঁদের মানবিক বিজ্ঞান ভুলে যান, ধনবিজ্ঞানীরা সুকৌশলে সেই জায়গা দখল করে। তাই ধনবিজ্ঞানের এক উল্টোপথে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ।
একসময় পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত অর্থনীতিবিদেরাও রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। সাহিত্যের প্রতি ছিল তাঁদের প্রবল ঝোঁক। সংস্কৃতিকে মনে করতেন রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যার একটা বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন একদা মওলানা ভাসানী, তিনি মজলুম জনতার নেতা ছিলেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে তিনি একটি সম্মেলন ডেকেছিলেন, তিনি তখন আওয়ামী লীগের সভাপতি। মূলত সম্মেলনটি ছিল ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক। কিন্তু সেখানে সংস্কৃতির একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তোরণগুলো ছিল শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং কিছুটা রাজনৈতিক নেতাদের নামে। সেখানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তখনকার দিনের বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল। নৃত্যশিল্পী এবং কবিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মনে করতেন কবি-সাহিত্যিকেরা আন্দোলনের সঙ্গে যতক্ষণ যুক্ত না হবেন, তত দিন কোনো আন্দোলন সফল হবে না। সেই সম্মেলনেই পাকিস্তানকে তিনি বিদায় জানিয়েছিলেন ‘আসসালামু আলাইকুম’ দিয়ে।
এখন সেই কলের গান নেই। তার জায়গায় এসেছে অত্যন্ত শক্তিশালী আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সংগীতের নানাবিধ যন্ত্র। তারুণ্যের মানসপটে ভাঙা কলের গান যে শক্তি জুগিয়েছিল, আজকের প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে যন্ত্রটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমাদের যৌবনের সূচনাকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্রের গান; যেমন ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই
২২ জুন ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমাদের যৌবনের সূচনাকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্রের গান; যেমন ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই
২২ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমাদের যৌবনের সূচনাকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্রের গান; যেমন ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই
২২ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন আমাদের যৌবনের সূচনাকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান আমাদের প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, শ্যামল মিত্রের গান; যেমন ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই
২২ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫