Ajker Patrika

‘ঢাবির মেডিকেল সেন্টারে ওষুধ মানে প্যারাসিটামল’

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি 
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৪৫
‘ঢাবির মেডিকেল সেন্টারে ওষুধ মানে প্যারাসিটামল’

পরীক্ষার যন্ত্র ঠিক আছে তো ডাক্তার নেই। আবার ডাক্তার আছেন তো যন্ত্র ঠিক নেই। প্রেসক্রিপশন আছে তো ওষুধ নেই। মেডিকেল সেন্টার খোলা আছে তো লোকবল নেই, সংকট আছে বেডেরও। সরেজমিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের এমন দশাই পাওয়া গেছে। নানা ভোগান্তি নিয়ে মুখ খুলেছেন শিক্ষার্থীরাও।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলাম মুকুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একবার চোখের ব্যাপারে এসেছিলাম, তখন এখানের মেশিনটি ঠিক ছিল। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় আমি ফিরে আসি। সবশেষ ১১ জানুয়ারি আবার যাই। তখন আমাকে বলা হয়, “ডাক্তার আছে কিন্তু মেশিন নষ্ট।” এই যদি হয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের অবস্থা, তাহলে আমরা কোথায় যাব?’

সরেজমিন দেখা যায়, ২৪ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টারে বর্তমানে বেড আছে ২০টি। এর মধ্যে ভালো আছে ৫টি। বাকিগুলো ভাঙা অবস্থায়ই জায়গা দখল করে আছে। সেগুলোর আশপাশে সিগারেটের খোসা থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সবই আছে। এমন স্যাঁতসেঁতে জায়গায় মশার উপদ্রবও কম নয়। ভেতরের স্যানিটেশন ব্যবস্থাও নোংরা-অপরিষ্কার। মাস্টারদা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘মেডিকেল সেন্টারে যতটা না প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব, তার চেয়ে বেশি অভাব সেখানকার কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধের। সকাল ১০টার পর প্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট স্যাম্পল সংগ্রহ করে না, দুদিন পরপর এক্স-রে মেশিন নষ্ট হয়। ডাক্তার এমন ওষুধ লিখে দেয়, যেগুলো সেখানে পাওয়া যায় না। আবার রাত ৮টার পর কোনো ওষুধই দেওয়া হয় না।’

ঢাবি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবার মিলে সংখ্যাটা ১ লাখ ৪২ হাজারেরও বেশি। এর বিপরীতে মেডিকেল সেন্টারে ৬ জন খণ্ডকালীনসহ অ্যালোপ্যাথিক বিভাগে মোট চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২৮ জন। আর হোমিওপ্যাথিকে আছেন ৮ জন। হাসপাতালে চোখের ডাক্তার আছের মাত্র একজন। দন্ত বিভাগে দুজন, নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আছেন একজন। যিনি সপ্তাহে মাত্র দুদিন বসেন। তা ছাড়া, ৪টি অ্যাম্বুলেন্সের একটি দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, প্রায়ই ডাক্তাররা দেরি করে আসেন সেন্টারে। আবার আধঘণ্টা আগে চেম্বার ছেড়ে চলে যান বেশির ভাগই। ওষুধের ঘাটতি নিয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সেন্টারে ওষুধ বলতে নাপা এক্সট্রা অথবা প্যারাসিটামল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দামি ওষুধগুলো বাইরে থেকে কিনতে হয়।’

ঢাবি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরে চিকিৎসাকেন্দ্রে (হোমিও ইউনিটসহ) মেডিকেল অফিসার, কর্মচারীদের বেতনসহ মোট ৬ কোটি ৬৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই বরাদ্দের টাকা ব্যবহারের খাত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেক শিক্ষার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তো ঠিকই মোটা অঙ্কের অর্থ দিচ্ছে। খরচের খাত নিয়ে ভালোভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। তাহলে অবস্থা কিছুটা হলেও বদলাতে পারে। দরকার হলে বরাদ্দও বাড়াতে পারে কর্তৃপক্ষ।’

অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাবি সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. হাফেজা জামান নিজের অসুস্থতার কথা বলেন। তিনিসহ একাধিক অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের কেউই এসব নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বে থাকা ঢাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘সেন্টারের কর্মকর্তারা আমাকে রুম বরাদ্দসহ নানা বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আশা করি, আমরা শিগগির এসব সমস্যার সমাধান করতে পারব। প্রয়োজনে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত