Ajker Patrika

বিদ্রোহীর কাছে ধরাশায়ী চার আওয়ামী লীগ প্রার্থী

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০২
Thumbnail image

চতুর্থ দফার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে গত রোববার রাজশাহীর তিন উপজেলার ১৫ ইউপিতে ভোট হয়েছে। এগুলোর মধ্যে পাঁচ ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। পাঁচটির মধ্যে চারটিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী। অন্যটিতে জয় পেয়েছেন বিএনপি-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ ইউপিতে নৌকাডুবির কারণ দলীয় অনৈক্য। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কারণেই তাঁরা পরাজিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় কারও কারও বিরুদ্ধে উঠেছিল নানা অনিয়মের অভিযোগও। ভোটে এসবের প্রভাব পড়েছে। তবে নেতা-কর্মীদের বিভেদের বিষয়টি বড় করে দেখছে আওয়ামী লীগ।

গত রোববার রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ছয় ইউপিতে ভোট হয়। এগুলোর মধ্যে দুটিতে জয় পেয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। নওপাড়ায় হেরেছেন গতবার নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান হওয়া সাইফুল ইসলাম। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল চেয়ারম্যান হয়েই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। অনিয়মের ফলে সদস্যরা তাঁর বিরুদ্ধে এনেছিলেন অনাস্থা প্রস্তাব। নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও দূরত্ব ছিল। তাই এবার ভোটে নেতা-কর্মীরা তাঁর বিপক্ষে কাজ করেছেন। ফলে পাস করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী শফিকুল আলম।

দেলুয়াবাড়িতে হেরেছেন নৌকার প্রার্থী আহসান হাবিব। এই প্রথম তিনি নৌকা নিয়ে ভোটে নেমেছিলেন। হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম রেন্টুর কাছে। রিয়াজুল বর্তমান চেয়ারম্যান। গতবার তিনি নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এখানে নতুন মুখও হেরে যাওয়ার কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন, রিয়াজুল জনপ্রিয়। দলীয় বিভেদের ফলে তিনি মনোনয়ন পাননি। তারপরও নেতা-কর্মীদের একটা অংশ রিয়াজুলের পক্ষে কাজ করেছে। আর এতেই ডুবে গেছে নৌকা।

চারঘাটের চার ইউপির মধ্যে দুটিতে হেরেছে নৌকা। এগুলোর মধ্যে ইউসুফপুরে হেরেছেন শফিউল আলম রতন। গতবার তিনি নৌকা নিয়েই চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এবার বড় ব্যবধানে পাস করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আরিফুল ইসলাম মাখন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা আরিফুলের পক্ষে কাজ করেছেন। আর এতে সমর্থন ছিল প্রভাবশালী এক নেতার। শফিউল গতবার চেয়ারম্যান হওয়ার পর নানা অনিয়ম করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কার্ড ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

চারঘাটের নিমপাড়ায় নৌকা ডুবিয়েছেন মো. মনিরুজ্জামান। গতবার তিনি নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা জানাচ্ছেন, মনিরুজ্জামান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হলেও তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে বিতর্ক আছে।

এখানে এবার নৌকা চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন তুলেছিলেন দুই যুবলীগ নেতা। শেষ দিনে তাঁদের দুজনকেই বাড়ি থেকে তুলে এনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানো হয়। এর মধ্যে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজন আলীর জনপ্রিয়তা ছিল। স্থানীয়রা বলছেন, তাঁরা নির্বাচন থেকে সরে গেলেও ক্ষোভে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। দলের নেতা-কর্মীদের এই বিভেদে জয় পেয়ে গেছেন বিএনপি-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান।

বাঘার তিন ইউপির মধ্যে বাউসায় নৌকা ডুবে গেছে। চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী অধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ তুফান। তিনি জেলা পরিষদের সদস্য। ভোটের প্রচার শুরুর পর নূর মোহাম্মদের বাড়িতে হামলা হয়। তখন পুলিশ নূর মোহাম্মদকে থানায় মামলা করার জন্য ডাকে। তিনি থানায় গেলেই আটকে দেওয়া হয়। এরপর বাড়ির সামনে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের মারধরের অভিযোগে উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এখন তিনি কারাগারে। তাই প্রচারে অংশ নিতে পারেননি। তবু নৌকা প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন, এবারের পরাজিত নৌকার প্রার্থী শফিকুর রহমান শফিক গতবার নৌকা নিয়ে চেয়ারম্যান হন। তারপর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে দেন। গ্রামে গ্রামে তাঁর একজন করে ‘নিজস্ব লোক’ ছিলেন। তাঁদের মাধ্যমে সব কাজ করতেন তিনি। মূল্যায়ন করতেন না দলীয় নেতা-কর্মীদের। তাই নেতা-কর্মীদের বড় অংশ তাঁর পক্ষে না থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী তুফানের পক্ষে কাজ করেছে।

পাঁচ ইউপিতে নৌকাডুবির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্য ছিল না। ঐক্য থাকলে নৌকা পাস করত। অনৈক্যের কারণে নৌকা ফেল করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত