Ajker Patrika

মাছের ঘেরে ‘আউট ড্রেন’ রাখার সুপারিশ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ১২: ৫৮
মাছের ঘেরে ‘আউট ড্রেন’ রাখার সুপারিশ

‘উপকূলীয় মৎস্যঘের অধ্যুষিত জেলাগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়ন টেকসই করতে আউট ড্রেন নির্মাণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। আউট ড্রেন না রেখে গ্রামীণ রাস্তাকে ঘেরের বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করায় তা দ্রুত ভেঙে চলে যাচ্ছে ঘেরের মধ্যে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর বেড়িবাঁধও। নির্ধারিত স্থান দিয়ে নদীর পানি তুলে আউট ড্রেনের মাধ্যমে ঘেরে নেওয়ার প্রবণতা কমেছে। উল্টো ইচ্ছামতো যত্রতত্র নাইন্টি পাইপ বসিয়ে নদীর পানি উত্তোলনে বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।

এতে জরাজীর্ণ হয়ে পড়া বেড়িবাঁধ সামান্য জলোচ্ছ্বাসের চাপে বিলীন হয়ে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ফলে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও নদীর বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকারের ব্যয় করা হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে পানিতে। একই সঙ্গে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। লবণাক্ত পানি চুঁইয়ে আসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য। তাই তৃণমূলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন টেকসইকরণে ঘেরে আউট ড্রেন নির্মাণের বিকল্প নেই।’

‘উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরে আউট ড্রেনের প্রভাব অনুসন্ধান’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি আয়োজিত এক সংলাপে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সংলাপে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফ্রিল্যান্স গবেষক তানজির কচি।

গবেষণার ফলাফলে আরও বলা হয়, উপকূলীয় এলাকায় ঘেরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়ি চাষ শুরুর পর থেকে নদীর লবণ পানি উত্তোলনের জন্য প্রাথমিকভাবে আউট ড্রেন করা হতো। কিন্তু ঘেরের সংখ্যা বেশি ও আয়তনে দিন দিন ছোট হওয়ার কারণে আউট ড্রেনের সংখ্যা দিন দিন কমছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার মতো অন্যান্য উপজেলায়ও আউট ড্রেন না রেখেই ঘেরের আওতা সম্প্রসারিত হয়েছে। এতে গ্রামীণ সড়ক অল্প দিনেই ধসে ঘেরের মধ্যে পড়ছে। আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে নদীর বেড়িবাঁধ। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে গ্রামের পর গ্রাম। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষিজমিতে ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কাঁচা বাড়িঘর ধসে পড়ছে। এ ছাড়া ঘেরের পানি পরিবর্তনের প্রয়োজনে হলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ঘের মালিকদের।

এ ক্ষেত্রে ঘের অধ্যুষিত এলাকায় বহুমাত্রিক ব্যবহারের কারণে আউট ড্রেনের গুরুত্ব অপরিসীম। যা একই সঙ্গে উপকূলীয় এলাকার নদীর বেড়িবাঁধ ও গ্রামীণ সড়কের সুরক্ষা, পানি নিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ঘেরের পানি পরিবর্তনে সহায়ক, কৃষি জমি রক্ষা, রাস্তার ধোয়ানি রোধসহ নানামুখী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

গবেষণায় সর্বত্র ঘেরে আউট ড্রেন বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৎস্য অধিদপ্তর ও কৃষি অধিদপ্তরের সমন্বয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, বিনা শর্তে উপকূলীয় ঘের অধ্যুষিত জেলাগুলোতে পূর্বের ন্যায় ৪০ দিনের কর্মসূচি তথা অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রবর্তন, ঘেরে আউট ড্রেন বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সরাসরি সম্পৃক্তকরণ, নদীর বেড়িবাঁধ বা গ্রামীণ সড়ক ঘেরের বেড়ি হিসেবে ব্যবহার করলে শুধু লাইসেন্সই বাতিল নয়, জেল জরিমানার বিধান প্রয়োগ, ঘেরে আউট ড্রেন বাস্তবায়নে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য এর উপকারী দিকসমূহ তুলে ধরে নিয়মিত প্রচার প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

সংলাপে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত