Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

আগের সিনেমার মতো গান এখন মুখ্য নয় তাই মানুষের মনে বেশি দিন থাকে না

আগের সিনেমার মতো গান এখন মুখ্য নয় তাই মানুষের মনে বেশি দিন থাকে না

আজ সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনের জন্মদিন। অতি সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনে এত এত প্রাণ হারানোর ঘটনায় এবারের জন্মদিনটা উদ্‌যাপন করা হচ্ছে না শিল্পীর। অবশ্য আগেও যে খুব ঘটা করে নিজের জন্মদিন পালন করতেন তিনি, এমনটাও নয়। কেমন ছিল আগের জন্মদিনগুলোর উদ্‌যাপন? অনেক দিন নিয়ম করে আগের মতো গানও গাইছেন না সাবিনা ইয়াসমীন। কারণ কী? এখন যাঁরা গাইছেন, তাঁরাও কি শ্রোতাদের মনের চাহিদা মেটাতে পারছেন? এমন নানা বিষয় নিয়ে সাবিনা ইয়াসমীনের সঙ্গে কথা বলেছেন এম এস রানা

জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা। কী করছেন এবারের জন্মদিনে? 
না, না, কিছুই করছি না। দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে এখন জন্মদিন পালন করার মতো মানসিকতা নেই। এত এত মানুষ মারা গেছে, এত এত ছাত্র মারা গেছে! সব মিলিয়ে মন খারাপ। এর মধ্যে এখন কিছু করতে চাই না। 

আগের জন্মদিনগুলো কীভাবে কাটাতেন?
ছোটবেলায় যেমন সবাই করে, তেমনই করতাম। ওভাবে বলার মতো কিছু নেই।

শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন হয়ে ওঠার পর কীভাবে উদ্‌যাপন করতেন জন্মদিন?
আমি তেমনভাবে কখনোই কিছু করতাম না। খুব ঘরোয়াভাবে, পারিবারিকভাবেই জন্মদিনটা করতাম। আত্মীয়স্বজন, কাছের বন্ধুবান্ধব বা ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে করতাম। ঘটা করে তেমন কিছু করতাম না। আমার নিজেরও ভালো লাগত না। তাই সাধারণত বাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকত এসব আয়োজন। 

অনেক দিন আপনার নতুন গান শুনছি না, গান করছেন না? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?
কোথায় শুনছেন না? নতুন গান কোথায় শোনা যায়, আমাকে একটু সেটা জানতে হবে আগে।

এখন তো গান রিলিজ হয় অনলাইনে, ইউটিউবে। আগে যারা অডিও অ্যালবাম করত, সেসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও অনলাইনেই তাদের গান রিলিজ করছে, ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।

না, আমি ওসব গান করি না। ইউটিউবে বা ফেসবুকে আর কোথায় কোথায় বললেন—এসব জায়গায় আমি গান করি না। আমি সিনেমায় গান করেছি, সিনেমাতেই গান করি। যদি তেমন গান থাকে, যেটা আমার গাইতে ভালো লাগবে, আমার গলায় গানটি ভালো লাগবে, সে রকম গান হলেই আমি গান করি। তবে সে রকম গান এখন খুব কমই হয় বলে আমি মনে করি।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তো গান করা হয় আপনার?
হ্যাঁ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা স্টেজ অনুষ্ঠান হলে আমি গান করি। তবে এখন যে পরিস্থিতি, তাতে তো আর স্টেজ প্রোগ্রাম করা যায় না। আবার আমাদের দেশটা ঠিক হোক, সুন্দর হোক, তখন আবার যদি গান করা যায়।

সর্বশেষ কবে, কার সিনেমায় গান করেছিলেন?
তারিখ তো বলতে পারব না। সোহানুর রহমান সোহানের একটি সিনেমার গান গেয়েছিলাম। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই উনি মারা গেলেন। 

কিছুদিন আগে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলেন, এখন সব ঠিকঠাক আছে তো? আপনি সুস্থ আছেন তো?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, ইনশা আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। অনেক ভালো আছি। 

নতুনদের গান শোনেন?
নতুনদের গান শোনা হয় না। শুনলেও খুব কম। আসলে কোথায় শুনব, ঠিক বুঝতে পারি না। ইউটিউবে যদি পাই, মাঝেমধ্যে শোনা হয়। তবে ইউটিউব দেখার মতো অত সময় তো হয় না আসলে। যদি টেলিভিশনে নতুন শিল্পীদের গান হয় এবং সেটা আমার নজরে পড়ে, তখন মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে শোনা হয়। তবে কে কী মনে করবে আমি জানি না, সব মেয়ের গলাই এক রকম লাগে আমার কাছে, তাই দু-একজন ছাড়া সবাইকে ঠিক চিনতে পারি না কার গান শুনছি। বোঝা যায় না কে গাইছে, এ জন্য শুনতেও মন চায় না।

শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন হিসেবে কি বলতে পারবেন এখন কে ভালো গাইছেন, বা সংগীতে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? 
ওইটা তো আর আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। অনেক দিন ধরেই তো ইন্ডাস্ট্রির ফিউচার যা দেখছি! আর ওই যে বললাম, এখন ঠিক বোঝাই যায় না কে গাইছে। তা ছাড়া, আমি তো গান গাই, আমি সংগীত পরিচালক না, প্রযোজকও না। তবে ভালো সিনেমা হলে, ভালো গান হলে আমার ভালো লাগে। তখন সে গানটা আগ্রহ নিয়ে শুনি। মাঝে ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার গানগুলো শুনেছি, ভালো লেগেছে। কোনালসহ অনেকেই ভালো গেয়েছে। 

একটা সময় প্রচুর গান হতো, জনপ্রিয় হতো। এখনো আপনাদের গাওয়া পুরোনো গানগুলোই মানুষের মনে, শিল্পীদের মুখে মুখে ফেরে। এই যে নতুন গান আগের মতো জনপ্রিয় হচ্ছে না, এর কারণ কী? এই শূন্যতার কারণ কি গীতিকার, সুরকারেরা ভালো গান তৈরি করতে পারছেন না? নাকি শিল্পীরা ভালো গাইতে পারছেন না?
আমাদের সময় তো প্রচুর সিনেমা তৈরি হতো, বিশেষ করে রোমান্টিক সিনেমা, সামাজিক সিনেমা। ওসব সিনেমার জন্য কাহিনির সঙ্গে মিল রেখে সুন্দর সুন্দর গানের প্রয়োজন হতো, মেলোডিয়াস গানের প্রয়োজন হতো। সেই গানগুলো মানুষের মনে জায়গা করে নিত। কিন্তু আমি যত দূর জানি, এখন পুরোপুরি সামাজিক সিনেমা বলতে গেলে খুব একটা হয়ই না। আগের মতো মিষ্টি মিষ্টি প্রেমের গল্প, মিষ্টি মিষ্টি সিনেমা বেশি হয় না। এখন ভিন্নধর্মী সিনেমা হচ্ছে বেশি। তাই আগের মতো মিষ্টি মিষ্টি গানের প্রয়োজন হয় না। এখন নাচসর্বস্ব গান হয়, ভিন্নধর্মী সিনেমা বলে গানগুলোও ভিন্নধর্মী হয়। আগের সিনেমার মতো গানগুলো এখন মুখ্য নয়। আগে গানের দিকেই মানুষের নজর থাকত, কানটা গানের দিকে থাকত। এখন সেটা হয় না বলেই আমার মনে হয়। তাই গানগুলো মানুষের মনে বেশি দিন থাকে না। 

এর প্রভাব তো সংগীত অঙ্গনে পড়ছে। নতুন শিল্পীদেরও ঘুরেফিরে সেই পুরোনো গানই গাইতে হয়। 
হ্যাঁ, বেশির ভাগেরই। আমিও যে স্টেজে গাই, সেই ‘একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’—ওই পুরোনো গানগুলোই মানুষ শুনতে চায়।

আগের যাঁরা সুরকার-গীতিকার, তাঁরা তো গান নিয়েই থাকতেন, গানের সাধনায় মগ্ন থাকতেন। এখন সেই সাধনার জায়গাটা কমে এসেছে কি না? এখন কি ফরমায়েশি গানই বেশি হয়?
গান নিয়ে যাঁরা সাধনা করতেন, তাঁরা শুধু গান নিয়েই থাকতেন। আগে একটার পর একটা হিট সিনেমা হতো, গান হিট হতো, মিউজিক ডিরেক্টরদের কাছেও একটার পর একটা সিনেমার কাজ আসত। ওইটাই তাঁর পেশা, ওইটাই তাঁর নেশা। এখন তো শুধু গান নিয়ে থাকলে সারভাইব করা সম্ভব নয়। কারণ, তখনকার মতো এত এত সিনেমা এখন হয় না, তাই এত এত গানেরও প্রয়োজন হয় না। কাজেই গানের পাশাপাশি বেঁচে থাকার জন্য অন্য কাজও করতে হচ্ছে। তাই আমার মনে হয় না, এখন সাধনা করে গান করার মতো অবস্থা আছে।

আমরা কী তাহলে সংগীত অঙ্গনে শিল্পচর্চায় দিনকে দিন পিছিয়ে পড়ছি?
হ্যাঁ, অনেক অনেক।

এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
ভালো সিনেমা করতে হবে। ভালো গান করতে হবে। শিল্পের চর্চা বাড়াতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত