Ajker Patrika

জনগণ তারেককে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুপযোগী মনে করে

জনগণ তারেককে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুপযোগী মনে করে

আবুল কাসেম ফজলুল হক শিক্ষাবিদ ও সমাজচিন্তক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান সংকট এবং ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।

আজকের পত্রিকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
আবুল কাসেম ফজলুল হক: বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক দিন ধরেই খুব অস্বাভাবিক অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় কোনো নির্বাচন ভালোভাবে হতে পারে না। বিদেশি নানা শক্তিকে আমাদের রাজনীতিতে টেনে আনা হয়। তারা এখানে তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আসে।

এখন যে রাজনীতির ধারা চলছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ভালো-মন্দ মিলিয়ে আওয়ামী লীগই বেশি শক্তিশালী এবং আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকবে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি খুব দুর্বল অবস্থায় চলে গেছে। জাতীয় পার্টির অন্তর্বিরোধ দলের ভবিষ্যতের জন্য শঙ্কা তৈরি করছে। আর বিএনপি যে নেতৃত্ব দ্বারা চলছে, মানে তারেক রহমানের নেতৃত্বে, তাতে সাধারণ জনগণ তাঁকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুপযোগী মনে করে।

এগুলো থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি গুণগত মানের দিকে না গিয়ে এক খারাপ থেকে নতুন আরেক খারাপের দিকে যাচ্ছে।আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসেছে। যদি দলটি কোনো নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে দেশকে জনগণের রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে এবং সর্বজনীন কল্যাণে কাজ করে, তাহলে ভালো করবে। বিএনপি যদি নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারে, তাহলে তাদেরও সম্ভাবনা আছে। আর বামপন্থী ধারার উন্নতির তো কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ভালোর সম্ভাবনা একেবারেই কম দেখা যাচ্ছে।

আমাদের জাতীয়, রাষ্ট্রীয় দুর্বলতার কারণে কোনো দলই সুস্থ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছে না। বাইরের নানা শক্তির চাপ সরকার ও বিরোধী দল সহ্য করে যাচ্ছে। সার্বিক অবস্থার উন্নতির কথা কেউ ভাবছে না। 

আজকের পত্রিকা: এরশাদের পতনের পর দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরেছিল। আমরা সেই ধারা ধরে রাখতে পারলাম না কেন?
ফজলুল হক: জেনারেল এরশাদ তো চরম রাজনৈতিক দুর্বল অবস্থার মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিলেন। তাঁর ক্ষমতায় আসার জন্য কোনো কোনো শক্তি কাজ করেছিল। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আবু মাহমুদ, যিনি বামপন্থী ধারার লোক ছিলেন এবং একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে সব অবস্থায় পজিটিভ ভূমিকা পালন করেছেন। এরশাদের ক্ষমতায় আসার আগে দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক দুর্যোগ চলছিল, সেই অবস্থায় তিনি এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাঁকে একটা লিখিত বক্তব্য দিয়ে বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নিয়ে আপনি ক্ষমতায় এলে সমর্থন পাবেন। আর এরশাদের আসার পেছনে আওয়ামী লীগেরও কিছু ভূমিকা ছিল। তাদের এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এসব বিষয়ে সেই সময়ের পত্রিকায় নিউজ ছাপা হয়েছিল।

কিন্তু এরশাদের মতো একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী সেনাপতি রাজনীতিতে আসতে চান—এ কথাটি সম্পূর্ণ ঠিক না। তবে এর মধ্যে আংশিক সত্য আছে। বাকি আংশিক সত্য হলো, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নীতিহীনতা, আদর্শহীনতা ও কর্মসূচিহীনতার ব্যাপারগুলো ছিল।অনেক আগে থেকে আমাদের রাজনীতি পচে গেছে। এই বাস্তবতার মধ্য দিয়ে ঘটনাগুলো ঘটেছে।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তো ‘এক দফা এক দাবি, এরশাদ তুই কবে যাবি’র বাইরে অন্য কোনো বক্তব্য প্রায় ছিল না। এসব দাবির পেছনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ছিল। এর সঙ্গে বামপন্থী দলগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ছিল। এরশাদের শাসনামলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বামপন্থী দলগুলো জনগণের কাছে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়নি। অবৈধ সরকার ক্ষমতা দখল করে আছে, এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে—এর বাইরে তেমন কোনো বক্তব্য ছিল না। জাতি ও রাষ্ট্র গঠন, জনজীবনের সমস্যা নিয়ে তেমন কোনো বক্তব্য ছিল না। রাজনীতির মধ্যে রাজনীতি নেই; মানে তাদের মধ্যে জাতি ও রাষ্ট্র গঠন নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তা-ভাবনা ছিল না। সেই সময়ে কেউ কেউ পত্রপত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে এবং বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলার চেষ্টা করেছিলেন, বাংলাদেশে একটা বিরাজনীতিকরণ নীতি কার্যকর করা হচ্ছে। এতে দল ও ক্ষমতার লড়াই থাকবে, কিন্তু রাজনীতি থাকবে না।

আশির দশকে নীরাজনীতিকরণ, বিরাজনীতিকরণ এসব শব্দ বেশি ব্যবহৃত হতো। সেই সময়েই আমরা অনুভব করেছি কোন শক্তি, যার পরিচয় আমরা বুঝতে পারি না—এ রকম পশ্চিমা কোনো বৃহৎ শক্তির পরিকল্পনা অনুযায়ী দুর্বল রাষ্ট্রের রাজনীতিকে শেষ করে দেওয়ার একটা চেষ্টা জারি ছিল। বাংলাদেশ সেই ধারায় পড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি—এ দুটি দল জাতি, রাষ্ট্র গড়ে তোলার কোনো লক্ষ্য নিয়ে সেই সময়ে রাজনীতি করেনি। নেতারা ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করেছেন। তাঁরা যে বৈধ উপায়ে সম্পত্তি করেছেন, সেটাও বলা যাবে না। সেই ধারা এখনো চলমান। এরপর এরশাদের পতনের পরে নতুন করে কোনো কিছু গড়ে তোলার রাজনীতি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে বিকশিত হয়নি।

যে নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ এত দিন ক্ষমতায় আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনাই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিকে নেতা হিসেবে দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির মধ্যেও নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোনো নেতা নেই। জাতীয় পার্টি চলছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। তাই কোনো একটি রাজনৈতিক ধারা ভালোর দিকে যাবে, এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলো ভেতর থেকে গড়ে উঠুক। নতুন বক্তব্য নিয়ে প্রতিটি দল নবায়িত হয়ে নতুন জীবন লাভ করুক। তবে বাস্তবে এর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করলেও বর্তমানে তাদের আদর্শের বিচ্যুতি ঘটার কারণ কী?
ফজলুল হক: রাজনৈতিক দলগুলো ৫২ বছর ধরে যেভাবে কাজ করছে, এর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতার লড়াই ছাড়া রাজনীতি নেই। যদি থাকে তা এত সামান্য যে এর কোনো কার্যকারিতা নেই। এরশাদ সেই সময় বলেছিলেন, আমি ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চাই, কিন্তু কাদের হাতে এবং কীভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দেব! যে তিনটি জোট আন্দোলন করছে, তারা জানালে আমি সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এই তিন জোটের রূপরেখায় কিছু ভালো বক্তব্য ছিল। কিন্তু সেই বক্তব্য তো আওয়ামী লীগ, বিএনপি মনেই রাখেনি। সেই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল শুধু এরশাদ সরকারকে উৎখাত করার জন্যই। গোটা দেশ ও জনগণের উপযোগী রাজনীতি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ছিল না। আর বাম দলগুলো তো অনেক আগে থেকে নিজেদের দুর্বলতা থেকে অগ্রসর হতে পারেনি। একটু খারাপ থেকে আরেকটু খারাপ—সেভাবেই চলছে।

বাংলাদেশের নিজস্ব খনিজ সম্পদ আছে, ফসল অনেক ভালো হয়, শ্রমিকেরাও পরিশ্রমী—একটু ন্যায়পরায়ণ সরকার যদি আমরা পেতাম, তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই মাত্র বিশ বছরের মধ্যে অনেক উন্নতির রেকর্ড দেখাতে পারত।

উন্নতি শুধু অবকাঠামোগত হলে তো হবে না। আমাদের শিক্ষা ও বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামোর ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকা অপরিহার্য। সেই কর্মসূচি দিয়ে জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কর্তব্য।সবাই গণতন্ত্রের কথা বলছে, কিন্তু কোনো দলই তো কার্যকরভাবে চিন্তা এবং কাজ করছে না।

আওয়ামী লীগ পরিবারতান্ত্রিক নেতৃত্ব দিয়ে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারবে—এ রকমটা বলা যায় না। পরিবারতান্ত্রিক এবং উত্তরাধিকারভিত্তিক রাজনীতি সম্পূর্ণ গণতন্ত্রবিরোধী। এগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই পাশ্চাত্যের দেশগুলোর গণতন্ত্রের আইডিয়া ও চিন্তাগুলো আসে। এরপর এশিয়া, আফ্রিকাসহ সর্বত্র বিস্তৃত হয়। তবে অন্য দেশে আধিপত্য বিস্তার করার রাজনীতি আমেরিকার মধ্যে পুরো মাত্রায় আছে।

আমরা রাজনীতির চিন্তা হারিয়ে ফেলেছি। আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনের কথা কেউ চিন্তা করে না। রাজনৈতিক দলগুলো কী যে চায়, তা ভাবলে মন বিষণ্ন হয়ে যায়। এখন রাজনীতি করা মানে টাকাপয়সা আয় করার ধান্দা ছাড়া কিছু নয়। এমপি-মন্ত্রীদের আইনগতভাবে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা আছে—এটা অনেক টাকা আয়ের একটা উৎস। এর বাইরে তাঁদের অন্য ব্যবসাও আছে।এখন কীভাবে রাজনৈতিক নেতাদের সংযম, শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যায়—এ রকম চিন্তা ও চেষ্টা তাদের মধ্যে নেই। বুদ্ধিজীবী বলে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা যে ধারায় চিন্তা করছেন, এতে প্রচলিত রাজনীতিকেই পুষ্ট করা হচ্ছে।

আজকের পত্রিকা: বিএনপির রাজনৈতিক কোনো ভবিষ্যৎ আছে কি?
ফজলুল হক: বিএনপি সেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা থেকে ক্ষমতার বাইরে। তারা তো এ সময়ের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়নি। আওয়ামী লীগ অনেক দিন থেকে ক্ষমতায় আছে, আর তাদের ক্ষমতায় থাকা উচিত না—এ রকম বক্তব্য নিয়ে তারা এগোচ্ছে। এই বক্তব্য দিয়ে কি তারা সফল হতে পারে? খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান মামলা-মোকদ্দমায় পড়ে আছেন। তাঁদের অনেক নেতা জেলে আছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তিই তো বিএনপির এখন প্রধান দাবি। বিএনপির জনসমর্থন পেতে হলে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে পরিবারতন্ত্রের বাইরে গিয়ে।

আজকের পত্রিকা: এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী?
ফজলুল হক: আমাদের রাজনীতিতে ভালো চিন্তা, ভালো কাজের দিকে যাওয়ার যেটুকু চর্চা ছিল, একটু একটু করে সেই চর্চা না করে ভুল পথে ক্রমাগত চলতে চলতে এখন রাজনীতির নতুন ধারা সৃষ্টি করার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। নতুন বক্তব্য নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের নতুন ধারার রাজনৈতিক দল গঠন করার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা তারা নিজেরাই শেষ করে দিয়েছে। আর আমাদের দেশে রাজনৈতিক দুর্বলতা অনেক আগে থেকেই আছে। এখন এসব দুর্বলতা জেনে নতুনভাবে রাজনীতি শুরু করা দরকার। সেটাই আমি কামনা করি।

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফজলুল হক: আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

নতুন ওমরাহ ভিসা নীতি ঘোষণা করল সৌদি আরব, কার্যকর আগামী সপ্তাহে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

নতুন ওমরাহ ভিসা নীতি ঘোষণা করল সৌদি আরব, কার্যকর আগামী সপ্তাহে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

নতুন ওমরাহ ভিসা নীতি ঘোষণা করল সৌদি আরব, কার্যকর আগামী সপ্তাহে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

নতুন ওমরাহ ভিসা নীতি ঘোষণা করল সৌদি আরব, কার্যকর আগামী সপ্তাহে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১৬ ডিসেম্বরের পর পুরোনো ও নতুন মোবাইল ফোনের রেজিস্ট্রেশন হবে যেভাবে

১৪ বছরের মেয়ে যেন নির্বিঘ্নে ভিডিও বানাতে পারে, তাই দেশ ছাড়ল ইনফ্লুয়েন্সার পরিবার

ভারতীয় নারী ক্রিকেটারের খেলা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মারুফা

১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি করল ভারত-যুক্তরাষ্ট্র

নতুন ওমরাহ ভিসা নীতি ঘোষণা করল সৌদি আরব, কার্যকর আগামী সপ্তাহে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত