Ajker Patrika

নদীতে বাঁধ, আবাদ ব্যাহত

রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৪৮
নদীতে বাঁধ, আবাদ ব্যাহত

নরসিংদীর রায়পুরায় পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় আশপাশের কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে আশপাশের কয়েক হাজার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ট্রাক মালিক ও ইট ভাটার মালিক অবৈধভাবে নদীর ওপর রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এই রাস্তায় মাটি, ইট, বালি পরিবাহী ট্রাক চলাচল করে। তাঁদের দাবি দ্রুত এই রাস্তা অপসারণ করে নদীর পানি চলাচল স্বাভাবিক করা হোক। এ নিয়ে গত ৬ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক, উপজেলা জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তাঁরা। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, দ্রুতই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ নামাপাড়া থেকে বেলাব উপজেলার ইব্রাহিমপুর পর্যন্ত নদীর মাঝ বরাবর বাঁধ দিয়ে একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ওই পথ দিয়ে মালামালবাহী ট্রাক চলাচল করছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মাহমুদাবাদ নামা পাড়ায় পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর মুখে নদীর মাঝ বরাবর একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ট্রাক ও ইটভাটার মালিকেরা এই রাস্তা নির্মাণ করেছেন। ওই রাস্তায় দীর্ঘদিন ধরে ইট ভাটার জন্য ফসলি জমি থেকে মাটি নেওয়া হয়। তা ছাড়া ইট, বালু পরিবাহী ট্রাক চলাচল করে। বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরির কারণে রায়পুরা এবং বেলাব উপজেলার নদীতীরের কয়েক হাজার ধানের জমি আবাদ ব্যাহত হচ্ছে।

মাহমুদাবাদ নামাপাড়ার ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর নিচের দক্ষিণ পাশ থেকে বেলাব উপজেলার দুলালকান্দি বাজার পর্যন্ত কয়েক হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতার তৈরি হয়। তাই বোরো ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না এসব জমিতে। তাই বিপাকে পড়েছেন এই অঞ্চলের হাজারো কৃষক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হানিফ বলেন, দুই উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হলো ধান চাষ। সেই ধানের চাষ বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ চাই।’

কৃষক জালাল উদ্দীন বলেন, ‘চার থেকে পাঁচ বছর ধরে নদীতে সঠিক পানি প্রবাহ নাই। জলাবদ্ধতার কারণে আমার মত কয়েক হাজার কৃষক চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি প্রায় এক এককর জমিতে ফসল ফলাতে পারছি না।’

রায়পুরার মাহমুদাবাদ নামা পাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি রাস্তা। ছবিটি গতকাল তুলেছেন হারুনুর রশিদনাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক জন কৃষক বলেন, পাশের উপজেলা ভৈরবের আপন নামের এক ব্যবসায়ী আনুমানিক পাঁচ বছর আগে নদের মাটি দিয়ে, তাঁর নদীর পাড়ের জমি ভরাট করেন। দিন দিন ওই মাটি গড়িয়ে গিয়ে ফসলি জমি ও নদীর মুখে পরে পানির প্রবাহ কমিয়ে দেয়। এর সুযোগে নেয় স্থানীয় ট্রাক মালিক বাদল মিয়া, কামাল মিয়া ও ইটভাটার মালিক মোবারক ও তাঁর সহযোগীরা। তিন বছর ধরে তাঁরা রাস্তা তৈরি করে ট্রাকে মালামাল পরিবহন করছেন।

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে ট্রাক মালিক বাদল মিয়া বলেন, ‘সরেজমিন গেলেই বুঝতে পারবেন এখানে আমি একা দোষী নই। নদী ভরাট হওয়ায় বালি আনা-নেওয়া করতাম। এ বছর এখনো শুরু করিনি। অনেকের ক্ষতি করে আমরা ব্যবসা করতে চাই না।’

এ নিয়ে মন্তব্য জানতে ব্যবসায়ী আপনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তাঁর মন্তব্য জানা যায়নি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, এ নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অফিস থেকে একজনকে পাঠানো হয়েছে। অচিরেই সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত