Ajker Patrika

ফেরেনি ৯২, সেরা ইংল্যান্ডই

রানা আব্বাস, মেলবোর্ন থেকে
ফেরেনি ৯২, সেরা ইংল্যান্ডই

ম্যাচজয়ী শটটা বেন স্টোকসের ব্যাট থেকে না এলে চিত্রনাট্যের শেষে বোধ হয় একটু খামতি থেকে যেত। মোহাম্মদ ওয়াসিমের ফুল লেংথের বলটা মিড উইকেটে ঠেলে ১ রান নিয়ে স্টোকস যেন মেলবোর্নের আকাশটা ছুঁতে চাইলেন। তিন বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডের আরেকটি বিশ্বকাপ জয়, এমন উদ্‌যাপন স্টোকসের তো মানায়।

২০১৯ বিশ্বকাপের নায়ক হয়ে অনেক অতৃপ্তি তাঁর ঘুচে যাওয়ার কথা। তবু স্টোকসের মনের কোণে ইডেন গার্ডেনসের সেই দুঃস্মৃতি হয়তো কখনো কখনো ফিরে আসে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল হৃদয়ে এত বড় এক ক্ষত তৈরি করেছে, স্টোকস তাঁর প্রথম আত্মজীবনী ‘অন ফায়ার’-এর শুরুটা করেছেন এভাবে, ‘নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আমার জন্যই বিশ্বকাপ জিততে পারল না ইংল্যান্ড…।’ এখন আর নিজেকে অপরাধী ভাবার কারণ নেই। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। যে ২০ ওভারের বিশ্বকাপে হেরে যাওয়া নিয়ে তাঁর এত দুঃখ, গতকাল উপস্থিত ৮০ হাজার ৪৬২ দর্শকের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) সেটিও আর থাকল না।পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ইংলিশরা দ্বিতীয়বারের মতো ঘরে তুলল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

স্টোকস কেন বড় ম্যাচের খেলোয়াড়, আরেকবার প্রমাণিত হলো মেলবোর্নের এই রঙিন রাতে। টুর্নামেন্টে রানখরায় ভুগছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অপরাজিত ৪২ ছাড়া আর তেমন বলার মতো ইনিংস নেই। নিজের সেরাটা তিনি জমিয়ে রেখেছিলেন তাহলে ফাইনালের জন্য। পাকিস্তানের দেওয়া ১৩৮ রানের লক্ষ্য এমন বড় নয়। কিন্তু পাকিস্তানের ফাস্ট বোলিং আক্রমণ আর লেগ স্পিনার শাদাব খানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইংলিশরা স্বচ্ছন্দে এগোতে পারেননি ১৫ ওভার পর্যন্ত। কঠিন এই সময়ে ইংল্যান্ডকে ম্যাচে রেখেছেন স্টোকস, শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ৫২ রানে।

১৫.১ ওভারে দারুণ বোলিং করা পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি চোটে পড়ে মাঠ ছাড়তেই ইংল্যান্ড যেন ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে গেল, মেলবোর্নের এ রাতটা শুধুই তাদের। চোখের পলকে ম্যাচটি নিজেদের করে নিল ইংলিশরা। শাহিনের অসমাপ্ত ওভার করতে আসা ইফতিখারের বাকি ৫ বলে উঠল ১৩ রান। পরের ওভার করা মোহাম্মদ ওয়াসিম দিলেন ১৬ রান। ব্যস, ম্যাচ শেষ। শাহিন চোটে না পড়লেও যে ইংল্যান্ড জিততে পারত না, এমনটা বলার সুযোগ নেই। ভারতের মতো দলকে উড়িয়ে ফাইনালে ওঠা ইংলিশদের শিরোপা পাওনাই ছিল।

গতকালকের ফাইনালের আগে দুটি বিষয় বারবার সামনে এসেছে। এক. মেলবোর্নের আবহাওয়া; দুই. ১৯৯২ বিশ্বকাপের স্মৃতি। দুটির কোনোটিই ইংলিশদের শিরোপা জয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ম্যাচের আগের রাতে বৃষ্টি হলেও গতকাল বর্ষণের নামগন্ধও নেই। আকাশটা যদিও মেঘলা ছিল। এমন কন্ডিশনে টস জিতে বোলিং বেছে নিতে দুবার ভাবেননি ইংল্যান্ড অধিনায়ক।

এখানেও ’৯২-এর মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন কেউ কেউ। এমসিজিতে ৩০ বছর আগের ফাইনালেও পাকিস্তানই আগে ব্যাটিং করেছিল। কিন্তু গতকাল পাকিস্তান দলের কেউ ইমরান খান-জাভেদ মিয়াঁদাদ কিংবা ইনজামাম হতে পারেননি। তবে বাটলারের চোখে ইংল্যান্ড দলে একজন ‘ওয়াসিম আকরাম’ ছিলেন।

১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালে যে দুর্দান্ত স্পেল করেছিলেন আকরাম, গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে সেটিই করলেন কারেন। ৪ ওভারে ১২ রানে ৩ উইকেট—ফাইনাল রাঙাতে আর কী লাগে! ইংলিশ পেসার পুরো টুর্নামেন্টেই ধারাবাহিক ভালো বোলিংয়ের (৬ ম্যাচে ১৩ উইকেট) পুরস্কার হিসেবে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন। কারেনের সঙ্গে কম যাননি আদিল রশিদ-ক্রিস জর্ডানও। কাল ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান কোনোভাবে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানের একটা স্কোর দাঁড় করায়। এই স্কোর নিয়ে পাকিস্তান লড়াই কিছুটা জমিয়ে তোলার আভাস দিয়েছিল বোলারদের সৌজন্যে। তবে সেটি কোনোভাবেই যথেষ্ট ছিল না জিততে, ম্যাচের পর পাকিস্তান অধিনায়ক তা স্বীকারও করে নিয়েছেন।

পাকিস্তানের ’৯২-এর স্মৃতি ফিরতে দেয়নি ইংল্যান্ড; বরং ৩০ বছর পর আইসিসির আরেকটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে পূর্বসূরিদের হারের ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছে বাটলারদের ইংল্যান্ড—যাদের হাত ধরে গত সাত বছরে সাদা বলের ক্রিকেটে ‘রেনেসাঁ’ হয়েছে ইংলিশদের।নবজাগরণের এই পর্বে তিন বছরের মধ্যে ৫০ আর ২০ ওভারের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে বাটলাররা খেলাটির নতুন এক পথও যেন দেখালেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে কেন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন চাননি সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক করল শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি

ছাত্র-জনতার মিছিলের মুখে পড়েন এক মন্ত্রী

কক্সবাজারে পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের খবর, ‘গুজব’ বললেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত