Ajker Patrika

প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়েই সব স্বপ্ন অদম্য শাহিদার

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ০১
প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়েই সব স্বপ্ন অদম্য শাহিদার

ঝিকরগাছার শিমুলিয়া বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে গতকাল শিশুদের পড়ালেখা শেখান শাহিদা।     আজকের পত্রিকাশাহিদা খাতুন। তাঁর সব স্বপ্ন অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে। তাদের লেখাপড়া শেখাতে নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। শুধু তাই নয়, প্রতিবন্ধী নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তার জন্য গঠন করেছেন ‘সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি’। অটিজম ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে এত সব কাজ করে আসা শাহিদা খাতুন নিজেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে তিনি দমে যাননি।

শুধু বাম হাত নিয়ে জন্ম নেওয়া শাহিদা খাতুন ২০১৫ সালে যশোর সরকারি এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তাঁর স্বপ্ন এলাকার সব অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশুকে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনা এবং প্রতিবন্ধী নারীদের কর্মস্থান করার।

শাহিদা খাতুন ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের পূর্বপাড়ার রফিউদ্দিনের মেয়ে। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ২০২১ সালের শুরুর দিকে নিজ বাড়িতে শাহিদা শিমুলিয়া বিশেষ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে এলাকার প্রতিবন্ধী ১৫-২০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন।

আজ ২ এপ্রিল (শনিবার) বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার হার না মানা শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুনের বিদ্যালয়ে গেলে কথা হয় শিমুলিয়া গ্রামের সাথী খাতুনের সঙ্গে।

প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাথী খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে এমরান হোসেনের বয়স ১২ বছর। সে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ছেলেকে শাহিদার স্কুলে নিয়ে আসি। সে এখন লিখতে পড়তে পারে।’ একই গ্রামের সানচিষকা বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ৯ বছর বয়সের মেয়ে নাইচ বিশ্বাস বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। শাহিদার প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে পড়ে মেয়ে লেখাপড়ায় অনেকটা ভালোর দিকে। আমার মেয়ে অনেক কিছু শিখেছে।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভাপতি ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের সহধর্মিণী জীশান মীর্জা প্রতিবন্ধী শাহিদার বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন।

শাহিদা খাতুন দীর্ঘদিন ধরে চাকরির জন্য চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পরে আকিজ গ্রুপের নওয়াপাড়ার জুটমিলের নির্বাহী ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় শাহিদাকে। জীশান মীর্জা সে দিনের সফরে শাহিদার হাতে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রস্তাবপত্র তুলে দেন। আজ শনিবার থেকে তাঁর চাকরিতে যোগদানের কথা রয়েছে।

শাহিদা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি যেখানে থাকি, আমার বিদ্যালয় চলবে। আমার সব স্বপ্ন এ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও সৃষ্টিশীল নারী প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতিকে ঘিরে। আমি চাই, এলাকার সব অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশু সুস্থধারায় ফিরুক এবং প্রতিবন্ধী নারীদের কর্মস্থান হোক।’

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান সরদার বলেন, ‘শাহিদা নিজে প্রতিবন্ধী হওয়ায় সত্ত্বেও এলাকার প্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের লেখা-পড়া শিখিয়ে যাচ্ছেন, যা প্রশংসার দাবিদার। পাশাপাশি তিনি প্রতিবন্ধী ও অটিজম নারীদের কর্মক্ষম করার চেষ্টা করেছেন। এটা সত্যিই অনুকরণীয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত