Ajker Patrika

মাসে ইমনের আয় তিন লাখ

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
Thumbnail image

রংপুর শহরটি খুব একটা বড় নয়। বিভাগীয় শহর বলে এখন লোকজনের আনাগোনা বেশি হয়েছে বটে, কিন্তু চাইলেই এ পাড়ার মানুষ অন্য পাড়ার মানুষের নাম মনে রাখতে পারে। এমন একটি ছোট্ট শহরে ইমন বেশ হইচই ফেলে দিয়েছেন। তাঁর পুরো নাম তৌফিকুল ইমন। পরিবারের সঙ্গে তিনি থাকেন রংপুরে।

কলেজে ভর্তি হয়েছেন সবেমাত্র। বয়স সতেরো বছর। এরই মধ্যে তিনি প্রতি মাসে আয় করছেন ২ থেকে ৩ হাজার ডলার। টাকায় বদল করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২ থেকে ৩ লাখ! কাজ বেশি বা কম হলে ডলারের অঙ্কটাও ওঠানামা করে। এই বয়সে লাখ টাকা আয় রংপুরের মতো ছোট শহরে ঘটনাই বটে। শুধু কি তাই? মাস ছয়েক আগে তিনি অনিক্সল্যাব নামে খুলেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান। সেখানে কাজ করছেন পাঁচজন।

ইমনের এই সফলতা মাত্র দুই বছরের ঘটনা। ২০২০ সালে তাঁর বাবা অফিশিয়াল কাজের জন্য একটি ল্যাপটপ কেনেন। মাঝে মাঝে সেটি নিয়ে বসতেন ইমন। সেখানেই ইউটিউবে গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ দেখতেন। একসময় ইউটিউব দেখেই শিখে ফেলেন অ্যাডবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর ও ফিগমা নামের ডিজাইন সফটওয়্যার। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে লোগো এবং থাম্বনেইল ডিজাইনে পারদর্শী হওয়ার চেষ্টা করেন ইমন।

ওয়েব ডিজাইন নিয়ে বাংলায় তেমন ইউটিউব ভিডিও নেই। তিনি গুগলের নিজস্ব ডিজাইনারদের কাছ থেকে গুগি ইউএক্স ডিজাইন সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেছেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কাজ করেন ইমন। তবে পড়াশোনার বিন্দুমাত্র বিঘ্ন হতে দেন না তিনি। এ জন্য তিনি পড়াশোনা ও কাজের মধ্যে একটি রুটিন ঠিক করে নিয়েছেন। দিনের বেলা পড়াশোনা আর সন্ধ্যার পর ইমন নিজের পেশাগত কাজ করে থাকেন। তারপরেও দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয় বলে রুটিনে মাঝে মাঝে সমন্বয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জন্য।

ইমন প্রথম ৫০০ টাকা আয় করেন ইউটিউব থাম্বনেইল ডিজাইন করে। এরপর তিনি ওয়েবসাইট ডিজাইন বিষয়ে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। বেশ কিছুদিন এর পেছনে সময় ব্যয় করে বিভিন্ন কিছু শিখে ফেলেন। এ বিষয়গুলো ঘটে বেশ অল্প সময়ে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে।

ইতিমধ্যে ইমন কাজ করেছেন টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে। তাঁর ক্লায়েন্টদের মধ্যে আছেন ব্রিটিশ গায়ক মিস্টার বি দ্য জেন্টেলম্যান রাইমার নামে খ্যাত জিম বার্ক। তিনি তো বলেই দিয়েছেন, ‘তোমার কাজে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ইমন। তাই তুমি থাকতে আমার ওয়েব ডিজাইন নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না।’ ইমনের অন্যতম ক্লায়েন্ট ব্রাজিলের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান অল ব্লকসের সিইও মেরিশস বোসান। মেরিশসের ৪টির বেশি ওয়েবসাইট ডিজাইন ইমনের করা।

ইমনের বেশি আয় করা প্রজেক্ট দুটির মধ্যে একটি অল ব্লকসের ওয়েবসাইট। সেটি ডিজাইন করে তিনি আয় করেন প্রায় ৮ হাজার ডলার। অন্য বড় প্রজেক্টটি ইনফিনিটি ৩ স্টুডিও নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য করা। সেখান থেকে তিনি আয় করেন প্রায় ৬ হাজার ডলার। তবে এখন প্রতিটি প্রজেক্ট থেকে তিনি গড়ে ২ থেকে ৩ ডলার আয় করেন। ইমন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ৫০টির মতো ওয়েবসাইট ডিজাইন করেছে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের মধ্যেই আটকে থাকতে চান না ইমন। নিজের প্রতিষ্ঠান অনিক্সল্যাবকে দেশের অন্যতম সেরা ডিজাইন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চান তিনি। স্বপ্ন আছে, সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে, অনিক্সল্যাবও একদিন তেমন প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত