Ajker Patrika

ঘর পেলেও কষ্ট পথের

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ১৫: ০২
Thumbnail image

চলাচলের সরু রাস্তাটির এক পাশে কাঁটা এবং অন্য পাশে গোবর ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। এতে রাতে তো দূরের কথা, দিনেও চলাচল করা দুষ্কর। থাকার জন্য ঘর পেলেও চলাচলের জন্য এভাবে কষ্ট করতে হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সদস্যদের। শুধু তা-ই নয়, সরকারিভাবে একটি নলকূপ স্থাপন করে দেওয়া হলেও সেটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। এমন দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করা চারটি পরিবারের মধ্যে দুটি ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামে একসঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্পের চারটি ঘর নির্মাণ করা হয়। এরপর এ প্রকল্পে বসবাসকারীদের চলাচলের জন্য ৬ ফুট রাস্তা ও চারটি পরিবারের জন্য একটি নলকূপও স্থাপন করা হয়। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীদের অভিযোগ, পাশের জমির মালিক আব্দুর রাজ্জাক সেই ৬ ফুট রাস্তার সাড়ে ৪ ফুটই বন্ধ করে বাঁশের বেড়া দিয়েছেন। ওই দেড় ফুটেরও কোথাও কাঁটা বিছিয়ে আবার কোথাও গোবর ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।

তবে মো. আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, ‘যে জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, ওইটা আমি ১৪ বছর আগে প্রতিবেশী মো. হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে কিনেছি। আমার কাছে ওই জমির দলিলও আছে। দলিল দেখালেও সরকারের লোকজন তা জোর করে দখলে নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে।’

রাজ্জাক আরও বলেন, ‘জমিটা হাবিবুরের বাবা রজব আলীর নামে বিআরএস রেকর্ড। রজব আলী মারা গেলে তাঁর ছেলে হাবিবুর পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে আমার কাছে সেটা বিক্রি করেন।’ কাগজপত্রের সঠিক যাচাই-বাছাই করে তাঁকে তাঁর জমি ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী মোছা. রহিমা ও ঝরনা খাতুন বলেন, ‘আমরা সরকারি একটা ঘর পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু ঘর থেকে বেরিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তা নেই। যেটুকু আছে সেখানে কোথাও কাঁটা বিছিয়ে আবার কোথাও গোবর ছিটিয়ে রাখা হয়। যেন আমাদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।’

রহিমা আরও জানান, এ ছাড়া সরকার যে টিউবওয়েলটি দিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে সেটা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এখন গোসলসহ দৈনন্দিন কাজের জন্য মানুষের বাড়ি থেকে পানি আনতে হয়। এই দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে দুটি ঘরের বাসিন্দারা আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে চলে গেছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ছেড়ে যাওয়া আরতী রানী চন্দ্র সূত্রধর ও তাঁর স্বামী কাজল চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘একে তো চলাচলের রাস্তার সমস্যা, অন্যদিকে পানির। আমরা দুজন বুড়ো-বুড়ি, মানুষের বাড়ি থেকে পানি আনতে কষ্ট হয়ে যায়। পরে বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে এখন জামাতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টিউবওয়েলের বিষয়টি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল মেরামত করে দেবে। এ ছাড়া বাকি সমস্যাগুলো আমরা সমাধান করে দেব।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল কায়সার তালুকদার বলেন, ‘যখন ওই এলাকায় কাজ করা হয়েছিল, তখন ওই পানির সংকট থাকায় ভালোভাবে কাজ করা যায়নি। এখন নতুন করে আবার টিউবওয়েল করে দেওয়া হবে।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে চলাচলের রাস্তাটি দ্রুত সার্ভেয়ার পাঠিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে নির্ধারিত রাস্তা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া অন্য সমস্যাগুলোও সমাধান করে দেওয়া হবে। আর যিনি এই জমির মালিকানার দাবি করছেন, তাঁকে তাঁর জমির কাগজপত্রসহ ডেকে পাঠানো হবে। তাঁর কাগজপত্র সঠিক থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত