Ajker Patrika

অরক্ষিত ক্রসিংয়ে প্রাণহানি

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৫৩
অরক্ষিত ক্রসিংয়ে প্রাণহানি

নীলফামারীতে রেলওয়ের অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে একের পর এক প্রাণহানি ঘটেছে। গত বুধবার যাত্রীবোঝাই একটি ইজিবাইক দারোয়ানী লেভেল ক্রসিং অতিক্রমের সময় চিলাহাটিগামী আন্তনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ইপিজেডের ৪ নারী শ্রমিক প্রাণ হারান।

অন্যদিকে, জনবল সংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আজকের পত্রিকাকে জানান সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা।

তিনি আরও জানান, রেলওয়ের যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার বা গেটম্যান নেই, সেখানে সতর্কতামূলক নির্দেশনা সংবলিত সাইনবোর্ড দেওয়া রয়েছে। জনবল নিয়োগ হলে এ রেলপথের বৈধ সব লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান দেওয়া হবে।

জানা যায়, চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুরে রেলপথের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৬টি লেভেল ক্রসিং। এর মধ্যে ৩৩টি বৈধ ও ৩টি অঘোষিত লেভেল ক্রসিং। বৈধ ৩৩ টির মধ্যে মাত্র ১২ টিতে আছে ব্যারিয়ার। বাকি ২১টি লেভেল ক্রসিং দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে অরক্ষিত।

সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথের ঢেলাপীর ই-১২৮ লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান মোহাম্মদ আলী মান্না জানান, ‘পার্শ্ববর্তী লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালন করা গেটম্যানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ট্রেন আসার খবর নিয়ে প্রতিবন্ধক বা ব্যারিয়ার দিয়ে ট্রেন পার করতে হয়। গেটম্যান মোবাইল ফোনের কল রিসিভ না করলে, তখন লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন দেখে প্রতিবন্ধক দেওয়ার কাজটি করতে হয়। এ ছাড়া ঘন কুয়াশায় ট্রেনের শব্দ শুনে এবং রাতের বেলা ট্রেনের আলো দেখে কিংবা হুইসেল শুনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেভেল ক্রসিংয়ের এক গেটম্যান জানান, ‘বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যেও অনেক ক্রসিংয়ে নেই কোনো প্রতিবন্ধক। তাই বাধ্য হয়ে গেটম্যানরা নিজ উদ্যোগে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধক তৈরি করে ট্রেন পারাপার নিশ্চিত করেন।’

তিনি আরও জানান, ‘স্টেশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেনের সম্ভাব্য সূচি অনুযায়ী আগেই লেভেল ক্রসিং বন্ধ করতে হয়। এ নিয়ে অনেক সময় পথচারী বা যানবাহন চালকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম শাহ আজকের পত্রিকাকে জানান, উত্তরা ইপিজেডে প্রায় ৩৫ হাজার কর্মচারী কাজ করেন। এর মধ্যে দৈনিক দুইবার রেলপথ অতিক্রম করেন প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান বা প্রতিবন্ধকতা না থাকায় নির্বিঘ্নে ওই সব শ্রমিক বহনকারী গাড়িসহ প্রতিদিন হাজারো যান চলাচল করে। বিষয়টি আমলে নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ইপিজেডসংলগ্ন লেভেল ক্রসিংয়ে জনবল নিয়োগের দাবি জানান তিনি।

রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার আজকের পত্রিকাকে জানান, নিজেদের প্রয়োজনে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি কিংবা স্থানীয়রা লেভেল ক্রসিং সৃষ্টি করছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এভাবে প্রতিনিয়ত অবৈধ গেট তৈরি হলে রাতারাতি সেখানে স্থায়ী কিংবা প্রকল্পের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নয়। অবৈধ লেভেল ক্রসিং যাতে তৈরি না হয় সে জন্য সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। দুর্ঘটনার জন্য লেভেল ক্রসিং পারাপারে মানুষের অসাবধানতাও দায়ী বলে মনে করেন রেলওয়ের এ কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৮ ডিসেম্বরও এ লেভেল ক্রসিংয়ের প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে বউবাজার নামক স্থানে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে রিকশাচালক রেজোয়ান হোসেনের তিন শিশুসন্তানসহ শামীম হোসেন নামে এক যুবক নিহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত