অজয় দাশগুপ্ত
‘বেইলি রোড’ এখন দেশ ও দেশের বাইরের আগুনে পোড়া দগদগে এক খবর। হঠাৎ করে লিপ ইয়ারের রাতে এমন কী ঘটে গেল সেখানে?
খবরে বলা হচ্ছে, সেদিন রাতে বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটি সাততলা। এতে নানা রকম খাবারের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় হয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটি প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ক্রেনের সাহায্যে ভবনের সাততলা ও ছাদে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনতে থাকে।
ভবনটি যেন এক অগ্নিচুল্লি। ওই ভবনে ছিল না কোনো অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা। জরুরি অবস্থায় বের হওয়ারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না।আগুনে পুড়ে যত না মানুষ মারা গেছে, তার চেয়েও বেশি মারা গেছে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে। তৃতীয় তলায় ছিল কাপড়ের দোকান। বাকি সব ছিল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টগুলোয় ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। যে কারণে আগুনের তীব্রতা ছড়িয়েছে ভয়াবহভাবে।
বেইলি রোড রাজধানীর একটি পরিচিত জনপদ। নাটক থিয়েটার অধুনা রেস্তোরাঁর কল্যাণে ব্যাপক পরিচিত এই এলাকার একটি বহুতল ভবনের সতেরো তলায় আমি ছিলাম বেশ কদিন। যে কয়েক দিন ছিলাম, অবাক হয়ে দেখতাম নিচতলা থেকে ওপরের কয়েক তলা অবধি সব দামি রেস্তোরাঁ। এটা দুনিয়ার অন্য কোনো দেশে সম্ভব কি না, বলা মুশকিল।
বহু দেশে বহু নগরীতে শুধু নিচতলায় হোটেল-রেস্তোরাঁ দেখতে পাওয়া যায়। আগুন লাগতেই পারে। অগ্নিদুর্ঘটনা মানুষের অজানা নয়।কিন্তু এই যে আমরা বলছি দেশ এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ নাকি প্রায় সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে—এগুলো যে কতটা অন্তঃসারশূন্য কথা, এ ঘটনা তার বড় প্রমাণ।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার থাকার কারণে পুরো সিঁড়ি ‘অগ্নিচুল্লির’ মতো হয়ে গিয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস এ কথাও বলেছে, তিনবার নোটিশ দেওয়ার পরও ভবনটির কর্তৃপক্ষ তাদের কথা শোনেনি। এমন একটা জীবন-মরণ সমস্যার আদেশ না শোনার পরও তারা সমানে ব্যবসা চালিয়ে গেল কীভাবে? যাঁরা দেশে থাকেন, তাঁদের সবাই জানেন এর উত্তর। যখনই কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তার পরপর এসব কথা শুনতে হয়। শুনলে হয়তো মানুষের ভালো লাগে এবং তারা আরও একবার মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। আমরা একে বলি ‘ট্র্যাজেডি’। খুনের নাম ‘ট্র্যাজেডি’ হয় কীভাবে? এ তো পরিকল্পিত ঠান্ডা মাথায় খুন! ঢাকায় আগুনে মৃত্যু নতুন কিছু নয়। এর চেয়ে ভয়াবহ অনেক অগ্নিকাণ্ড দেখেছে মানুষ। ভবন ধসে পড়া, ভবন ভেঙে অপমৃত্যু—কিছুই বাদ যায়নি। প্রতিবার আশা, আশ্বাস আর সহানুভূতির তোড়ে ভেসে গেছে ন্যায্যবিচার।
এবারও দেখছি তড়িঘড়ি করে সংশ্লিষ্টরা যার যার দায়দায়িত্ব অস্বীকার করে সরে পড়তে ব্যস্ত। যাঁরা বলছেন তদন্ত হবে, তাঁরা খুব ভালো করে জানেন, তদন্ত রিপোর্ট বের হতে হতে ঘটনা ঠান্ডা হয়ে যায়। জনগণের আবেগ থিতিয়ে আসে। তখন কে শাস্তি পেল আর কে হেলিকপ্টারে চড়ে রানা প্লাজার খুনির মতো উড়ে বেড়াল, কেউ মনে রাখে না।
সাংবাদিক, প্রবাসী, সরকারি দলের নেতা, সাধারণ মানুষ সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। বিপদ বা সর্বনাশ চেহারা, পদ, পদবি দেখে আসে না। তার কাজ সবাইকে আক্রমণ করা। সে কারণেই এসব বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। কেউ বলছেন না যে এটুকু একটা শহরে এত বড় জনগোষ্ঠীর বসবাস অসম্ভব একটা বিষয়।
সে অসম্ভব-অস্বাভাবিকতা মেনে চলছে দুই কোটি মানুষ। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নগর বিস্তৃতি বা ঢাকার এক্সটেনশন এখন জরুরি। কিন্তু কেউ চায় না মূল শহর ফেলে দূরে গিয়ে কাজ করতে। থাকতে তো চায়ই না।
এই চাওয়াকে বাধ্যতামূলক করে তুলতে পারে সরকার। নইলে জনচাপে আর অনিয়মের জাঁতাকলে এভাবেই প্রাণ হারাবে মানুষ।সময়মতো রুখে না দাঁড়ানো আর কর্তব্যে অবহেলায় বেইলি রোড কাঁদছে। এই কান্না যেন এর বেশি এগোতে না পারে।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
‘বেইলি রোড’ এখন দেশ ও দেশের বাইরের আগুনে পোড়া দগদগে এক খবর। হঠাৎ করে লিপ ইয়ারের রাতে এমন কী ঘটে গেল সেখানে?
খবরে বলা হচ্ছে, সেদিন রাতে বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটি সাততলা। এতে নানা রকম খাবারের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় হয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটি প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ক্রেনের সাহায্যে ভবনের সাততলা ও ছাদে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনতে থাকে।
ভবনটি যেন এক অগ্নিচুল্লি। ওই ভবনে ছিল না কোনো অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা। জরুরি অবস্থায় বের হওয়ারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না।আগুনে পুড়ে যত না মানুষ মারা গেছে, তার চেয়েও বেশি মারা গেছে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে। তৃতীয় তলায় ছিল কাপড়ের দোকান। বাকি সব ছিল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টগুলোয় ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। যে কারণে আগুনের তীব্রতা ছড়িয়েছে ভয়াবহভাবে।
বেইলি রোড রাজধানীর একটি পরিচিত জনপদ। নাটক থিয়েটার অধুনা রেস্তোরাঁর কল্যাণে ব্যাপক পরিচিত এই এলাকার একটি বহুতল ভবনের সতেরো তলায় আমি ছিলাম বেশ কদিন। যে কয়েক দিন ছিলাম, অবাক হয়ে দেখতাম নিচতলা থেকে ওপরের কয়েক তলা অবধি সব দামি রেস্তোরাঁ। এটা দুনিয়ার অন্য কোনো দেশে সম্ভব কি না, বলা মুশকিল।
বহু দেশে বহু নগরীতে শুধু নিচতলায় হোটেল-রেস্তোরাঁ দেখতে পাওয়া যায়। আগুন লাগতেই পারে। অগ্নিদুর্ঘটনা মানুষের অজানা নয়।কিন্তু এই যে আমরা বলছি দেশ এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ নাকি প্রায় সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে—এগুলো যে কতটা অন্তঃসারশূন্য কথা, এ ঘটনা তার বড় প্রমাণ।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার থাকার কারণে পুরো সিঁড়ি ‘অগ্নিচুল্লির’ মতো হয়ে গিয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস এ কথাও বলেছে, তিনবার নোটিশ দেওয়ার পরও ভবনটির কর্তৃপক্ষ তাদের কথা শোনেনি। এমন একটা জীবন-মরণ সমস্যার আদেশ না শোনার পরও তারা সমানে ব্যবসা চালিয়ে গেল কীভাবে? যাঁরা দেশে থাকেন, তাঁদের সবাই জানেন এর উত্তর। যখনই কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তার পরপর এসব কথা শুনতে হয়। শুনলে হয়তো মানুষের ভালো লাগে এবং তারা আরও একবার মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। আমরা একে বলি ‘ট্র্যাজেডি’। খুনের নাম ‘ট্র্যাজেডি’ হয় কীভাবে? এ তো পরিকল্পিত ঠান্ডা মাথায় খুন! ঢাকায় আগুনে মৃত্যু নতুন কিছু নয়। এর চেয়ে ভয়াবহ অনেক অগ্নিকাণ্ড দেখেছে মানুষ। ভবন ধসে পড়া, ভবন ভেঙে অপমৃত্যু—কিছুই বাদ যায়নি। প্রতিবার আশা, আশ্বাস আর সহানুভূতির তোড়ে ভেসে গেছে ন্যায্যবিচার।
এবারও দেখছি তড়িঘড়ি করে সংশ্লিষ্টরা যার যার দায়দায়িত্ব অস্বীকার করে সরে পড়তে ব্যস্ত। যাঁরা বলছেন তদন্ত হবে, তাঁরা খুব ভালো করে জানেন, তদন্ত রিপোর্ট বের হতে হতে ঘটনা ঠান্ডা হয়ে যায়। জনগণের আবেগ থিতিয়ে আসে। তখন কে শাস্তি পেল আর কে হেলিকপ্টারে চড়ে রানা প্লাজার খুনির মতো উড়ে বেড়াল, কেউ মনে রাখে না।
সাংবাদিক, প্রবাসী, সরকারি দলের নেতা, সাধারণ মানুষ সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। বিপদ বা সর্বনাশ চেহারা, পদ, পদবি দেখে আসে না। তার কাজ সবাইকে আক্রমণ করা। সে কারণেই এসব বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। কেউ বলছেন না যে এটুকু একটা শহরে এত বড় জনগোষ্ঠীর বসবাস অসম্ভব একটা বিষয়।
সে অসম্ভব-অস্বাভাবিকতা মেনে চলছে দুই কোটি মানুষ। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নগর বিস্তৃতি বা ঢাকার এক্সটেনশন এখন জরুরি। কিন্তু কেউ চায় না মূল শহর ফেলে দূরে গিয়ে কাজ করতে। থাকতে তো চায়ই না।
এই চাওয়াকে বাধ্যতামূলক করে তুলতে পারে সরকার। নইলে জনচাপে আর অনিয়মের জাঁতাকলে এভাবেই প্রাণ হারাবে মানুষ।সময়মতো রুখে না দাঁড়ানো আর কর্তব্যে অবহেলায় বেইলি রোড কাঁদছে। এই কান্না যেন এর বেশি এগোতে না পারে।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫