Ajker Patrika

৫ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না আলু

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৪৬
৫ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না আলু

মুন্সিগঞ্জের হিমাগারগুলোতে এখনো প্রচুর পরিমাণ পুরোনো আলু মজুত রয়েছে। নতুন আলু বাজারে উঠতে শুরু করায় দিন দিন কমছে এসব আলুর চাহিদা। ৫ টাকা কেজিদরেও হিমাগারে আলু বিক্রি হচ্ছে না। এতে ব্যাপক লোকসানের মুখে কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকেরা।

হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছেন, আলুর ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা না থাকায় আলুর দাম পড়ে গেছে। বর্তমানে ৪-৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬-৭ টাকা। এক বস্তা (৫০ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায়। অথচ হিমাগার ভাড়া ৩০০ টাকা। আলুর বস্তা বিক্রি করে হিমাগারের ভাড়ার টাকা উঠছে না। আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা হিমাগারে আলু বিক্রি করতে আসছেন না। আলুতে গাছ গজাতে শুরু করেছে। বস্তায়ও পচন ধরেছে।

গতকাল মঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলার ৭-৮টি হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হিমাগারের ভেতরে ও পাশে পচা আলুর স্তূপ। হিমাগারগুলো থেকে বর্তমানে যে আলু বের করা হচ্ছে তার মধ্যে লম্বা শিকড় গজিয়েছে। দীর্ঘদিন হিমাগারে আলু সংরক্ষণের কারণে কিছু বস্তায় পচন ধরেছে। তবে খুচরা বাজারে পুরোনো আলুর দাম এখনো ১০ থেকে ১২ টাকা এবং নতুন আলুর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৬৪টি হিমাগারে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৬০২ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে এখনো ৪২ হাজার টন আলু অবিক্রীত রয়েছে। গত বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ টন। এর মধ্যে কৃষকেরা সাড়ে ৫ লাখ টন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জামিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। টানা বৃষ্টির কারণে ৩৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জামিতে কম আবাদ হয়েছে আলু। এবার মৌসুমের শুরুর দুই সপ্তাহ ধরে ১৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছিল। তবে টানা বৃষ্টিতে জেলার ৬ উপজেলায় ১৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে রোপণ করা বীজ পানিতে তলিয়ে গেছে। রোপণের জন্য প্রস্তুত জমিও নষ্ট হয়ে গেছে। এতে হেক্টরপ্রতি আলুর বীজ রোপণে খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা। এর মধ্যে জমি প্রস্তুত, সার, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ রয়েছে। সে হিসাবে মোট ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে ১৫৫ কোটি টাকা।

সিরাজদিখানের আলু ব্যবসায়ী সেলিনা রোজ বলেন, ‘আমার ৬০০ বস্তা আলু এখনো হিমাগারে মজুত রয়েছে। এই আলুগুলো ৮০০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি) দরে কিনেছি। এখন ২৫০ টাকা দরেও বিক্রি করতে পারছি না। আর কয়েক দিন গেলে আলুগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ হবে না।’

উপজেলার গোবরদী গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম জানান, হিমাগারে তার ১০ হাজার বস্তা আলু মজুত ছিল। গতকাল পর্যন্ত ৩ হাজার ১০০ বস্তা আলু মজুত আছে। আলুর চাহিদা না থাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে না। আর কয়েক দিন গেলে এই আলুগুলো ফেলে দিতে হবে। এখন বাজারে ২০০-২৫০ টাকা দরে বস্তা বিক্রি হচ্ছে। লাখ লাখ টাকার লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আলুর পাইকারি বিক্রেতা আবদুল হাই দেওয়ান বলেন, ‘আলু কিনে হিমাগারে রেখেছিলাম। এখন কেনার মতো কেউ নেই। তাই নিজের আলু নিজেই আড়তে নিয়ে যাচ্ছি। অর্ধেকের বেশি লোকসানে বিক্রি করছি।’

অপর আলু ব্যবসায়ী আবদুল বাতেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে ৬ থেকে ৭ টাকা কেজি দরে হিমাগার থেকে আলু কিনেছি। তবে এ সপ্তাহে ৪-৫ টাকা কেজি দরে কিনেছি।’

গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক আবদুল ব্যাপারী বলেন, ‘এবারের আলুর যা দাম, তাতে দেখা যায় প্রতি বিঘা জমিতে আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা আলু চাষে লোকসানের মধ্যে আছি। বৃষ্টির কারণে আগাম আলু কম ফলন হয়েছে।’

সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের কাউয়াদি গ্রামের কৃষক আওলাদ মাদবর বলেন, ‘সারের দাম, শ্রমিকের মজুরি, সেচ, সব মিলিয়ে যা খরচ তাঁর চেয়ে আলুর অনেক কম দাম পাচ্ছি আমরা। এবার আলুর উৎপাদন খরচ আর দামের ফারাক মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।’

শীতকালীন সবজির লাগামহীন দাম ছিল কিছুদিন আগে। তখন আলুর চাহিদা বেশি ছিল। ফলে আলুর দামও ছিল। এখন শীতকালীন সবজির দাম অনেকটা নাগালের মধ্যে এসেছে, তাই আলুর চাহিদাও কিছুটা কমেছে।

সিরাজদিখান ফাইভস্টার হিমাগারের সুপারভাইজার মো. হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার বলেন, ‘আমাদের হিমাগারে এখনো ৮ হাজারের বেশি আলুর বস্তা মজুত রয়েছে। এই আলুগুলোর মালিক পাইকার ও কৃষক। চাহিদা না থাকায় বিক্রি হচ্ছে না। অনেক আলুতে অঙ্কুর হয়ে গেছে। সেগুলো আমরা শ্রমিক দিয়ে পরিষ্কার করে রাখছি।’

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সানোয়ারা ও নুর কোল্ডস্টোরেজের সুপারভাইজার ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের হিমাগারে এখনো ১৭ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। এখন আর আলু নিতে হিমাগারে আলু মালিকেরা আসছেন না। আমরা আলু রাখার শর্তে ঋণ দিয়েছিলাম। কিন্তু ঋণের সুদ দূরের কথা, আসল টাকাও পাচ্ছি না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, চাহিদার তুলনায় দেশে ৪০ ভাগ বেশি আলুর উৎপাদন হচ্ছে। করোনার কারণে বিদেশেও রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। আলুর বিকল্প ব্যবহারও হচ্ছে না। ইতিমধ্যে বাজারে নতুন আলু আসতে শুরু করেছে। ফলে পুরোনো আলুর চাহিদা নেই। এর ফলে আলুর দাম পড়ে গেছে।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বৃষ্টিতে এ বছর জেলার আলুচাষিদের ১৫৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এ ক্যাটাগরির বীজগুলো বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা বি ও সি ক্যাটাগরির বীজ দিয়ে আলু চাষ করেছেন। এতে এ বছর উৎপাদন অনেকটা কম হবে। তবে আলুর ভবিষ্যৎ ভালো নয়। তাই লোকসান এড়াতে আলুর পরিবর্তে কৃষকদের অন্য সবজি চাষ করা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফরিদপুর জেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আটক

ধানমন্ডিতে ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে বাসে আগুন

ডিউটিতে ইনচার্জ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করল ডিএমপি

বাগ্‌বিতণ্ডার ভিডিও ভাইরাল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাবি রেজিস্ট্রারকে অপসারণের আলটিমেটাম

দিল্লিতে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণে নিহত ১৩, বহু আহত

এলাকার খবর
Loading...