Ajker Patrika

বোরো ধানের ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ মে ২০২২, ১৫: ৩১
Thumbnail image

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কিষান-কিষানিরা। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। ফলনও হয়েছে এবার ভালো। তবে, সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবারও লোকসানের শঙ্কা কৃষকের। সে কারণে ভালো ফলনেও তাঁদের মুখে হাসি নেই।

উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বলরাম গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জমিতে এবারে বোরো ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তারপরও প্রতি বিঘা জমিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা করে।’

মাইদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে ধান পেয়েছি ২৫ মণ করে। প্রতি মণ ধানের দাম ৬৫০ টাকা। ২৫ মণ ধানের বর্তমান বাজার দাম ১৬ হাজার ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনসহ বাজারজাত করা পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুরুতে বীজ ও বীজতলা তৈরি (চারা) বাবদ ১ হাজার টাকা, জমিতে জৈবসার প্রয়োগে ১ হাজার ২০০, জমি চাষে ৮০০, চারা রোপণের শুরুতে (টিএসপি ও এমওপি) সারে ১ হাজার ১০০, জমিতে চারা রোপণের শ্রমিককে ১ হাজার ৪০০, দুবার নিড়ানিতে ২ হাজার, দুবার কীটনাশক প্রয়োগে ১ হাজার, পানি সেচে ২ হাজার, ধান কাটায় ৫ হাজার, মাড়াইয়ে ১ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ হাট-বাজারে নিতে পরিবহন বাবদ ৫০০ টাকা।’

কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘এক বিঘায় ২৪-২৫ মণ করে বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। বোরো ধানের এ ফলন সন্তোষজনক। তবে দাম কম। বাজারে প্রচুর ধানের আমদানি। কিন্তু চাহিদামতো ক্রেতা ও দাম নেই। ফড়িয়া-মহাজনেরা এখনো ধান কিনতে শুরু করেনি। গুদামজাত করার জন্য শুকনো ধান কিনবে মহাজনেরা।’ তাঁর মতে, এক মণ ধান কমপক্ষে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা হলে পুষিয়ে উঠতেন কৃষক।

স্বপ্নের মোড় গ্রামের কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সারের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বোরো ধানের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ডিজেলসহ অন্য সব সামগ্রীর দামও বেড়েছে। এমনকি ধান রোপণ করা থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত কিষান-মজুরদের মজুরি বেড়েছে অনেক।’

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জমির বোরো ধান কাটতে দিন হাজিরায় কোনো শ্রমিকই পাওয়া যাচ্ছে না। চুক্তি ছাড়া কেউ কাজ করছেন না। চুক্তিতে বিঘাপ্রতি তাঁরা পাঁচ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন। দৈনিক তাঁরা এক হাজার করে টাকা রোজগার করছেন। অথচ ধান চাষ করে যে টাকা খরচ হয়েছে, সেটাই উঠছে না। সার-কীটনাশকের দোকানের বকেয়া পরিশোধ, পারিবারিক ধারদেনা শোধ করা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি।’

ফলগাছা বাজারের ব্যবসায়ী মো. খায়রুজ্জামান মিয়া তারা বলেন, ‘৬৭০-৬৮০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান কিনছি আমরা ব্যাপারীদের কাছ থেকে। তাঁরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আমাদের ধান দিচ্ছেন। আমরা কিনি ৪০ কেজিতে মণ। বিক্রি করি ৪১ কেজিতে। প্রতি মণে বাড়তি দিতে হয় এক কেজি করে। ব্যবসার অবস্থা ভালো না। গতকাল ১৪৪ মণ ধানে ২ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। সে কারণে ব্যবসায় তেমন আগ্রহ নেই।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশেদুল কবির বলেন, ‘কৃষি বিভাগের তদারকি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে, বাজারে নতুন ধানের দাম কম। কিন্তু বড় ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় শুরু করলে এই দরপতন কেটে উঠবে। এ ছাড়া সরকারিভাবেও ধান ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত