Ajker Patrika

২০০ বছরের তমাল ছায়া

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ২৯
২০০ বছরের তমাল ছায়া

জীবনানন্দ দাশ তাঁর বাংলার রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, ‘মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে/এমনি হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ।’ এমনই এক তমালগাছের দেখা পাওয়া যায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নারচী গ্রামে। ২০০ বছরের বেশি সময়ের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে গাছটি।

তমাল একপ্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বনগাব, মহেশকাণ্ড ইত্যাদি নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Mottled Ebony বা Bombay ebony। বৈজ্ঞানিক নাম Diospyros cordifolia। এই গাছের আদিনিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীনে। সুবিশাল আকৃতি আর শীতল ছায়াই নয়, ভেষজ চিকিৎসাসহ নানা ব্যবহারের জন্যও তমালগাছ সুপরিচিত।

বেসরকারি উদ্ভিদ ও কৃষি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বারসিকের গবেষক মো. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এক সময় দেশের প্রায় সব এলাকায় তমালগাছের দেখা মিলত। তবে এখন গাছটি বিলুপ্তপ্রায়। বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ এটি। ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে তমালগাছকে সংরক্ষিত উদ্ভিদের তালিকাভুক্ত করা হয়।

নারচী গ্রামে বাসুদেব মন্দিরের পাশে অনেকটা অযত্ন-অবহেলায় দাঁড়িয়ে আছে তমালগাছটি। এই গাছ ঘিরে রয়েছে নানা কথা-উপকথা। সম্প্রতি নারচী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৬০০ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিশাল পুকুর। সামনে খোলা মাঠ। তার পাশেই দাঁড়িয়ে তমালগাছটি। গাছের শীতল ছায়ায় বসে মন-শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছেন বেশ কয়েকজন মানুষ। সেখানেই কথা হলো বাসুদেব মন্দিরের সেবায়েত রাম চক্রবর্তীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, এই মন্দিরটি ১৭৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কয়েক বছর পরই তমালগাছটির জন্ম বলে পূর্বপুরুষের কাছে তিনি শুনেছেন। সেই হিসেবে মন্দিরটি ২৭১ বছরের পুরোনো, আর গাছটির বয়স ২৫০ বছরের বেশি।

গ্রামের বাসিন্দা শিবনাথ শীল বলেন, ‘আমার বয়স ৭৩ বছর হয়েছে। আমি ছোটবেলা থেকে গাছটিকে এভাবেই দেখছি। এমনকি আমার বাবা-কাকারাও গাছটিকে এমন বিশাল আকারেই দেখেছেন বলে তাঁদের মুখে শুনেছি।’ স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. ছোরহাব হোসেন (৬৮) বলেন, দুই শতাব্দী প্রাচীন এই গাছ দেখতে এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই এই গ্রামে আসেন। মন্দির সেবায়েতের ঠাকুর বিঞ্চু চক্রবর্তী বলেন, এ গাছের পাতা লম্বা-আয়তাকার, যা দেখতে অনেকটা পানপাতার মতো। বিষাক্ত বলে তমালের ফল ও পাতার সংস্পর্শে মানুষ আসতে চায় না।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মুরব্বিদের মুখ থেকে শোনা যায়, এই তমালগাছটির বয়স ২০০ বছর কিংবা তারও বেশি বয়সী। গাছটির আঙিনাজুড়ে প্রতিবছর দোল ও জামাই মেলা হয়। এ মেলাটিও আনুমানিক ১৫০ বছরের পুরোনো। এই তমালগাছটি আমাদের ইউনিয়নের ঐতিহ্য।’

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, তমালের কাণ্ড ঘনকালো গাঁটযুক্ত। এর ছায়া খুব শীতল। ঘিওরের নারচী এলাকায় ২০০ বছরের বেশি বয়সী একটি তমালগাছ রয়েছে। এ রকম বয়স্ক তমালগাছ সচরাচর দেখা যায় না। সে জন্য এর যত্ন নেওয়া দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত