Ajker Patrika

খননের মাটি আবার নদীতেই

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
Thumbnail image

সাতক্ষীরার চারটি উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে বেতনা নদী খননকাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নদী খনন শেষ হওয়ার আগেই ধসে পড়ছে পাড়ের মাটি। তবে তদারকি প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের দাবি, ভৌগোলিক কারণে সাতক্ষীরার মাটি অত্যন্ত দুর্বল বা কম আঠালো। তাই খননের পর পাড় ধসে পড়ছে।

সাতক্ষীরা পাউবো-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার ১, ২ ও ৬ পোল্ডারের পুনর্বাসন ও পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেতনা নদী পুনঃখননের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জুন মাসে। মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ থেকে শুরু হয়ে ১৯ কিলোমিটার নদী খননের কাজ করছে ঢাকার এজেডিএল-এডিএলের (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিন মাস আগে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত গড়ে ৪০-৫০ শতাংশ হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

বেতনা নদী লাগোয়া শাল্যে গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, গত বছরের জুনে বেতনা নদী পুনঃখননে কাজ শুরু হয়েছে। এখনো কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু খনন যেভাবে হচ্ছে তা কোনো কাজে আসবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন এক্সকাভেটর দিয়ে নদীর পলিমাটি উঠিয়ে নদীর পাড়েই রাখছে, যা বৃষ্টি পানিতে ধুয়ে পুনরায় পড়ছে নদীতে। এ ছাড়া অনেক স্থানে পাড় ধসে পড়ছে নদীগর্ভে। তা ছাড়া, বেতনা নদী আগে যে রকম চওড়া ছিল এখন সে রকম হচ্ছে না। খননের পর নদীর প্রস্থ আরও কমে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নদীর অনেক স্থানে অবৈধ স্থাপনা বাদ দিয়ে খননকাজ করা হচ্ছে। এতে যেমন নদী আগের তুলনায় সরু হয়ে গিয়েছে, তেমনি সরকার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বেতনা খনন করছে, তা পূরণ হবে না।

মাছখোলা বাজারের চা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি শাল্যের ব্রিজ হতে সুপারিঘাটা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার খনন করা হচ্ছে না। তাহলে বাকি অংশে খনন করে কী লাভ? নদীর প্রবাহ না থাকলে দুই বছরের মধ্যে বেতনা আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।’

সাতক্ষীরার জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি আনিসুর রহিম জানান, খননের ফলে বেতনা নদী তার আগের চেহারা হারিয়ে ফেলছে। নদীর প্রশস্ততা ও গভীরতা কমে যাচ্ছে।

ঠিকাদার নদীর তলদেশের মাটি কেটে পাড়েই ফেলে উঁচু করে দিচ্ছে। যে কারণে পাড়ের উঁচু মাটি ভারসাম্য রাখতে না পেরে ধসে পড়ছে নদীগর্ভে। এ ছাড়া পাড় উঁচু করে দেওয়ায় দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে নদী অনেক গভীর হয়েছে। কিন্তু আসলে ল্যান্ড সাইডের লেভেল থেকে নদীর গভীরতা সে রকম বাড়েনি। ফলে নদী খননের আসল উদ্দেশ্য কার্যত ব্যাহত হচ্ছে। তিনি জলাবদ্ধ নিরসনে সঠিকভাবে বেতনা খননে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এজেডিএল-এডিএলের (জেভি) স্বত্বাধিকারী মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু প্রকল্পের কাজ বা বেতনা নদী খনন চলমান রয়েছে। খননকাজ শতভাগ শিডিউল অনুযায়ী করা হবে। কাজে যাতে ত্রুটি না হয়, সেদিকটা সর্বোচ্চ খেয়াল করা হবে। প্রকল্প এলাকায় আমার নিয়োজিত লোক রয়েছেন। তাঁদের বলে দেওয়া হবে খননকাজে কোনো ত্রুটি যেন না হয়।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার জানান, বেতনা নদী পুনঃখনন কাজ মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে যেসব এলাকায় খননের পরও পাড় ধসে পড়ছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তা পুনরায় মেরামত করে দিতে হবে। তা ছাড়া ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সাতক্ষীরার মাটি খুবই দুর্বল বা আঠালো কম। যে কারণে পাড়ে শক্ত করে ধরে রাখতে পারছে না মাটি।

বেতনা নদীর ২০ কিলোমিটার খনন না করার বিষয়ে শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, ১৩ কিলোমিটার টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বাকি ৭ কিলোমিটার খননের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করে পাঠানো হবে। প্রকল্প পাস হলে কাজ শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত