মহিউদ্দিন খান মোহন
বাংলাদেশের চার দশক ধরে রাজনীতি যে দুজন রাজনৈতিক নেতাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে তাঁদের একজন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, অন্যজন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত শতাব্দীর আশির দশকের গোড়া থেকে স্বৈরাচারকবলিত বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে তাঁরা দুজন সমান্তরাল নেতৃত্ব দিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে অদ্যাবধি তাঁরাই সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। বর্তমানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী এবং তা টানা তৃতীয় মেয়াদে। অপরদিকে খালেদা জিয়া দুবার পূর্ণ মেয়াদে এবং একবার স্বল্প মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মাঝখানে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতা দখলকারী ফখরুদ্দীন-মইন ইউ আহমেদ সরকার তাঁদের দুজনকে কারারুদ্ধ করে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। তবে এ দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে তা সফল হয়নি। বর্তমানে শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী আর খালেদা জিয়া আদালতের রায়ে দণ্ডিত।
একসময়ের প্রতাপশালী নেতা খালেদা জিয়া আজ একেবারেই ম্রিয়মাণ। তাঁর অবস্থা অনেকটাই অস্তগামী সূর্যের মতো। আলো ছড়ায় ঠিকই, তাতে থাকে না তেজ, থাকে না ঔজ্জ্বল্য। ২০১৮ সালে আদালতের রায়ে কারাগারে যাওয়ার পর দেশবাসীর ধারণা ছিল বিএনপি হয়তো তাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে ব্যাপক কোনো আন্দোলন গড়ে তুলবে। কিন্তু তা হয়নি। সে সময় বিএনপির নেতারা বলেছিলেন, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই নেত্রীকে তাঁরা মুক্ত করে আনবেন। কিন্তু সেটাও তাঁরা পারেননি। জেলখানায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় বিএসএমএমইউর প্রিজন সেলে। পরে করোনা পরিস্থিতিতে পরিবারের আবেদনে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। তার পর থেকে সেভাবেই আছেন তিনি।
প্রায় তিন বছর হতে চলল তাঁর অর্ধমুক্ত জীবনের। এই তিন বছরে মাঝেমধ্যে দলের কয়েকজন নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করলেও তিনি রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো কথা বলেননি, দলকেও কোনো নির্দেশনা দেননি। তাঁর এ নীরবতা জনমনে ঔৎসুক্যের সৃষ্টি করলেও সবাই ধরে নিয়েছিলেন, মুক্তির শর্তে হয়তো তাঁর রাজনীতি না করার বিষয়টি রয়েছে। যে কারণে তিনি সে বিষয়ে কথা বলছেন না। কিন্তু সম্প্রতি আইনমন্ত্রীর উক্তিতে আমরা জানতে পেরেছি, খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির শর্তে রাজনীতি না করার বিষয় নেই। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। একবার নয়, দুইবার তিনি একই কথা বলেছেন। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকও আইনমন্ত্রীর অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। তাঁরা বলেছেন, আদালত কর্তৃক দণ্ডিত বিধায় আইনানুযায়ী খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই। সরকারের মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী এসব মন্তব্য জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে আসলে ঘটনাটি কী? এটা কি সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার প্রতিফলন? আইনমন্ত্রী স্বয়ং একজন আইনজ্ঞ। তিনি নিশ্চয়ই আইনকানুন জেনেবুঝেই কথাটি বলেছেন। আর যদি তিনি ভুল বলে থাকেন, তাহলে তো সরকারপ্রধানের কাছে তাঁর জবাবদিহি করার কথা। সে রকম কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে সমন্বয়হীন বক্তব্য-মন্তব্যের চেয়ে বিষয়টি সম্বন্ধে বিএনপি নেতাদের নিস্পৃহতা-নির্লিপ্ততা সচেতন মহলের মনোযোগ কেড়েছে। এ বিষয়ে দলটির শীর্ষস্থানীয় যে কয়জন নেতার বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে, তাতে অনেকটাই স্পষ্ট যে এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ মুক্তি (জামিন) এবং দলের নেতৃত্বে তাঁর ফিরে আসা বিএনপির কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই তাঁরা বলেছেন, এটা সরকারের একটি কূটচাল, চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরানোর চেষ্টা ইত্যাদি। এ সম্পর্কে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে নিয়ে নাটক শুরু করেছে। তাঁকে নিয়ে এত দরদ উথলে উঠল কেন? সরকার দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তাঁর যখন রাজনীতি করার সময় আসবে তখন করবেন, যেখানেই থাকুন। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথা না ঘামালেও চলবে।’ দলের চেয়ারপারসন সম্পর্কে মহাসচিবের এমন উক্তিতে সংগত কারণেই সচেতন মহলের ভ্রু কুঞ্চিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব চান না খালেদা জিয়া মুক্ত হোন এবং রাজনীতিতে ফিরে আসুন? যেখানে সরকারের মন্ত্রীদের ইতিবাচক মন্তব্যের সূত্র ধরে নেত্রীর মুক্তির দাবিতে তাঁদের অধিকতর সোচ্চার হওয়ার কথা, সেখানে প্রকারান্তরে তাঁরা দেখাচ্ছেন অনীহা। আইনমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা এটা বলতে পারতেন, যদি আইনগতভাবে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না থাকে, তাহলে তাঁকে কেন তা করতে দেওয়া হচ্ছে না? তাঁরা এটাও বলতে পারতেন, সাংবিধানিক ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়া নির্বাচনের অযোগ্য হলেও তাঁর তো রজনীতি করার অধিকার রয়েছে। তাহলে সেই সাংবিধানিক অধিকার থেকে কেন তাঁকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? চাই কি এ ইস্যুতে তাঁরা ‘দুর্বার’ আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করতে পারতেন। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি ও রাজনৈতিক অধিকারের এমন একটি ইস্যু কেন বিএনপি নেতৃত্ব হাতছাড়া করছেন, সে অঙ্ক মেলাতে পারছেন না অনেকেই। মির্জা আলমগীর বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে নিয়ে নাটক করছে। হতে পারে সেটা আংশিক সত্য। কেননা, রাজনীতির দাবা খেলায় যে যখন সুযোগ পাবে, সে তখনই উপযুক্ত ঘুঁটি ব্যবহার করে জুতসই চাল দেবে। সরকার যদি নাটকের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ কৌশলে সামনে এনে থাকে, বিএনপি কেন পাল্টা চাল দিতে পারছে না? বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, সময় হলেই খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন। প্রশ্ন হলো, সে সময়টা কবে আসবে? রুশ সাহিত্যিক লিও তলস্তয় তাঁর গল্প ‘থ্রি কোয়েশ্চেন’-এ বলেছেন, ‘নাউ ইজ দ্য মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট টাইম ফর এ ম্যান টু ডু অ্যানি থিং’, অর্থাৎ ‘কোনো কাজ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো এখন’। হিন্দিতে একটি শের আছে, ‘যো কাল করলে না, ও আজ করলে/যো আজ করলে না, ও আভি করলে/এ জিন্দেগি হ্যায় মুসাফিরখানা, কোই আতা হ্যায় কোই যাতা হ্যায়’, অর্থাৎ যেটা কাল করার কথা ভাবছ, সেটা আজই করো। আর যেটা আজ করবে বলে ভাবছ, তা এখনই করে ফেলো। এর চেয়ে অমোঘ সত্য আর নেই। সময়ের কাজ সময়ে না করলে আখেরে পস্তাতে হয়। আমরা যাঁরা খালেদা জিয়ার অনুরক্ত-ভক্ত, তাঁরা একটি ব্যাপার সবিস্ময়ে লক্ষ করছি, বিএনপির নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতি, ব্যানার-ফেস্টুনে নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আগ্নেয়গিরির লাভা উদ্গিরণ করলেও কার্যকর একটি পদক্ষেপও নেননি। এমনকি শুভানুধ্যায়ীরা তাঁর মুক্তির দাবিতে ‘স্বেচ্ছা কারাবরণ’ কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দিলেও তা গ্রহণ করেননি। দলের চেয়ারপারসনকে মুক্তজীবনে ফিরিয়ে আনার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দলটির বর্তমান নেতৃত্বের এ ব্যর্থতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে, বিএনপি এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি বা নেতৃত্ব নিয়ে ভাবছে না, আগ্রহীও নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ মুহূর্তে খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে নেতৃত্বে এলে বিএনপিতে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কেননা, চেয়ারপারসন সক্রিয় হলে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ পদ আপনাআপনিই অকার্যকর হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে এত দিনের রাজত্ব হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় যদি নেত্রীর মুক্তি কারও কারও কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর সে কারণেই সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, খালেদা জিয়া কি এখনো বিএনপির সম্পদ আছেন, নাকি বোঝায় পরিণত হয়েছেন?
বাংলাদেশের চার দশক ধরে রাজনীতি যে দুজন রাজনৈতিক নেতাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে তাঁদের একজন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, অন্যজন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত শতাব্দীর আশির দশকের গোড়া থেকে স্বৈরাচারকবলিত বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে তাঁরা দুজন সমান্তরাল নেতৃত্ব দিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে অদ্যাবধি তাঁরাই সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। বর্তমানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী এবং তা টানা তৃতীয় মেয়াদে। অপরদিকে খালেদা জিয়া দুবার পূর্ণ মেয়াদে এবং একবার স্বল্প মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মাঝখানে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতা দখলকারী ফখরুদ্দীন-মইন ইউ আহমেদ সরকার তাঁদের দুজনকে কারারুদ্ধ করে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। তবে এ দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে তা সফল হয়নি। বর্তমানে শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী আর খালেদা জিয়া আদালতের রায়ে দণ্ডিত।
একসময়ের প্রতাপশালী নেতা খালেদা জিয়া আজ একেবারেই ম্রিয়মাণ। তাঁর অবস্থা অনেকটাই অস্তগামী সূর্যের মতো। আলো ছড়ায় ঠিকই, তাতে থাকে না তেজ, থাকে না ঔজ্জ্বল্য। ২০১৮ সালে আদালতের রায়ে কারাগারে যাওয়ার পর দেশবাসীর ধারণা ছিল বিএনপি হয়তো তাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে ব্যাপক কোনো আন্দোলন গড়ে তুলবে। কিন্তু তা হয়নি। সে সময় বিএনপির নেতারা বলেছিলেন, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই নেত্রীকে তাঁরা মুক্ত করে আনবেন। কিন্তু সেটাও তাঁরা পারেননি। জেলখানায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় বিএসএমএমইউর প্রিজন সেলে। পরে করোনা পরিস্থিতিতে পরিবারের আবেদনে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। তার পর থেকে সেভাবেই আছেন তিনি।
প্রায় তিন বছর হতে চলল তাঁর অর্ধমুক্ত জীবনের। এই তিন বছরে মাঝেমধ্যে দলের কয়েকজন নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করলেও তিনি রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো কথা বলেননি, দলকেও কোনো নির্দেশনা দেননি। তাঁর এ নীরবতা জনমনে ঔৎসুক্যের সৃষ্টি করলেও সবাই ধরে নিয়েছিলেন, মুক্তির শর্তে হয়তো তাঁর রাজনীতি না করার বিষয়টি রয়েছে। যে কারণে তিনি সে বিষয়ে কথা বলছেন না। কিন্তু সম্প্রতি আইনমন্ত্রীর উক্তিতে আমরা জানতে পেরেছি, খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির শর্তে রাজনীতি না করার বিষয় নেই। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। একবার নয়, দুইবার তিনি একই কথা বলেছেন। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকও আইনমন্ত্রীর অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। তাঁরা বলেছেন, আদালত কর্তৃক দণ্ডিত বিধায় আইনানুযায়ী খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই। সরকারের মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী এসব মন্তব্য জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে আসলে ঘটনাটি কী? এটা কি সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার প্রতিফলন? আইনমন্ত্রী স্বয়ং একজন আইনজ্ঞ। তিনি নিশ্চয়ই আইনকানুন জেনেবুঝেই কথাটি বলেছেন। আর যদি তিনি ভুল বলে থাকেন, তাহলে তো সরকারপ্রধানের কাছে তাঁর জবাবদিহি করার কথা। সে রকম কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে সমন্বয়হীন বক্তব্য-মন্তব্যের চেয়ে বিষয়টি সম্বন্ধে বিএনপি নেতাদের নিস্পৃহতা-নির্লিপ্ততা সচেতন মহলের মনোযোগ কেড়েছে। এ বিষয়ে দলটির শীর্ষস্থানীয় যে কয়জন নেতার বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে, তাতে অনেকটাই স্পষ্ট যে এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার সম্পূর্ণ মুক্তি (জামিন) এবং দলের নেতৃত্বে তাঁর ফিরে আসা বিএনপির কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়। তাই তাঁরা বলেছেন, এটা সরকারের একটি কূটচাল, চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরানোর চেষ্টা ইত্যাদি। এ সম্পর্কে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে নিয়ে নাটক শুরু করেছে। তাঁকে নিয়ে এত দরদ উথলে উঠল কেন? সরকার দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তাঁর যখন রাজনীতি করার সময় আসবে তখন করবেন, যেখানেই থাকুন। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথা না ঘামালেও চলবে।’ দলের চেয়ারপারসন সম্পর্কে মহাসচিবের এমন উক্তিতে সংগত কারণেই সচেতন মহলের ভ্রু কুঞ্চিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব চান না খালেদা জিয়া মুক্ত হোন এবং রাজনীতিতে ফিরে আসুন? যেখানে সরকারের মন্ত্রীদের ইতিবাচক মন্তব্যের সূত্র ধরে নেত্রীর মুক্তির দাবিতে তাঁদের অধিকতর সোচ্চার হওয়ার কথা, সেখানে প্রকারান্তরে তাঁরা দেখাচ্ছেন অনীহা। আইনমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা এটা বলতে পারতেন, যদি আইনগতভাবে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না থাকে, তাহলে তাঁকে কেন তা করতে দেওয়া হচ্ছে না? তাঁরা এটাও বলতে পারতেন, সাংবিধানিক ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়া নির্বাচনের অযোগ্য হলেও তাঁর তো রজনীতি করার অধিকার রয়েছে। তাহলে সেই সাংবিধানিক অধিকার থেকে কেন তাঁকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? চাই কি এ ইস্যুতে তাঁরা ‘দুর্বার’ আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করতে পারতেন। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি ও রাজনৈতিক অধিকারের এমন একটি ইস্যু কেন বিএনপি নেতৃত্ব হাতছাড়া করছেন, সে অঙ্ক মেলাতে পারছেন না অনেকেই। মির্জা আলমগীর বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে নিয়ে নাটক করছে। হতে পারে সেটা আংশিক সত্য। কেননা, রাজনীতির দাবা খেলায় যে যখন সুযোগ পাবে, সে তখনই উপযুক্ত ঘুঁটি ব্যবহার করে জুতসই চাল দেবে। সরকার যদি নাটকের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ কৌশলে সামনে এনে থাকে, বিএনপি কেন পাল্টা চাল দিতে পারছে না? বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, সময় হলেই খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন। প্রশ্ন হলো, সে সময়টা কবে আসবে? রুশ সাহিত্যিক লিও তলস্তয় তাঁর গল্প ‘থ্রি কোয়েশ্চেন’-এ বলেছেন, ‘নাউ ইজ দ্য মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট টাইম ফর এ ম্যান টু ডু অ্যানি থিং’, অর্থাৎ ‘কোনো কাজ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো এখন’। হিন্দিতে একটি শের আছে, ‘যো কাল করলে না, ও আজ করলে/যো আজ করলে না, ও আভি করলে/এ জিন্দেগি হ্যায় মুসাফিরখানা, কোই আতা হ্যায় কোই যাতা হ্যায়’, অর্থাৎ যেটা কাল করার কথা ভাবছ, সেটা আজই করো। আর যেটা আজ করবে বলে ভাবছ, তা এখনই করে ফেলো। এর চেয়ে অমোঘ সত্য আর নেই। সময়ের কাজ সময়ে না করলে আখেরে পস্তাতে হয়। আমরা যাঁরা খালেদা জিয়ার অনুরক্ত-ভক্ত, তাঁরা একটি ব্যাপার সবিস্ময়ে লক্ষ করছি, বিএনপির নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতি, ব্যানার-ফেস্টুনে নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আগ্নেয়গিরির লাভা উদ্গিরণ করলেও কার্যকর একটি পদক্ষেপও নেননি। এমনকি শুভানুধ্যায়ীরা তাঁর মুক্তির দাবিতে ‘স্বেচ্ছা কারাবরণ’ কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দিলেও তা গ্রহণ করেননি। দলের চেয়ারপারসনকে মুক্তজীবনে ফিরিয়ে আনার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দলটির বর্তমান নেতৃত্বের এ ব্যর্থতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে, বিএনপি এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি বা নেতৃত্ব নিয়ে ভাবছে না, আগ্রহীও নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ মুহূর্তে খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে নেতৃত্বে এলে বিএনপিতে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কেননা, চেয়ারপারসন সক্রিয় হলে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ পদ আপনাআপনিই অকার্যকর হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে এত দিনের রাজত্ব হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় যদি নেত্রীর মুক্তি কারও কারও কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর সে কারণেই সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, খালেদা জিয়া কি এখনো বিএনপির সম্পদ আছেন, নাকি বোঝায় পরিণত হয়েছেন?
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫