Ajker Patrika

বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কি ডেকে আনা হলো

ড. মইনুল ইসলাম
বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কি ডেকে আনা হলো

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কারকামী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে সারা দেশের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন-সংগ্রাম বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারী ক্যাডারদের দ্বারা হাইজ্যাক হয়ে ইতিমধ্যেই সরকার উৎখাতের এক দফা সংগ্রামে পর্যবসিত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য দাবি সময়মতো মেনে নেওয়ার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর ‘মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য কোটা রাখবে না তো কি রাজাকারদের নাতি-পুতিদের জন্য কোটা রাখা হবে?’ বক্তব্যটি ছাত্রছাত্রীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। ওই উক্তির পরপরই তারা স্লোগান দিতে শুরু করে, ‘আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার, দেশ বিকানো স্বৈরাচার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়।’ ছাত্রছাত্রীরা কতখানি ক্রোধান্বিত হলে নিজেদের ‘ঘৃণিত রাজাকার’ অভিহিত করতে দ্বিধা করে না, সেটা কি আওয়ামী লীগের অন্ধ-সমর্থকেরা উপলব্ধি করতে পারছেন? মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি পাওয়ার অধিকার সব ছাত্রছাত্রীর ন্যায্য সাংবিধানিক অধিকার, যে অধিকার ২০১৮ সালে বর্তমান সরকারই স্বীকার করে নিয়েছিল। ২০২৪ সালের জুনে হাইকোর্টের রায়ে সেই অধিকার হারাতে বসেছিল তারা। তাই, এই কোটা সংস্কার আন্দোলনে তাদের চাওয়া ছিল খুবই ন্যায্য।

ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলোর ন্যায্যতা অনস্বীকার্য, সেটা ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বীকার করে নিয়ে রায় দিয়েছেন ২১ জুলাই। ওই রায়ে ৯৩ শতাংশ সরকারি চাকরি মেধার ভিত্তিতে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট, বাকি ৭ শতাংশ দেওয়া হবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের কোটার ভিত্তিতে। এখন সারা দেশে কারফিউ ঘোষণা করে বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গিদের সহিংস ধ্বংসাত্মক সরকার পতনের আন্দোলন দমানোর চেষ্টা চলছে। কী প্রচণ্ড ধ্বংসযজ্ঞ সারা দেশে, বেছে বেছে অর্থনীতিকে পঙ্গু করার কী ভয়ানক সন্ত্রাস! জামায়াত-শিবির যে দেশদ্রোহী অপশক্তি, তার অকাট্য প্রমাণ এই ধ্বংসযজ্ঞ।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগ ছেলেমেয়ের আর সরকারি চাকরির জন্য আবেদনের উপযুক্ত বয়স থাকার কথা নয়। এখনো যদি মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কোটা রাখা হয়, সেটা আসলেই ভোগ করবে তাঁদের নাতি-পুতিরা। অতএব ওই কোটা রাখার ভালো যুক্তি থাকতে পারে না, রাখলেও ৫ শতাংশের বেশি কিছুতেই নয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই যৌক্তিক অবস্থানই নেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে আরেকটি কোটা সংস্কার আন্দোলনের তীব্রতার কাছে হার মেনে বর্তমান সরকারই সরকারি আদেশবলে কোটাব্যবস্থা বিলোপ করেছিল, যার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে। ওই মামলার রায়ে কোটা বাতিলের সরকারি আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাদের রায়ে মত প্রকাশ করেছে যে সরকার চাইলে কোটা বাড়াতে-কমাতে পারে, কিন্তু কোটা রাখার জন্য সংবিধানে নির্দেশনা রয়েছে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সরকার ‘লিভ টু আপিল’ মামলা করায় আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়টি এক মাসের জন্য স্থগিত করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অবিলম্বে সংসদে বিল নিয়ে এসে কোটাব্যবস্থা বিলোপে আইন প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলনে অনড় থাকে। ওই পর্যায়েই প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য আগুনে ঘৃতাহুতি দিল। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ে ছাত্রছাত্রীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। দুঃখজনকভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেন আন্দোলনকারীদের মারধর করে মাঠ থেকে বিতাড়নের জন্য। এর বিপরীতে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগকে রুখে দাঁড়ায়। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে লাশের পর লাশ পড়তে শুরু করে। আর সুযোগ বুঝে আন্দোলনকারীদের কাতারে ঢুকে পড়ে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রদল-শিবিরের ক্যাডাররা এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা। ফলে তুমুল গতি-সঞ্চারিত হয় প্রতিরোধ সংগ্রামে, যার পরিণামে ছাত্রলীগ মার খেয়ে মাঠ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। এই সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-শিবির ও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো কোটা আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে এটাকে তাদের সরকার উৎখাতের এক দফার সহিংস সংগ্রামে রূপান্তরিত করার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জ্বালাও-পোড়াও, ঢাকার টেলিভিশন ভবন ভাঙচুর, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর রগকাটা, হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা, দুটো মেট্রোরেল স্টেশন ধ্বংস, ইন্টারনেটের ডেটা সেন্টার ধ্বংস, সাবমেরিন কেব্‌ল কেটে দেওয়া, সেতু মন্ত্রণালয়ের অফিস ভাঙচুর, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাক পোড়ানো, রেললাইন ওপড়ানো, পুলিশকে আক্রমণ, সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস—কোনো কিছুই আর বাকি থাকে না। ফলে কয়েক দিনেই মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি মৃতের সংখ্যা ১৮৭ ছাড়িয়ে যায়। সরকার বাধ্য হয়ে ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা থেকে কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছে, যা এখনো চলছে।

সুপ্রিম কোর্টের ২১ জুলাইয়ের রায় কোটাব্যবস্থার যথাযথ সংস্কারের পথ নির্দেশ করেছে, যার ভিত্তিতে সরকার পরিপত্র জারি করেছে। আশা করি, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এই রায় মেনে নেবে। এসব সত্ত্বেও আশঙ্কা হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রদল-শিবির ও জঙ্গিরা চলমান আন্দোলন সহজে থামতে দেবে না। অর্থনীতি পুরোপুরি থমকে পড়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় ইন্টারনেটনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশের সব কার্যক্রমই অচল হয়ে পড়েছে, যে জন্য বাধ্য হয়ে রবি থেকে মঙ্গলবার ব্যাংকিং সিস্টেমসহ বেশির ভাগ সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার (বুধবার রাত থেকে ইন্টারনেট আংশিক খুলেছে)। কারফিউর কারণে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের পরিকল্পিত সন্ত্রাস কিছুটা থামলেও সরকার কত দ্রুত আবার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করতে পারবে, সেটা বলা কঠিন। অন্যদিকে যে কথাটা জোর দিয়ে বলা প্রয়োজন তা হলো, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ব্যতীত মেট্রোরেল স্টেশনে আগুন লাগিয়ে ভস্মীভূত করা, টেলিভিশন স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া কিংবা সেতু ভবন ভাঙচুর কোনো দেশপ্রেমিক বাঙালির পক্ষে অচিন্তনীয় অপরাধ নয়কি? সরকারবিরোধী আন্দোলনকে যারা এ রকম জাতিদ্রোহী পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, তারা কি বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্য? তাদের কি সর্বোচ্চ শাস্তি পাওনা নয়?

অবশ্য কেউ এটাও বলতে পারেন যে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী গণতন্ত্রকে বরবাদ করে দিয়ে আওয়ামী লীগই এই বিপদ ডেকে এনেছে। ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনকে অসম্ভব করে দেওয়ার পরিণতি হয় গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাত অথবা দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্যকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যেখানে সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। বোঝা প্রয়োজন, ভারত বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। বিএনপি-জামায়াতকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় সহজে আসতে দেবে না তারা। কারণ, তাদের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলোতে ইনসার্জেন্সিকে আশকারা দিতে পারে বিএনপি-জামায়াত। ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। এখন বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও দেশের জনগণের বিরাট অংশের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য নন। বিএনপি-জামায়াতের মতো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবেন না। বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু হয়, যেখানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অবদানের যথাযোগ্য স্বীকৃতি নেই। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন এবং স্বাধীনতাসংগ্রামের কোনো স্বীকৃতি নেই বিএনপির ইতিহাসে। আর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর ঘাতক-দালাল জামায়াতে ইসলামী ও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো এখনো পাকিস্তানকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্নে বিভোর। অতএব ১৫ বছরে অর্জিত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য নস্যাৎ করতে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিরা জাতীয় সম্পদ-ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে মোটেও পিছপা হবে না। তাদের পক্ষেই সম্ভব মেট্রোরেল স্টেশন, টেলিভিশন স্টেশন কিংবা সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ করা।

আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির চলমান ধ্বংসযজ্ঞকে কঠোরভাবে দমন করতেই হবে। কিন্তু অতি-আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বুঝতে হবে মানুষের মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় সম্ভব কি না—আরও যেসব বিষয়ে যুক্তি দিলেন আইনজীবী

নাছোড়বান্দা এক অভিবাসীর পাল্লায় পড়েছে যুক্তরাজ্য

কী কারণে অদৃশ্য হয়ে গেলেন জিম ক্যারি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় সম্ভব কি না—আরও যেসব বিষয়ে যুক্তি দিলেন আইনজীবী

নাছোড়বান্দা এক অভিবাসীর পাল্লায় পড়েছে যুক্তরাজ্য

কী কারণে অদৃশ্য হয়ে গেলেন জিম ক্যারি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় সম্ভব কি না—আরও যেসব বিষয়ে যুক্তি দিলেন আইনজীবী

নাছোড়বান্দা এক অভিবাসীর পাল্লায় পড়েছে যুক্তরাজ্য

কী কারণে অদৃশ্য হয়ে গেলেন জিম ক্যারি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় সম্ভব কি না—আরও যেসব বিষয়ে যুক্তি দিলেন আইনজীবী

নাছোড়বান্দা এক অভিবাসীর পাল্লায় পড়েছে যুক্তরাজ্য

কী কারণে অদৃশ্য হয়ে গেলেন জিম ক্যারি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড: স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, পণ্য খালাস বাড়ছে

আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় সম্ভব কি না—আরও যেসব বিষয়ে যুক্তি দিলেন আইনজীবী

নাছোড়বান্দা এক অভিবাসীর পাল্লায় পড়েছে যুক্তরাজ্য

কী কারণে অদৃশ্য হয়ে গেলেন জিম ক্যারি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত