বাসন্তি সাহা
রূপকথারা রা রা রা রা
চুপকথারা রা রা রা রা
গল্পটা আর কখনো শেষই হয়নি। প্রতি রাতেই আমি জানালার ফাঁক দিয়ে আসা আলোর নকশা দেখতে দেখতে ভাবতাম, ঘর থেকে লেবুতলা কত দূর হতে পারে! প্রতিদিনই এমন হতো।
‘ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি মোদের বাড়ি এসো/ খাট নেই পালঙ্ক নেই চোখ পেতে বসো’ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই একটা ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখের সামনে—ঠাকুরমার একটি হাত আমার গায়ের ওপর আর একটি হাতে হাতপাখা ঘুরছে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে ঘুমে। তিনি আমাকে ঘুম পাড়াচ্ছেন কত রকম গল্প বলে। ঘুমে তার চোখ জড়িয়ে আসছে। আর আমি তাড়া দিতাম, ‘কই বলো! তারপর কী হলো?’
‘ভূত ঘরে বসেই হাত বাড়িয়ে বাগান থেকে লেবু ছিঁড়ে দিল।’ তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন।
ঘুমপাড়ানি গান আজ বাচ্চাদের জীবনের সঙ্গে আর জোড় বেঁধে নেই। বিচ্ছেদ হয়ে গেছে বহু দিন হলো। ঝাপসা আবেগমাখা গলায় ঘুমকে চোখ পেতে বসতে বলার মধ্যে যে মমতা থাকে, আদর থাকে, সেটা পেতে গেলে যে পরিমাণ বোকামি আর কল্পনাশক্তি থাকতে হয়, তা আজ বাচ্চাদের কোথায়? আমরাই তাদের এক ‘রেসিং’ ট্রাকে তুলে দিয়েছি।
তারা আজ বড় বড় বিস্ময়ের পেছনে ছুটছে। তারা আজ জানে চরকাকাটা বুড়ি বলে চাঁদে কেউ থাকে না। রাক্ষস আর ভূত বলে যে কিছু নেই, সেটাও জানে। ইউটিউবে দেখে শেষ করে ফেলেছে ঠাকুরমার ঝুলি। মায়েরা অসহায়, নতুন কোনো গল্প নেই। দাদি-ঠাকুরমাদের গল্প তো চলেই না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। পরদিন সকালে স্কুল, কোচিং, বিকেলে গান, ছবি আঁকা, তায়কোয়ান্দো, আরও কত কী!
ক্লাসের পাঠ্যবই শেষ করে অন্য বই পড়ার সময়ও নেই তাদের কাছে। বাড়তি সময় যদি কখনো মেলে, সেখানেও চলে এসেছে ইউটিউবের নানা রকম রঙিন জগৎ। ৮ বছরের ক্লাস ওয়ানে পড়া শিশু স্বপ্নময়কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বই পড়তে ভালো লাগে?’
চুপ করে থেকে বলল, ‘না।’
‘কেন ভালো লাগে না?’
‘কেউ সাথে সাথে বললে ভালো লাগে।’
ইউটিউবে সে দেখা, শোনা দুটোই পায়। একটুও মাথা খাটাতে হয় না তার।
সোম মঙ্গল বুধ এরা সব
আসে তাড়াতাড়ি,
এদের ঘরে আছে বুঝি
মস্ত হাওয়াগাড়ি?
রবিবার সে কেন, মা গো,
এমন দেরি করে?
ধীরে ধীরে পৌঁছয় সে
সকল বারের পরে।
আকাশপারে তার বাড়িটি
দূর কি সবার চেয়ে?
সে বুঝি, মা, তোমার মতো
গরিব-ঘরের মেয়ে?
—রবিবার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এই কবিতা আজ ওদের কাছে বড্ড অচেনা। পড়লেও এখানে সে কিছু পাবে না। আমি মাঝে মাঝে তাকে সকুমার রায় বা লীলা মজুমদারের গল্প পড়ে শুনিয়েছি। আমার মেয়ে তিস্তা যেমন বলে, ‘আমি “রিলেট” করতে পারছি না’ বা ‘“ইমাজিন” করতে পারছি না।’
‘কেন পারো না? আমরা তো পারতাম।’
ও বলে, ‘আমার মনোযোগ দেড় সেকেন্ডের মধ্যে অন্যদিকে চলে যায়। বইয়ে মন থাকে না।’
আজ যারা বড় হচ্ছে, ২০ থেকে ২৫ বছর, তারাও কি বই পড়ছে? চোখের সামনে হাজারো কনটেন্ট। জানতে চেয়েছিলাম তাসনিম মৌয়ের কাছে। বছর দুয়েক ধরে জব করছে ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে।
‘বইমেলায় যাবে?’
‘হ্যাঁ’, যাব।
‘বই কিনবে?’
‘দেখি!’ তারপর হাসি! জানে না বই কিনবে কি না! মৌ বলে, ‘পড়া এগোয় না। চোখ, মন দুই-ই চলে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।’
কেবল ঢাকা শহরে তো নয়, কথা হচ্ছিল হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের কলেজছাত্র মো. টিপু সুলতানের সঙ্গে। ‘বই পড়?’ বলল, ‘অ্যান্ড্রয়েড ফোন আসার আগে বই পড়তাম। এখন আমরা ইউটিউব দেখি। ইউটিউবে দরকারি বিষয়গুলো সহজেই পেয়ে যাই।’ ইউটিউবে কৃষিবিষয়ক ডকুমেন্টারি দেখে সে নিজেই বাড়ির লাগোয়া জমিতে সবজির চাষ করেছে। গত বছর সে ৫০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছে। নিজের পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে পরিবারকেও সাহায্য করছে এই টাকা দিয়ে।
তাহলে কি ছাপানো বইয়ের দিন শেষ হয়ে এল? এই বইমেলায় স্টলগুলোতে সেলফি তোলার কর্নারও রেখেছেন কোনো কোনো প্রকাশক। তাহলে বই কিনি বা না কিনি, সেলফি তুলতেই হবে! বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ঘোরাটাও হবে। বইমেলায় যাচ্ছি, এটাও হবে।
চাঁদের দেশের চরকাকাটা বুড়ি বলে যে কেউ নেই, সেটা আমরাও জেনেছি বহুদিন হলো। মাঝে মাঝে ঘুমহীন রাতে সেই গল্পের আদরে আজও ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে—হাজারো ক্লান্তি কাটিয়ে ঘুম। ঘুম থেকে উঠে আবার সেই দায়িত্ব, জীবনের হাজারো প্রয়োজন। ভুল জেনেও রূপকথার গল্পের রাতটাকেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। তখন ছোটবেলার পড়া ‘আবোল তাবোল’ মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়।
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন সুদূর।
আয় খ্যাপা-মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তাধিন্ ধিন্,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাবহীন।
—আবোল তাবোল, সুকুমার রায়
লেখক: কো-অর্ডিনেটর, রিসার্চ অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা
রূপকথারা রা রা রা রা
চুপকথারা রা রা রা রা
গল্পটা আর কখনো শেষই হয়নি। প্রতি রাতেই আমি জানালার ফাঁক দিয়ে আসা আলোর নকশা দেখতে দেখতে ভাবতাম, ঘর থেকে লেবুতলা কত দূর হতে পারে! প্রতিদিনই এমন হতো।
‘ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি মোদের বাড়ি এসো/ খাট নেই পালঙ্ক নেই চোখ পেতে বসো’ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই একটা ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখের সামনে—ঠাকুরমার একটি হাত আমার গায়ের ওপর আর একটি হাতে হাতপাখা ঘুরছে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে ঘুমে। তিনি আমাকে ঘুম পাড়াচ্ছেন কত রকম গল্প বলে। ঘুমে তার চোখ জড়িয়ে আসছে। আর আমি তাড়া দিতাম, ‘কই বলো! তারপর কী হলো?’
‘ভূত ঘরে বসেই হাত বাড়িয়ে বাগান থেকে লেবু ছিঁড়ে দিল।’ তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন।
ঘুমপাড়ানি গান আজ বাচ্চাদের জীবনের সঙ্গে আর জোড় বেঁধে নেই। বিচ্ছেদ হয়ে গেছে বহু দিন হলো। ঝাপসা আবেগমাখা গলায় ঘুমকে চোখ পেতে বসতে বলার মধ্যে যে মমতা থাকে, আদর থাকে, সেটা পেতে গেলে যে পরিমাণ বোকামি আর কল্পনাশক্তি থাকতে হয়, তা আজ বাচ্চাদের কোথায়? আমরাই তাদের এক ‘রেসিং’ ট্রাকে তুলে দিয়েছি।
তারা আজ বড় বড় বিস্ময়ের পেছনে ছুটছে। তারা আজ জানে চরকাকাটা বুড়ি বলে চাঁদে কেউ থাকে না। রাক্ষস আর ভূত বলে যে কিছু নেই, সেটাও জানে। ইউটিউবে দেখে শেষ করে ফেলেছে ঠাকুরমার ঝুলি। মায়েরা অসহায়, নতুন কোনো গল্প নেই। দাদি-ঠাকুরমাদের গল্প তো চলেই না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। পরদিন সকালে স্কুল, কোচিং, বিকেলে গান, ছবি আঁকা, তায়কোয়ান্দো, আরও কত কী!
ক্লাসের পাঠ্যবই শেষ করে অন্য বই পড়ার সময়ও নেই তাদের কাছে। বাড়তি সময় যদি কখনো মেলে, সেখানেও চলে এসেছে ইউটিউবের নানা রকম রঙিন জগৎ। ৮ বছরের ক্লাস ওয়ানে পড়া শিশু স্বপ্নময়কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বই পড়তে ভালো লাগে?’
চুপ করে থেকে বলল, ‘না।’
‘কেন ভালো লাগে না?’
‘কেউ সাথে সাথে বললে ভালো লাগে।’
ইউটিউবে সে দেখা, শোনা দুটোই পায়। একটুও মাথা খাটাতে হয় না তার।
সোম মঙ্গল বুধ এরা সব
আসে তাড়াতাড়ি,
এদের ঘরে আছে বুঝি
মস্ত হাওয়াগাড়ি?
রবিবার সে কেন, মা গো,
এমন দেরি করে?
ধীরে ধীরে পৌঁছয় সে
সকল বারের পরে।
আকাশপারে তার বাড়িটি
দূর কি সবার চেয়ে?
সে বুঝি, মা, তোমার মতো
গরিব-ঘরের মেয়ে?
—রবিবার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এই কবিতা আজ ওদের কাছে বড্ড অচেনা। পড়লেও এখানে সে কিছু পাবে না। আমি মাঝে মাঝে তাকে সকুমার রায় বা লীলা মজুমদারের গল্প পড়ে শুনিয়েছি। আমার মেয়ে তিস্তা যেমন বলে, ‘আমি “রিলেট” করতে পারছি না’ বা ‘“ইমাজিন” করতে পারছি না।’
‘কেন পারো না? আমরা তো পারতাম।’
ও বলে, ‘আমার মনোযোগ দেড় সেকেন্ডের মধ্যে অন্যদিকে চলে যায়। বইয়ে মন থাকে না।’
আজ যারা বড় হচ্ছে, ২০ থেকে ২৫ বছর, তারাও কি বই পড়ছে? চোখের সামনে হাজারো কনটেন্ট। জানতে চেয়েছিলাম তাসনিম মৌয়ের কাছে। বছর দুয়েক ধরে জব করছে ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে।
‘বইমেলায় যাবে?’
‘হ্যাঁ’, যাব।
‘বই কিনবে?’
‘দেখি!’ তারপর হাসি! জানে না বই কিনবে কি না! মৌ বলে, ‘পড়া এগোয় না। চোখ, মন দুই-ই চলে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।’
কেবল ঢাকা শহরে তো নয়, কথা হচ্ছিল হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের কলেজছাত্র মো. টিপু সুলতানের সঙ্গে। ‘বই পড়?’ বলল, ‘অ্যান্ড্রয়েড ফোন আসার আগে বই পড়তাম। এখন আমরা ইউটিউব দেখি। ইউটিউবে দরকারি বিষয়গুলো সহজেই পেয়ে যাই।’ ইউটিউবে কৃষিবিষয়ক ডকুমেন্টারি দেখে সে নিজেই বাড়ির লাগোয়া জমিতে সবজির চাষ করেছে। গত বছর সে ৫০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছে। নিজের পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে পরিবারকেও সাহায্য করছে এই টাকা দিয়ে।
তাহলে কি ছাপানো বইয়ের দিন শেষ হয়ে এল? এই বইমেলায় স্টলগুলোতে সেলফি তোলার কর্নারও রেখেছেন কোনো কোনো প্রকাশক। তাহলে বই কিনি বা না কিনি, সেলফি তুলতেই হবে! বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ঘোরাটাও হবে। বইমেলায় যাচ্ছি, এটাও হবে।
চাঁদের দেশের চরকাকাটা বুড়ি বলে যে কেউ নেই, সেটা আমরাও জেনেছি বহুদিন হলো। মাঝে মাঝে ঘুমহীন রাতে সেই গল্পের আদরে আজও ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে—হাজারো ক্লান্তি কাটিয়ে ঘুম। ঘুম থেকে উঠে আবার সেই দায়িত্ব, জীবনের হাজারো প্রয়োজন। ভুল জেনেও রূপকথার গল্পের রাতটাকেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। তখন ছোটবেলার পড়া ‘আবোল তাবোল’ মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়।
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন সুদূর।
আয় খ্যাপা-মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তাধিন্ ধিন্,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাবহীন।
—আবোল তাবোল, সুকুমার রায়
লেখক: কো-অর্ডিনেটর, রিসার্চ অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫