Ajker Patrika

বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল-কয়লানির্ভরতা বাড়ানোর চিন্তা

অরুণ কর্মকার
বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল-কয়লানির্ভরতা বাড়ানোর চিন্তা

আগামী বছর দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য লোডশেডিং পরিহার এবং সার ও শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা।

এ লক্ষ্য পূরণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ও ফার্নেস তেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। আর গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে সার ও শিল্প, সিএনজি ও আবাসিক খাতে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল ও কয়লা-নির্ভরতা বাড়বে। অবশ্য এই দুটি জ্বালানি পণ্যের উৎসও বিশ্ববাজার।

জানতে চাইলে সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক গবেষণা সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছি। কোন খাত থেকে কত বিদ্যুৎ আসবে, সেটা আগেই নির্ধারিত ছিল।’  

চলতি মাসে পরিকল্পনাটি প্রণয়ন থেকে চূড়ান্ত করা পর্যন্ত সরকারের উচ্চপর্যায়ে ৬টি সভা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। সংশ্লিষ্ট প্রতিটি স্তরে পরিকল্পনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে বাস্তবায়নযোগ্য বলে অভিমত দেওয়া হয়েছে। 

বিদ্যুৎ উৎপাদন
পরিকল্পনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে আসবে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে আসবে ৬০০ মেগাওয়াট। বড়পুকুরিয়া থেকে পাওয়া যাবে প্রায় ২৫০ মেগাওয়াট। আর ভারতের আদানির কেন্দ্র থেকে ধরা হয়েছে অন্তত ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপালের প্রথম ইউনিট এবং আদানির কেন্দ্র থেকে আগামী বছর মার্চ মাস থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। রামপালের দ্বিতীয় ইউনিটে উৎপাদন শুরু হবে আগামী বছর সেপ্টেম্বরে।

ফার্নেস তেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে অন্তত ৫ হাজার মেগাওয়াট। এ জন্য ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে অন্তত ৬৬ শতাংশ প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টরে চালাতে হবে। 
এর সঙ্গে বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা ১ হাজার ৫০ মেগাওয়াট যুক্ত হলে এই উৎসগুলো থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে মোট প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে সর্বোচ্চ, সাড়ে ১৫ হাজার থেকে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। ফলে এই সময় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট। আর ৫০০-৭০০ মেগাওয়াট করা হবে ডিজেল থেকে।

মার্চ মাসের আগে, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেই থাকবে। এ সময় পর্যন্ত কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র পায়রা ও বড়পুকুরিয়া থেকে পাওয়া যাবে ১ হাজার মেগাওয়াট। ফার্নেস তেল থেকে ৫ হাজার। আমদানি ১ হাজার ৫০। ডিজেল থেকে করা হবে ৫০০ এবং সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট করা হবে গ্যাস থেকে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে শুরু করলেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে তা সার, শিল্প, সিএনজি ও আবাসিক খাতে বাড়িয়ে দেওয়া হবে। 

গ্যাসের ব্যবহার
পরিকল্পনায় গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার ধরা হয়েছে দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে প্রাপ্তি ধরা হয়েছে দৈনিক ২ হাজার ৩০০ এবং ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ধরা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আমদানি করা এলএনজি থেকে।

আগামী বছর বিশ্ববাজারে এনএলজির দাম কমলেও দৈনিক গড়ে ৪৫০ মিলিয়নের বেশি আনা হবে না ধরেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর কারণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং সম্ভাব্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট। একই কারণে স্পট মার্কেট থেকেও আগামী বছর কোনো এলএনজি কেনা হবে না।

পরিকল্পনায় এলএনজি আমদানি সীমিত রেখে খাতভিত্তিক গ্যাস সরবরাহের যে হিসাব করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, আগামী বছর সার উৎপাদনে দৈনিক গড়ে ১৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। চলতি বছর এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে সরবরাহ করা হয়েছে ১৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ এ সময় এলএনজি আমদানি বেশি করা হয়েছে।

শিল্প, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি ও আবাসিক খাতে আগামী বছর দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই পরিমাণ গড়ে ১ হাজার ৬৫০ মিলিয়ন।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে আগামী বছর দৈনিক গ্যাস সরবরাহ করা হবে সর্বোচ্চ ৮৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট। চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে গড়ে ১ হাজার ৩৪ মিলিয়ন। 
এই হিসাব থেকে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এলএনজি আমদানি অনেক কম করেও সার, শিল্প, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি আবাসিক খাতে কিছুটা বেশি গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। 

আর্থিক সাশ্রয়
এই পরিকল্পনার যে আর্থিক হিসাব করা হয়েছে, সে অনুযায়ী আগামী বছর প্রতি ইউনিট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হবে ১২-১৩ টাকা। ফার্নেস তেলভিত্তিক প্রতি ইউনিটে ব্যয় হবে ১৫-১৬ টাকা। আমদানি করা এলএনজিতে প্রতি ইউনিটে ব্যয় হবে ১৩-১৪ টাকা। দেশীয় ক্ষেত্রের গ্যাসে ব্যয় হবে ৩-৪ টাকা। ডিজেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হবে ২৩-২৪ টাকা।

এই হিসাবে চলতি বছরের তুলনায় আগামী বছর ১৬ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বা ব্যয় কম হবে। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকি কমবে।

তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে হলে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের বিপুল অঙ্কের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় তাঁদের অনেকের পক্ষে আরও বেশি বিনিয়োগ করে, তেল আমদানি বাড়িয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নাও হতে পারে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি গবেষক ইমাম হোসেন বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা কয়লার। যেভাবে বলা হচ্ছে, তাতে টেনেটুনে চলা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু লোডশেডিং বা গ্যাসের ঘাটতি—কোনোটাই দূর করা সম্ভব হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত