Ajker Patrika

ব্যাপক ফলন, দাম কম আলু নিয়ে বিপাকে চাষি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ২২
ব্যাপক ফলন, দাম কম  আলু নিয়ে বিপাকে চাষি

মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ফলন ভালো হলেও তাঁদের চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। কারণ, বাজারে আলুর দাম পড়ে গেছে। ধরনভেদে কোথাও আলুর কেজি ৮ টাকা, আবার কোথাও ৪ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

বগুড়ার শিবগঞ্জ, মানিকগঞ্জের ঘিওর, নীলফামারী ও দিনাজপুরে আলুর চাষ ও বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর আলুর ফলন বেশি হওয়ায় হিমাগারগুলোয় পর্যাপ্ত মজুত আছে। অন্যান্য বছর যেখানে হিমাগারগুলোয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই পুরোনো আলু শেষ হয়ে যায়, সেখানে এবার জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আলু ছিল। ফলে বাজার এখনো পুরোনো আলুর দখলে। এদিকে চলতি মৌসুমেও রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে গেছে। আর এ কারণেই দাম পড়ে গেছে। এদিকে সন্তোষজনক দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক খেত থেকে আলু তুলছেন না।

বগুড়ার মহাস্থান সবজি বাজারে গত সোমবার গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা আলু নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই তেমন। এই বাজারে প্রতি কেজি আলু ৫ থেকে সাড়ে ৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও আলুর দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। এখানে সাদা গ্র্যানুলা জাতের আলু প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা, অ্যাস্ট্রারিক বা স্টিক, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও ক্যারেট জাতের আলু ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং লাল পাকড়ি জাতের আলু ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে সোমবার।

শিবগঞ্জের মোকামতলা এলাকার আলুচাষি জাহিদ হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুব ভোরে আলু ধুয়ে, বস্তায় করে বাজারে এনেছি। কেউ দামই করছে না। দেড় ঘণ্টা আলু নিয়ে বসে থাকার পর ২০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। আড়াই মণ আলু বিক্রির ৫০০ টাকা দিয়ে ১ কেজি গরুর মাংস নিয়ে বাড়ি যাব।’

আলুর দাম কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও অস্বস্তিতে আছেন। তানভীর ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঢাকার মোকামেই আলুর দাম কম। তিন দিনে ৩ লাখ টাকা লোকসান গুনেছি। আমদানি খুব বেশি হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

মানিকগঞ্জের ঘিওরের চাষিরাও বলেছেন, গত বছর করোনার মধ্যেও প্রতি কেজি আলু জমি থেকে বিক্রি হয়েছে ১৫-১৬ টাকা দরে। একটু বেশি লাভের আশায় এবার কৃষকেরা আবাদ বেশি করেছেন। কিন্তু এবার একেবারে দাম পড়ে গেছে।

নীলফামারীতেও একই অবস্থা। এ ব্যাপারে এই জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলীর আলুচাষি আকবর আলী বলেন, ‘২০ বছর ধরে আলু চাষ করছি। কখনো এমন দরপতন দেখি নাই।’

এবার আলুর দরপতন সবচেয়ে বেশি হয়েছে দিনাজপুরে। এই জেলায় এখন আলুর কেজি ৬ টাকা। বীরগঞ্জ আলু ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের গুদামে এখনো কিছু পুরোনো আলু আছে। বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বস্তা এই আলু বিক্রি হচ্ছে। ফলে নতুন আলু মার খাচ্ছে। বীরগঞ্জে আগাম গ্রানুলা আলুর দাম এখন ৪ টাকা কেজি।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আ. গাফ্ফার খান গত রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, আলুর দাম যে পড়ে গেছে, তা অধিদপ্তরের নজরে আছে। মূলত আগাম আলু নিয়েই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই আলু বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। এ কারণে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে। তাঁদের প্রতি কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি আলু কিনতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আনিসুল হক জুয়েল (দিনাজপুর), জসিম উদ্দিন, নীলফামারী, আব্দুর রাজ্জাক (ঘিওর, মানিকগঞ্জ) ও মো. খালিদ হাসান (শিবগঞ্জ, বগুড়া) ]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত