
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলিমপ্রধান উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিল মুসলিম লীগ। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়নি—এমনকি স্বায়ত্তশাসনও দেওয়া হয়নি। পূর্ব বাংলার মানুষের মনে তখন থেকেই ছিল অসন্তোষের বীজ।
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও অধ্যাপকের উদ্যোগে তমুদ্দিন মজলিশ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন তৈরি হয়। ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে এ প্রতিষ্ঠান বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম ও আইন-আদালতের ভাষা করার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালায়। ১৫ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ নামে তাঁরা একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
অক্টোবর মাসে তমুদ্দিন মজলিশের উদ্যোগে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। আহ্বায়ক নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল হক।
৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৭
ঢাকায় বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির, অর্থাৎ বিভাগ-পূর্ব আমলের অখণ্ড বাংলার প্রাদেশিক মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, উর্দুকে পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা করা হবে। বৈঠকটি হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউসে। সেখানে উপস্থিত ছাত্র ও শিক্ষকেরা বাংলাকে অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৭
করাচির শিক্ষা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার এবং আব্দুল হামিদ ঢাকায় এসে জানান, সম্মেলনের উদ্যোগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আরেকটি খবরে বলা হয়, শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের লিঙ্গুয়াফ্রাঙ্কা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তের ভার দেওয়া হয়েছে গণপরিষদের ওপর।
৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৭
শিক্ষা সম্মেলনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বেলা ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রথম সাধারণ ছাত্র সমাবেশ হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও তমুদ্দিন মজলিশের সম্পাদক আবুল কাশেম। বক্তৃতা করেন মুনীর চৌধুরী, আব্দুর রহমান, কল্যাণ দাশগুপ্ত, এ কে এম হাসান ও এস আহমদ।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮
পাকিস্তানের গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু এবং ইংরেজির সঙ্গে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে বাংলা ব্যবহার করার দাবি জানান। প্রস্তাবটি নিয়ে গণপরিষদে তুমুল বিতর্ক হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান তীব্র ভাষায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে আক্রমণ করেন। তিনি এই প্রস্তাবকে মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্য বলে মত দেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীর এই মনোভাব যে একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করা যাইতে পারে।
২ মার্চ, ১৯৪৮
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও তমুদ্দিন মজলিশের যৌথ উদ্যোগে ফজলুল হক মাঠে কামরুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের একটি সভা আহ্বান করা হয়। ভাষা আন্দোলনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি ব্যাপক ভিত্তিক সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই পরিষদের আহ্বায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম। ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান করা হয়।
১১ মার্চ, ১৯৪৮
এ দিন সকাল থেকেই পিকেটিং চলতে থাকে। ইডেন বিল্ডিংয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় গেট, রমনা পোস্ট অফিস, পলাশী ও নীলক্ষেত ব্যারাক, জেলা আদালত, হাইকোর্ট, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ সবখানেই পিকেটিং চলে। সেক্রেটারিয়েটে পিকেটিংয়ের জন্য ছাত্ররা তোপখানা ও আব্দুল গনি সড়কের উভয় গেটের সামনে উপস্থিত হয়েছিল। আব্দুল গনি রোডে ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ। তোপখানা রোডে উপস্থিত ছিলেন কাজী গোলাম মাহমুদ, শওকত আলী, বরকত প্রমুখ। এ দিন পুলিশকে নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং যাঁদের নাম বলা হলো, তাঁদের গ্রেপ্তার করে ওয়াইজঘাটের কোতোয়ালিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। সেদিন আহত হয়েছিলেন ২০০ জন এবং গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ৯০০ ছাত্র। তাঁদের মধ্যে ৬৯ জনকে জেলে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
১৫ মার্চ, ১৯৪৮
পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভার সদস্য বগুড়ার মোহাম্মদ আলী এবং খাজা নাজিমুদ্দিনের একান্ত সচিব খাজা নজরুল্লাহ সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা কামরুদ্দিন আহম্মদের বাসায় যান। খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ভাষার প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে সংগ্রাম পরিষদের নেতারা এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। সাক্ষাতে কী আলোচনা হতে পারে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করেন। নাজিমুদ্দিনের সঙ্গী হয়ে আলোচনার জন্য যান কামরুদ্দীন আহমদ, মো. তোয়াহা, আবুল কাশেম, নঈম উদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আজিজ আহমদ, আব্দুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
অনেক বাদ–প্রতিবাদের পর 8 দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন। চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আগে জেলখানায় বন্দী শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুব এবং শওকত আলী প্রমুখকে চুক্তির শর্ত দেখানো হয়। এরপর তাঁরা স্বাক্ষর করেন।
পরে বোঝা যায়, ‘মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে আসবেন’ বলে যে কথা বলা হয়েছিল, সেটা ছিল খাজা নাজিমুদ্দিনের চাতুরী।
২১ মার্চ, ১৯৪৮
পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল জিন্নাহ ঢাকায় আসেন ১৯ মার্চ। ২১ মার্চ তাঁকে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তিনি প্রায় এক ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়ে বোঝাতে চান যে এ দেশের শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য রাজনৈতিক অন্তর্ঘাতক এবং তাদের এজেন্টরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, আর কোনো ভাষা নয়।’ ২৪ মার্চ তিনি কার্জন হলেও ‘উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’ বলেন। তাতে ‘নো নো’ বলে প্রতিবাদ করেন ছাত্ররা।
ছাত্র নেতারা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে দেখা করতে যান। সাক্ষাৎকারের সময় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে জিন্নাহর কাছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
৬ এপ্রিল, ১৯৪৮
পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে তাঁর চুক্তি লঙ্ঘন করে ভাষাবিষয়ক প্রস্তাব পেশ করেন। এরপর কিছুদিন ভাষা আন্দোলন স্তিমিত থাকে।
১৯৪৯-১৯৫০
বাংলা হরফ পরিবর্তিত করে আরবি হরফ চালানোর একটি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। ১৯৫০ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০টি কেন্দ্রে আরবি হরফে বাংলা ভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু হয় প্রাপ্তবয়স্কদের। প্রত্যেক শিক্ষা কেন্দ্রে ২৫ থেকে ৩৫ জন ছাত্র শিক্ষা গ্রহণ আরম্ভ করেন। (ছবি: সংবাদপত্রে ভাষা আন্দোলন ১৯০) ৪ অক্টোবর, ১৯৫০ ভাষাসংস্কার কমিটির সদস্য ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরবি হরফে বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন।
৪ অক্টোবর, ১৯৫০
ভাষাসংস্কার কমিটির সদস্য ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরবি হরফে বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন।
১১ মার্চ, ১৯৫১
রাষ্ট্রভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে খালেক নেওয়াজ খানের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি ছাত্র সভা হয়। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল তা এ সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তাই ওই সভাতেই আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ মার্চ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা করার দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি মুদ্রণের পর পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্যদের কাছে এবং পাকিস্তানের সব পত্রিকায় পাঠানো হয়।
১৬ অক্টোবর, ১৯৫১
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান রাওয়ালপিন্ডিতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন খাজা নাজিমুদ্দিন।
২৭ জানুয়ারি, ১৯৫২
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অন্য কোনো ভাষা নয়।’ এই বক্তৃতার পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দেয়ালে পোস্টার লাগাতে থাকে। ৩০ জানুয়ারি প্রতীকী ধর্মঘট আহ্বান করে।
৩০ জানুয়ারি, ১৯৫২
এদিন ছাত্র সভায় ৪ ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৩১ জানুয়ারি, ১৯৫২
আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদসহ অপরাপর রাজনৈতিক এবং ছাত্রসংগঠন যোগদান করে। বার লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত এ সভায় কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে ৪০ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।
৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘটের পর ছাত্ররা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। এরপর রাজিউল হকের সভাপতিত্বে সেখানে একটি ছাত্র সভা হয়। সভার একটি প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি অঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলা পরিষদের পরবর্তী অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা সরকার ঘোষণা করেছিল। সেদিক লক্ষ রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সারা পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়।
২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ দিনের জন্য শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। রেডিওর মাধ্যমে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। সংগ্রাম পরিষদের সামনে এক বড় প্রশ্ন এসে হাজির হয়, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কি হবে না। ৫৪ নবাবপুর রোডে অবস্থিত আওয়ামী মুসলিম লীগের অফিসে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক বসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে। পরিষদের বেশির ভাগ সদস্যই ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে কথা বলেন। ১১-৩ ভোটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার বিপক্ষে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আব্দুল মতিনের প্রস্তাব ছিল, একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রসভায় দুই পক্ষের যুক্তি তুলে ধরা হবে। ছাত্ররা যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মেনে নেওয়া হবে। সেভাবেই পরদিন একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় হাজির হন ছাত্ররা।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
সকাল থেকেই ছাত্ররা জমায়েত হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অসংখ্য পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তৎকালীন কলা ভবনের সামনে মোতায়েন ছিল। সকাল ১০টার দিকে ছাত্রছাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। আগের রাতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শামসুল হক ও কাজী গোলাম মাহবুব সমবেত ছাত্রছাত্রীদের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বোঝানোর চেষ্টা করেন। উত্তেজিত ছাত্ররা তাঁদের কথা মানেননি। তাঁরা বরং চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। আব্দুল মতিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে গেলে ১৪৪ ধারা ভাঙতেই হবে। ঘণ্টাখানেক চলার পর সভার সভাপতি গাজীউল হক বক্তব্য দেন। তিনি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। উত্তেজিত ছাত্রছাত্রীরা ‘১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে’, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর ১০ জন করে এক একটি মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় গেট দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। প্রথম যে মিছিলটি বের হয় তার নেতৃত্বে ছিলেন হাবিবুর রহমান শেলী।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে মেডিকেল হোস্টেলের দিকে যেতে থাকেন। তার কাছেই ছিল পরিষদ ভবন। লাঠিপেটা, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ চলতে থাকে। বিকেল তিনটার দিকে কোনো রকম সতর্ক না করে গুলি করে পুলিশ। খুলি উড়ে যায় রফিক উদ্দিনের। ২০ নম্বর ব্যারাকের সামনে গুলিতে ঢলে পড়েন আবুল বরকত। গুলি লাগে আবদুল জব্বারের শরীরে। তিনিও শহীদ হন। আবদুস সালাম আহত হন এবং ৭ এপ্রিল তিনি মারা যান।
২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
নিহত চার শহীদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে। সারা ঢাকা ভেঙে পড়ে সেদিন। পুলিশের সঙ্গে ইপিআই এবং সেনাবাহিনীর টহল দিতে থাকে পূর্ব বাংলার রাজধানী। গুলি চলে। নিহত হন সফিউর রহমান, আবদুর আওয়াল, ওহিউল্লাহ এবং সিরাজুদ্দিন নামে চারজন। আরও কেউ কেউ নিহত হয়েছেন বলেও ধারণা করা হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
মেডিকেল ছাত্ররা এদিন শহীদ মিনার গড়ে তোলেন। ১০ ফুট উঁচু এই স্মৃতিস্তম্ভটির নকশা করেন বদরুল আলম। তাঁকে সহযোগিতা করেন সাঈদ হায়দার। ২৬ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্ণে স্মৃতিস্তম্ভটি গুঁড়িয়ে দেয় পুলিশ এবং ট্রাকে করে ভাঙা শহীদ মিনারটির ইট-বালু-সিমেন্ট সব নিয়ে যায়।
১৯৫৬ সাল
পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র গৃহীত হয়। উর্দু ও বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়।
১৭ নভেম্বর, ১৯৯৯
ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলিমপ্রধান উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিল মুসলিম লীগ। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়নি—এমনকি স্বায়ত্তশাসনও দেওয়া হয়নি। পূর্ব বাংলার মানুষের মনে তখন থেকেই ছিল অসন্তোষের বীজ।
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও অধ্যাপকের উদ্যোগে তমুদ্দিন মজলিশ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন তৈরি হয়। ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে এ প্রতিষ্ঠান বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম ও আইন-আদালতের ভাষা করার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালায়। ১৫ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ নামে তাঁরা একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
অক্টোবর মাসে তমুদ্দিন মজলিশের উদ্যোগে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। আহ্বায়ক নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল হক।
৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৭
ঢাকায় বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির, অর্থাৎ বিভাগ-পূর্ব আমলের অখণ্ড বাংলার প্রাদেশিক মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, উর্দুকে পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা করা হবে। বৈঠকটি হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউসে। সেখানে উপস্থিত ছাত্র ও শিক্ষকেরা বাংলাকে অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৭
করাচির শিক্ষা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার এবং আব্দুল হামিদ ঢাকায় এসে জানান, সম্মেলনের উদ্যোগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আরেকটি খবরে বলা হয়, শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের লিঙ্গুয়াফ্রাঙ্কা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তের ভার দেওয়া হয়েছে গণপরিষদের ওপর।
৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৭
শিক্ষা সম্মেলনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বেলা ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রথম সাধারণ ছাত্র সমাবেশ হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও তমুদ্দিন মজলিশের সম্পাদক আবুল কাশেম। বক্তৃতা করেন মুনীর চৌধুরী, আব্দুর রহমান, কল্যাণ দাশগুপ্ত, এ কে এম হাসান ও এস আহমদ।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮
পাকিস্তানের গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু এবং ইংরেজির সঙ্গে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে বাংলা ব্যবহার করার দাবি জানান। প্রস্তাবটি নিয়ে গণপরিষদে তুমুল বিতর্ক হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান তীব্র ভাষায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে আক্রমণ করেন। তিনি এই প্রস্তাবকে মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্য বলে মত দেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীর এই মনোভাব যে একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করা যাইতে পারে।
২ মার্চ, ১৯৪৮
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও তমুদ্দিন মজলিশের যৌথ উদ্যোগে ফজলুল হক মাঠে কামরুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের একটি সভা আহ্বান করা হয়। ভাষা আন্দোলনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি ব্যাপক ভিত্তিক সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই পরিষদের আহ্বায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম। ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান করা হয়।
১১ মার্চ, ১৯৪৮
এ দিন সকাল থেকেই পিকেটিং চলতে থাকে। ইডেন বিল্ডিংয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় গেট, রমনা পোস্ট অফিস, পলাশী ও নীলক্ষেত ব্যারাক, জেলা আদালত, হাইকোর্ট, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ সবখানেই পিকেটিং চলে। সেক্রেটারিয়েটে পিকেটিংয়ের জন্য ছাত্ররা তোপখানা ও আব্দুল গনি সড়কের উভয় গেটের সামনে উপস্থিত হয়েছিল। আব্দুল গনি রোডে ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ। তোপখানা রোডে উপস্থিত ছিলেন কাজী গোলাম মাহমুদ, শওকত আলী, বরকত প্রমুখ। এ দিন পুলিশকে নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং যাঁদের নাম বলা হলো, তাঁদের গ্রেপ্তার করে ওয়াইজঘাটের কোতোয়ালিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। সেদিন আহত হয়েছিলেন ২০০ জন এবং গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ৯০০ ছাত্র। তাঁদের মধ্যে ৬৯ জনকে জেলে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
১৫ মার্চ, ১৯৪৮
পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভার সদস্য বগুড়ার মোহাম্মদ আলী এবং খাজা নাজিমুদ্দিনের একান্ত সচিব খাজা নজরুল্লাহ সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা কামরুদ্দিন আহম্মদের বাসায় যান। খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ভাষার প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে সংগ্রাম পরিষদের নেতারা এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। সাক্ষাতে কী আলোচনা হতে পারে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করেন। নাজিমুদ্দিনের সঙ্গী হয়ে আলোচনার জন্য যান কামরুদ্দীন আহমদ, মো. তোয়াহা, আবুল কাশেম, নঈম উদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আজিজ আহমদ, আব্দুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
অনেক বাদ–প্রতিবাদের পর 8 দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন। চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার আগে জেলখানায় বন্দী শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুব এবং শওকত আলী প্রমুখকে চুক্তির শর্ত দেখানো হয়। এরপর তাঁরা স্বাক্ষর করেন।
পরে বোঝা যায়, ‘মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে আসবেন’ বলে যে কথা বলা হয়েছিল, সেটা ছিল খাজা নাজিমুদ্দিনের চাতুরী।
২১ মার্চ, ১৯৪৮
পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল জিন্নাহ ঢাকায় আসেন ১৯ মার্চ। ২১ মার্চ তাঁকে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তিনি প্রায় এক ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়ে বোঝাতে চান যে এ দেশের শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য রাজনৈতিক অন্তর্ঘাতক এবং তাদের এজেন্টরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, আর কোনো ভাষা নয়।’ ২৪ মার্চ তিনি কার্জন হলেও ‘উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’ বলেন। তাতে ‘নো নো’ বলে প্রতিবাদ করেন ছাত্ররা।
ছাত্র নেতারা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে দেখা করতে যান। সাক্ষাৎকারের সময় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে জিন্নাহর কাছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
৬ এপ্রিল, ১৯৪৮
পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে তাঁর চুক্তি লঙ্ঘন করে ভাষাবিষয়ক প্রস্তাব পেশ করেন। এরপর কিছুদিন ভাষা আন্দোলন স্তিমিত থাকে।
১৯৪৯-১৯৫০
বাংলা হরফ পরিবর্তিত করে আরবি হরফ চালানোর একটি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। ১৯৫০ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০টি কেন্দ্রে আরবি হরফে বাংলা ভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু হয় প্রাপ্তবয়স্কদের। প্রত্যেক শিক্ষা কেন্দ্রে ২৫ থেকে ৩৫ জন ছাত্র শিক্ষা গ্রহণ আরম্ভ করেন। (ছবি: সংবাদপত্রে ভাষা আন্দোলন ১৯০) ৪ অক্টোবর, ১৯৫০ ভাষাসংস্কার কমিটির সদস্য ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরবি হরফে বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন।
৪ অক্টোবর, ১৯৫০
ভাষাসংস্কার কমিটির সদস্য ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরবি হরফে বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন।
১১ মার্চ, ১৯৫১
রাষ্ট্রভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে খালেক নেওয়াজ খানের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি ছাত্র সভা হয়। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল তা এ সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তাই ওই সভাতেই আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ মার্চ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা করার দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি মুদ্রণের পর পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্যদের কাছে এবং পাকিস্তানের সব পত্রিকায় পাঠানো হয়।
১৬ অক্টোবর, ১৯৫১
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান রাওয়ালপিন্ডিতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন খাজা নাজিমুদ্দিন।
২৭ জানুয়ারি, ১৯৫২
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অন্য কোনো ভাষা নয়।’ এই বক্তৃতার পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দেয়ালে পোস্টার লাগাতে থাকে। ৩০ জানুয়ারি প্রতীকী ধর্মঘট আহ্বান করে।
৩০ জানুয়ারি, ১৯৫২
এদিন ছাত্র সভায় ৪ ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৩১ জানুয়ারি, ১৯৫২
আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদসহ অপরাপর রাজনৈতিক এবং ছাত্রসংগঠন যোগদান করে। বার লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত এ সভায় কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে ৪০ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।
৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘটের পর ছাত্ররা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। এরপর রাজিউল হকের সভাপতিত্বে সেখানে একটি ছাত্র সভা হয়। সভার একটি প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি অঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলা পরিষদের পরবর্তী অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা সরকার ঘোষণা করেছিল। সেদিক লক্ষ রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সারা পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়।
২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ দিনের জন্য শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। রেডিওর মাধ্যমে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। সংগ্রাম পরিষদের সামনে এক বড় প্রশ্ন এসে হাজির হয়, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কি হবে না। ৫৪ নবাবপুর রোডে অবস্থিত আওয়ামী মুসলিম লীগের অফিসে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক বসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে। পরিষদের বেশির ভাগ সদস্যই ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে কথা বলেন। ১১-৩ ভোটে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার বিপক্ষে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আব্দুল মতিনের প্রস্তাব ছিল, একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রসভায় দুই পক্ষের যুক্তি তুলে ধরা হবে। ছাত্ররা যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মেনে নেওয়া হবে। সেভাবেই পরদিন একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় হাজির হন ছাত্ররা।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
সকাল থেকেই ছাত্ররা জমায়েত হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অসংখ্য পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তৎকালীন কলা ভবনের সামনে মোতায়েন ছিল। সকাল ১০টার দিকে ছাত্রছাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। আগের রাতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শামসুল হক ও কাজী গোলাম মাহবুব সমবেত ছাত্রছাত্রীদের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বোঝানোর চেষ্টা করেন। উত্তেজিত ছাত্ররা তাঁদের কথা মানেননি। তাঁরা বরং চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। আব্দুল মতিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে গেলে ১৪৪ ধারা ভাঙতেই হবে। ঘণ্টাখানেক চলার পর সভার সভাপতি গাজীউল হক বক্তব্য দেন। তিনি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। উত্তেজিত ছাত্রছাত্রীরা ‘১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে’, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর ১০ জন করে এক একটি মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় গেট দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। প্রথম যে মিছিলটি বের হয় তার নেতৃত্বে ছিলেন হাবিবুর রহমান শেলী।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে মেডিকেল হোস্টেলের দিকে যেতে থাকেন। তার কাছেই ছিল পরিষদ ভবন। লাঠিপেটা, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ চলতে থাকে। বিকেল তিনটার দিকে কোনো রকম সতর্ক না করে গুলি করে পুলিশ। খুলি উড়ে যায় রফিক উদ্দিনের। ২০ নম্বর ব্যারাকের সামনে গুলিতে ঢলে পড়েন আবুল বরকত। গুলি লাগে আবদুল জব্বারের শরীরে। তিনিও শহীদ হন। আবদুস সালাম আহত হন এবং ৭ এপ্রিল তিনি মারা যান।
২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
নিহত চার শহীদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে। সারা ঢাকা ভেঙে পড়ে সেদিন। পুলিশের সঙ্গে ইপিআই এবং সেনাবাহিনীর টহল দিতে থাকে পূর্ব বাংলার রাজধানী। গুলি চলে। নিহত হন সফিউর রহমান, আবদুর আওয়াল, ওহিউল্লাহ এবং সিরাজুদ্দিন নামে চারজন। আরও কেউ কেউ নিহত হয়েছেন বলেও ধারণা করা হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২
মেডিকেল ছাত্ররা এদিন শহীদ মিনার গড়ে তোলেন। ১০ ফুট উঁচু এই স্মৃতিস্তম্ভটির নকশা করেন বদরুল আলম। তাঁকে সহযোগিতা করেন সাঈদ হায়দার। ২৬ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্ণে স্মৃতিস্তম্ভটি গুঁড়িয়ে দেয় পুলিশ এবং ট্রাকে করে ভাঙা শহীদ মিনারটির ইট-বালু-সিমেন্ট সব নিয়ে যায়।
১৯৫৬ সাল
পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র গৃহীত হয়। উর্দু ও বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়।
১৭ নভেম্বর, ১৯৯৯
ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলিমপ্রধান উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিল মুসলিম লীগ। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়নি—এমনকি স্বায়ত্তশাসনও দেওয়া হয়নি। পূর্ব বাংলার মানুষের মনে তখন থ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলিমপ্রধান উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিল মুসলিম লীগ। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়নি—এমনকি স্বায়ত্তশাসনও দেওয়া হয়নি। পূর্ব বাংলার মানুষের মনে তখন থ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলিমপ্রধান উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিল মুসলিম লীগ। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়নি—এমনকি স্বায়ত্তশাসনও দেওয়া হয়নি। পূর্ব বাংলার মানুষের মনে তখন থ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে ভারতের মুসলিমপ্রধান উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিল মুসলিম লীগ। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়নি—এমনকি স্বায়ত্তশাসনও দেওয়া হয়নি। পূর্ব বাংলার মানুষের মনে তখন থ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫