Ajker Patrika

মরা নদী-খালে নতুন প্রাণ

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ১২
মরা নদী-খালে নতুন প্রাণ

সরকারের ডেলটা প্রকল্পের পুনর্খননের আওতায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে মৃতপ্রায় নদী ও খাল নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এতে মিলছে শুকনো মৌসুমে সেচ ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহের সুবিধা। এমনটিই জানিয়েছেন উপকারভোগীরা।

প্রকল্পটি এই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ জলবায়ু মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুর পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার।

তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডেলটা প্ল্যান ২০২১ বাস্তবায়ন সফলভাবে শেষ হলে ছোট নদী, খাল ও জলাশয়ে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সুফল পেতে হলে নদীগুলোকে পর্যায়ক্রমে পুনর্খননের কাজ চলমান রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, ডেলটা প্ল্যান কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৬৪ জেলায় মৃতপ্রায় নদীগুলোর প্রাণ ফেরাতে ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খনন। প্রকল্পটির আওতায় পাউবো সৈয়দপুর পওর বিভাগ ৫৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি নদী ও ৩টি খালের ২৬২ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পুনর্খনন কাজ করছে। এর মধ্যে খরখরিয়া নদীর ৭৫ কিলোমিটার ও নদীটির শাখা খাল ১৫ দশমিক ৪ কিলোমিটার, জমিদার পঁচানালা খাল ২১ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার, বাঙ্গালীপুর জলকর খালের ২ দশমিক ১ কিলোমিটার, ধাইজান নদীর ২৮ দশমিক ৩৮, দেওনাই চড়ালকাটা যমুনেশ্বরী নদীর ৩৫ কিলোমিটার খননকাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ঘৃণায় করতোয়া নদীর ৮৫ কিলোমিটার খননকাজ চলমান রয়েছে। নদী ও খালগুলোর উভয় পাড়ের নতুন মাটিতে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ৯ হাজার গাছের চারা।

সরেজমিন দেখা যায়, শুকনো মৌসুমেও এসব নদীর পানি জমির সেচকাজে ব্যবহার করছেন কৃষকেরা। সেচ সুবিধা পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী কৃষিজমিগুলো ফসলে ভরে গেছে। নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। মিলছে নানা প্রজাতির মাছ। নদীর উভয় পাড়কে সুরক্ষিত এবং লোক চলাচলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। উভয় পাড়ে লাগানো নানা প্রজাতির গাছ বেশ বেড়ে উঠছে। এতে নদীর সৌন্দর্য বেড়েছে।

উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের পোড়ারহাট এলাকার জেলে বিশ্বনাথ সরকার (৪৫) বলেন, ‘আগে খরখরিয়া নদীতে বছরের বেশির ভাগ সময় কোনো পানি থাকত না। তখন কষ্ট করে কোনোমতে সংসার চলত। এখন নদীতে পানি থাকায় ১২ মাসই মাছ শিকার করতে পারছি। এতে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।’

খরখরিয়া নদীসংলগ্ন সৈয়দপুর শহরের কুন্দল এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মিজানুর রহমান (৪৩) বলেন, ‘২০১৭ সালে বন্যায় নদীর পানি উপচে শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ক্যান্টনমেন্টসহ পুরো শহর। পরে নদীটি খনন করায় নাব্যতা বৃদ্ধির ফলে পানিধারণ ক্ষমতা বেড়েছে। এতে নদীতীরবর্তী মানুষ বর্ষার মৌসুমে ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। তা ছাড়া শুকনো মৌসুমেও পানি মিলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের এই মহতী উদ্যোগের কারণে নদীগুলো যেমন প্রাণ ফিরে পেয়েছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে।’

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘পঁচানালা খালের পাশে ভাতারমারি পাথারে (বিলে) আমার কয়েক হেক্টর জমি রয়েছে। আগে জমিগুলো বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকত, পানি বের হওয়ার পথ ছিল না। খালটি পুনর্খনন করে দেওয়ায় পানিনিষ্কাশনের পথ তৈরি হয়েছে। এখন আমরা ১২ মাসই নানা ধরনের ফসল ফলাতে পারছি।’

সৈয়দপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) খগেন বাবু জানান, খননের ফলে নদীগুলোতে সারা বছর পানি থাকছে। এসব নদী ও খালে আগের চেয়ে দেশি মাছের উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। আর নদী ও খালগুলোতে মাছ চাষ করা হলে মাছের অভয়ারণ্য হবে। এতে একদিকে স্থানীয়দের যেমন আমিষের চাহিদা পূরণ হবে, পাশাপাশি দেশের মৎস্যসম্পদ রপ্তানিতে সহায়ক হবে বলেও জানান তিনি।

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছদুল মোমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে কোনো সরকারপ্রধান নদীগুলো বাঁচাতে উদ্যোগ নেয়নি। পুনর্খনন করে নদীগুলোর প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোবাইল হাতে ধোঁয়ার ভেতর থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসেন রমেশ, ভিডিও প্রকাশ

ইরানের জন্য ইসরায়েলকে বিসর্জন দেবে রাশিয়া?

রাস্তায় নারীকে চড় মেরে বাইকচালক বললেন, ‘নিজের দেশে ফিরে যাও!’

নেতানিয়াহু বাংকারে লুকিয়ে, ট্রাম্পের একটি ফোনকলই যথেষ্ট: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইরানের ভান্ডারে কত ক্ষেপণাস্ত্র আছে—কত দিন যুদ্ধ চলবে এতে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত