Ajker Patrika

প্রতি হাটে বিক্রি হয় ১০ লাখ টাকার নৌকা

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৪, ১৩: ৪৭
প্রতি হাটে বিক্রি হয় ১০ লাখ টাকার নৌকা

মানিকগঞ্জের ঘিওরে জমে উঠেছে দুই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত এবং অভ্যন্তরীণ নদ নদীতে দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ায় নৌকা কেনার ভিড় বেড়েছে হাটে। প্রতি হাটে ২০০-২৫০ নৌকা বিক্রি হয়। যার মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।

নৌকা হাটের ইজারাদার গৌরাঙ্গ কুমার ঘোষ বলেন, প্রতিহাটে ২৫০ নৌকা বিক্রি হয়। নৌকা প্রতি চার হাজার দাম ধরলে হাটের দিনে ১০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। মাসে চার হাটে প্রায় ৪০ লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হয়। আর বছরে সাধারণত আষাঢ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত নৌকর হাট জমজমাট থাকে।

সামান্য বর্ষায় ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুরের নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। এ অবস্থায় মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা হলো নৌকা। বর্ষার শুরু তাই ঘিওরের নৌকার হাটে কেনাবেচা বাড়তে থাকে এ বাহনের। পানি বাড়লে পাল্লা দিয়ে বাড়ে নৌকা কেনাবেচা।

গত বুধবার সরেজমিনে ঘিওর নৌকার হাটে দেখা গেছে, নৌকা বেচাকেনার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। কিন্তু হাটে নৌকার পরিমাণ বেশি ওঠায় জায়গার সংকুলান হয়নি। এ জন্য ডিএন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাহারি হাজারো নৌকা। ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম পুরো এলাকা।

পদ্মা-যমুনা, কালীগঙ্গা, ইছামতী ও ধলেশ্বরীসহ ছোট বড় বেশ কয়েকটি নদী মানিকগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত তিন দিন ধরে এসব নদীতে বাড়ছে পানি। তাই নিম্নাঞ্চলের মানুষ বন্যার আশঙ্কায় নৌকা প্রস্তুত রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। সাধ্যমতো কিনছেন নৌকা। এই হাটে প্রতি হাটে প্রায় ৮ লাখ টাকার নৌকা বেচাকেনা হয়ে থাকে।

নৌকা বিক্রেতা জাবরা গ্রামের কানাই চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ১০ হাত লম্বা এবং আড়াই হাত প্রস্থের একটি নৌকার মূল্য পাঁচ হাজার টাকা। আকার ভেদে নৌকার দামের তারতম্য হয়। এ রকম ১১ হাত লম্বা ও ৩ হাত প্রস্থের নৌকা ৬ হাজার, ১৩ হাত লম্বা ও ৩ হাত প্রস্থের একটি নৌকার দাম ৭ হাজার আর ১৫ হাত লম্বা ও ৩ হাত প্রস্থের নৌকা আট থেকে নয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

মানিকগঞ্জের ঘিওরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে নৌকার হাটে ক্রেতাদের ভিড়। ছবিটি সম্প্রতি তোলানৌকা ক্রেতা আশাপুর গ্রামের মুন্নাফ মিয়া বলেন, ‘আমাদের গ্রামটি খুবই নিচু। সামান্য বর্ষাতেই রাস্তাঘাট সব তলিয়ে যায়। বর্ষায় নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয়। পানি বাড়লে নৌকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই ঘিওর হাট থেকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি বড় ডিঙি নৌকা কিনেছি।’

নৌকার কারিগররাও ব্যস্ত নৌকা তৈরিতে। ঘিওর বাজারের কাঠমিস্ত্রি সুবল সূত্রধর বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। সপ্তাহে আমাদের কারখানা থেকে কমপক্ষে ২০-২২টি নৌকা হাটে নেওয়া হয়। বর্তমানে কাঠ, লোহা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদির দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচ বেড়েছে। আমরা জামরুল, রেইনট্রি, আম, কদম, শিমুল, বৈন্যা, ডোমরা ইত্যাদি কাঠ দিয়ে এসব ডিঙ্গি, কোশা নৌকা তৈরি করে থাকি।’

ঘিওর হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মুসা বলেন, ঘিওর হাটের ঐতিহ্য দুই শ বছরেরও অধিক। এখানে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মানুষ নৌকা বেচাকেনা করতে পরেন।

ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এই নৌকার হাটটি জেলা ও উপজেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। এই হাটের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ হাটে নৌকা কিনতে আসে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত