Ajker Patrika

দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৪৩
দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

যশোরের মনিরামপুরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দফার কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যদের বিরুদ্ধে ভুয়া নাম দিয়ে টাকা আত্মসাৎ, ৪০ দিনের জায়গায় ৩৭ দিন কাজ হওয়াসহ আরও অনেক অভিযোগ তুলেছেন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শ্রমিকেরা।

জানা গেছে, এবারের কর্মসূচিতে প্রতিটি ইউনিয়নেই ইউপি সদস্যদের একটি করে ভুয়া নাম ছিল। তা ছাড়া মাইক্রোবাস ও পিকআপের মালিকের নামও রয়েছে তালিকায়। অবৈধভাবে নিজেদের নাম শ্রমিকদের তালিকায় রেখে কাজে না গিয়েই টাকা তুলেছেন সুবিধাবাদী এসব লোকজন।

এ টাকা আবার ভাগ হয়েছে ভুয়া শ্রমিক, ইউপি সদস্যসহ প্রভাবশালীদের মধ্যে। এ ছাড়া শ্রমিকেরা ৩৭ দিন কাজ করলেও হাজিরা খাতায় দেখানো হয়েছে কাজ ৪০ দিনই হয়েছে। এ তিন দিনের মজুরিও প্রভাবশালী ওই চক্রের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে বলে দাবি শ্রমিকদের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মনিরামপুরে এবার ৪৬টি প্রকল্পে ১ হাজার ৯৫৬ জন শ্রমিক কাজ করেছেন। দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গত বুধবার এসব কাজ শেষ হয়। সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিরতি দিয়ে ৫ দিন করে কাজ চলতো।

চালুয়াহাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর মোবারকপুর প্রকল্পের সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘আমার প্রকল্পে ৪২ জন শ্রমিক। সবাই কাজ করেছে। গত বুধবার কাজের মেয়াদ ৩৭ দিন হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, আর কাজ হবে না। তাই কাজ শেষ করে দিয়েছি। কেন কাজ বন্ধ হয়েছে বলতে পারব না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাশিমনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর গোয়ালপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান নিজের ছেলে সোহাগ হোসেনের নাম দিয়েছেন কর্মসূচিতে। সোহাগ তিনটি মাইক্রোবাস ও পিকআপের মালিক। তিনি একদিনও কর্মসূচির কাজে হাজির হননি। অথচ প্রথম ধাপের ২০ দিনের কাজের টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। জানতে চাইলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ছেলের পরিবর্তে আমি মাঝেমধ্যে কাজ করেছি।’

কাশিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘ইউপি সদস্য সিদ্দিকের ছেলের নাম শ্রমিকদের তালিকায় আছে কিনা তা দেখতে হবে। সব ইউপি সদস্য একটি করে ভুয়া নাম দিতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই।’

শ্রমিকের তালিকায় নাম রয়েছে হরিদাসকাটি ইউনিয়নের কুচলিয়া গ্রামের গৌরাঙ্গের, অথচ তিনি একদিনও কাজে যাননি বলে জানা গেছে। গৌরাঙ্গের নাম দিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য চন্দনা রানী। চন্দনা রানী বলেন, ‘গৌরাঙ্গের পরিবর্তে অন্য লোক কাজ করেছেন। তবে গৌরাঙ্গের পরিবর্তে উপস্থিত শ্রমিকের নাম বলতে পারেননি চন্দনা রানী।

রোহিতা ইউপির এক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আমরা সবাই একজন করে শ্রমিকের নাম দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমি যার নাম দিয়েছিলাম তিনি তিন দিন কাজে গিয়েছিলেন। তিনি ৮ হাজার টাকা পেয়েছেন, আমি এখনো তাঁর কাছ থেকে কিছু নিইনি।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘কাজ শুরু হওয়ার মুহূর্তে বৃষ্টি হয়েছিল। তা ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানেরা শ্রমিকদের তালিকা সঠিক সময়ে জমা দিতে পারেননি। এ জন্য ৪০ দিনের পরিবর্তে ৩৭ দিন কাজ চলেছে। ৩৭ দিনের বিল করেই সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।’

গোলাম সরোয়ার আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের ২০ দিনের বিল দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৭ দিনের বিল তৈরি শিগগিরই পাঠানো হবে। কোনো ইউপি সদস্য নিজেদের আত্মীয়–স্বজন কিংবা কাছের কোনো মানুষের নাম দিয়েছেন কিনা তা আমার জানা নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজনৈতিক দলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ, হেফাজতে সেনা কর্মকর্তা

পত্রিকায় নিবন্ধ লেখার পর বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাকে ফেরত নেওয়ার অনুরোধ কাতারের

পিআর পদ্ধতিতেই হবে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ, ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ মাতিয়ে যাওয়া জার্মান টিকটকার ভারতে আটক

শেখ হাসিনার ‘ফেরার পরিকল্পনা’ ঘিরে গোপন বৈঠক, গ্রেপ্তার ২২ নেতা-কর্মী কারাগারে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত