Ajker Patrika

প্রথম কালবৈশাখীর তাণ্ডব

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) ও আলী কদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ১১: ১৪
Thumbnail image

এ বছরের প্রথম কালবৈশাখীতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একাধিক পোলট্রি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন রয়েছে পুরো উপজেলার বৈদ্যুতিক সংযোগ। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে আটটার পর ঘণ্টাব্যাপী কালবৈশাখীর তাণ্ডব চলে।

এদিকে গতকাল বিকেলে আবারও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামতের কাজ ব্যাহত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলেও বিকল্প উপায়ে সন্ধ্যার পর বৈদ্যুতিক সংযোগ চালু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

ঝড় থামার পর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীতে উপজেলার কালাপানি, যোগ্যাছোলা, গোরখানা, তুলাবিল বড়বিল, ডাইনছড়ি, বাটনাতলী, গাড়ীটানা, তিনটহরী, গচ্ছাবিল, হাতিমুড়া, ওসমানপল্লী, মলঙ্গীপাড়া, রাঙ্গাপানি, একসত্যাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার নড়বড়ে ঘরবাড়ি, মুরগির খামার, রান্নাঘরের ছাল, ফলের গাছ-পালা উপড়ে পড়েছে। গোরখানা শাহানশাহ, হক ভান্ডারি সুনিয়া দাখিল মাদ্রাসার একটি ঘর ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া ছোটখাটো অর্ধশত ঘর-দরজার বেড়া ও টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে বৈশাখী ঝড়ে। ওসমানপল্লী এলাকার পোলট্রি খামারি মো. আবুল কালাম আজাদের ২ হাজার মুরগির পোল্ট্রির‍ ঘর ভেঙে সহস্রাধিক মুরগির বাচ্চা আহত হয়েছে।

সুনিয়া দাখিল মাদ্রাসার একটি ঘর উড়ে যাওয়ার ঘটনায় তিন ছাত্রী ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা তাঁদের সেবা দিয়ে সুস্থ করেন। প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক ও সংবাদকর্মী মো. রবিউল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের গুইমারাসহ আলুটিলার কয়েক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ে ও ডাল-পালা ভেঙে প্রায় দুই–আড়াই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কয়েকটি দল ও পুলিশের সহযোগিতায় বেলা ১১টার পর যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে এ ঝড়ে কোথাও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মহিউদ্দীন জানান, ‘কালবৈশাখীতে আহত হয়ে কারও চিকিৎসা নিতে আসতে দেখিনি।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দীন বলেন, কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য বিকেল পর্যন্ত আমরা পাইনি। জনপ্রতিনিধিরা ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দিলে আমরা সেগুলো যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

উপজেলা আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘ঝড়ে চট্টগ্রাম হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক সংযোগের পিলার ভেঙে গিয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ডাল-পালা ও গাছ উপড়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সংযোগ মেরামতের কাজ চলছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রক্তিম চৌধুরী জানান, আচমকা কালবৈশাখীতে গ্রামগুলোতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে তথ্য জানাতে জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে। কালবৈশাখীর এ সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন জনগণের পাশে থাকবে।

এদিকে বান্দরবানের আলীকদমে কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পেটে চাষিরা। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, গতকাল সকালে ঝড়ে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার পেঁপে নষ্ট হয়েছে।

গতকাল উপজেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পেঁপে খেতের গাছ ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে। বিশেষ করে বাবুপাড়া, বুঝিমুখ, আমতলীসহ মাতামুহুরি নদীর তীরবর্তী চরে লাগানো পেঁপে গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

নয়াপাড়া এলাকার পেঁপে চাষি আকবর আহমদ জানান, এ বছর তিনি দুই একর জমিতে ৯ শতাধিক পেঁপে গাছ লাগান। পেঁপের ফলনও ভালো হয়েছিল। ইতিমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রিও করেছেন তিনি, কিন্তু কালবৈশাখীর তাণ্ডবে খেতের সব পেঁপে গাছ ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

একই এলাকার আরেক পেঁপে চাষি ফরিদুল আলমের পেঁপে খেতের ৪০০ পেঁপে গাছ ভেঙে যায়। এতে তাঁর ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের কৃষি কর্মকর্তা পীযূষ রায় জানান, আলীকদম উপজেলায় এবার ৪৮০ হেক্টর জমিতে রেড লেডি ও টপ লেডি জাতের পেঁপে চাষ হয়েছে। কালবৈশাখীর তাণ্ডবে পেঁপে চাষিদের যে ক্ষতি হয়েছে তা আসলেই দুঃখজনক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত