Ajker Patrika

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বড় দুই দলেই অস্বস্তি

মোনায়েম সরকার
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বড় দুই দলেই অস্বস্তি

ঈদ ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এবার ছুটি মোটামুটি লম্বা হয়েছে। এবারই প্রথম দেশে ছয় দিন টানা কোনো দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। আমার মতো বয়স্ক মানুষ, যাঁদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস সকালে খবরের কাগজ পড়া, তাঁদের জন্য এই ছয় দিন কতটা অস্বস্তিকর ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না। তবে এবার ঈদ উপলক্ষে যাঁরা ঢাকা ছেড়েছিলেন, তাঁদের যাত্রা অনেকটাই নির্বিঘ্ন হয়েছে বলেই শুনেছি। তবু প্রচণ্ড গরমে এবং গাদাগাদি করে যাঁদের যাওয়া-আসা করতে হয়েছে, তাঁদের কষ্টটাও বুঝি না তা নয়। আমরা একটা বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কায়েম করলেও বৈষম্যের জাল এখনো ছিন্ন করতে পারিনি। যত দিন এই বৈষম্য বজায় থাকবে, তত দিন উৎসব-আনন্দও সব মানুষের এক রকম হবে না। এ নিয়ে আমরা বাহাস করতে পারব, নানা রকম তত্ত্বকথা আওড়াতে পারব, এর-ওর দিকে অভিযোগের তির নিক্ষেপ করতে পারব, কিন্তু তাতে পরিস্থিতির কোনো হেরফের হবে না।

আনন্দ উদ্‌যাপন শেষ হতে না হতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বড় সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজনের অকালমৃত্যু হয়েছে, অনেক পরিবারে হাহাকার নেমে এসেছে। এই পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই দাবি জোরের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে রাখছি—প্লিজ, আপনারা একটু নড়েচড়ে বসুন। যেসব কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, সেগুলো দূর করার জন্য চেষ্টাটা আন্তরিকভাবে করুন। যারা দুর্ঘটনার কথা বলে প্রকৃতপক্ষে মানুষ হত্যা করছে, সেই ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনুন। আপনারা নিজেদের ভাগ্য গড়ার বিষয়ে তো উদাসীনতা দেখান না, তাহলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কেন?

আমি যেহেতু রাজনীতির মানুষ, তাই রাজনীতি নিয়ে দু-চার কথা বলা জরুরি মনে করছি। আমার এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, দেশে রাজনীতির নামে যা চলছে, তা আর চলতে দেওয়া উচিত নয়। মানুষকে উপেক্ষা করে, মানুষের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে যে রাজনীতি, তা দ্রুত পরিহার করা উচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। সরকারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি এ জন্য যে, শেখ হাসিনার গতিশীল যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। আবার আমার মনে খেদও আছে এ জন্য যে, সত্যি কি বঙ্গবন্ধু এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে, আবার কিছু মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করবে?

বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও একাধিকবার সেই রাজনীতির ধারা অনুসরণের কথাই বলেছেন। কিন্তু দেশ কি সত্যি দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচনের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে? অন্যায়, দুর্নীতি কমবেশি অনেক দেশেই হয়। কিন্তু দেশটাতে দুর্বৃত্ত চরিত্রের মানুষেরা যেভাবে নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পাচ্ছে, সেটা অন্য কোনো সভ্য দেশে কল্পনা করা যায় কি? আমার দুঃখ এটাই যে একজন দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লুটেরা, বিদেশে পুঁজি পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া গেল না। যখন দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়, তখন অলক্ষ্যে বুঝি অন্তর্যামীও বিদ্রূপের হাসি হাসেন।

আমরা দাবি করছি, দেশে গণতন্ত্র আছে, নির্বাচিত সরকার আছে। কিন্তু যেভাবে দেশে নির্বাচন হচ্ছে অধিকাংশ মানুষকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে, ভয়ভীতি দেখিয়ে কিংবা বিপুল অর্থ ব্যয় করে ভোটের পাট চুকানো হচ্ছে, এটা কি নীতিনৈতিকতার দিক থেকে সমর্থনযোগ্য? যার খুশি নির্বাচনে দাঁড়াবে, অধিকসংখ্যক মানুষ যাকে ভোট দেবে তিনিই নির্বাচিত হবেন—গণতন্ত্রের এই সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য কি আমাদের দেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে অনুসরণ করা হচ্ছে?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও সম্ভবত প্রায় একই ধারায় হতে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও নেতা-কর্মীদের এ ব্যাপারে একাধিকবার সতর্ক করে বলেছেন, যারা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এমন খবরও সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে যে তৃণমূল পর্যায়ে কেন্দ্রের নির্দেশ না মানার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি অনুসরণ করছেন অনেক মন্ত্রী-এমপি।

নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে একজন প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়-সমর্থকদের জড়িত থাকার অভিযোগ গণমাধ্যমেও ছাপা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও অবাধ করার জন্য দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করে নির্বাচন উন্মুক্ত রেখেছে দলটি। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি  ওয়াকওভার দেওয়ায় এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে আওয়ামী লীগই। অনেক উপজেলায় মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। শুধু তা-ই নয়, একে অন্যের বিষোদ্‌গার করছেন, যা পরে স্থায়ী বিরোধ বা সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কৌশল সফল হয়েছে। দলের এই কৌশলের কারণে জাতীয় নির্বাচন অনেক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ভোটের এই প্রতিযোগিতার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধ চাঙা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে। এই বিরোধ-কোন্দল মেটানোর কেন্দ্রীয় উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে শোনা যায় না।

অন্যদিকে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। কিন্তু এরই মধ্যে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন দল দুটির তৃণমূলের কয়েকজন নেতা। প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলায় বিএনপির ৪৫ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জামায়াতেরও কমপক্ষে ২২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দল দুটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে যাঁরা প্রার্থী হচ্ছেন, তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশনা পাঠানো হবে। এতে কাজ না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। তবে দলটির এই বার্তা ভোটে আগ্রহী তৃণমূলের নেতাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে দলের ভেতরেই।

দুটি কৌশল থেকে সরকার এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে, সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। কারণ, যেকোনোভাবে বিএনপিকে এই নির্বাচনে আনা গেলে তাদের ‘একতরফা’ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক, তা মিটে যাবে। অন্যটি হলো, উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে গেলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ভরাডুবি হতে পারে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে। মূলত সংসদ নির্বাচনে এর ইঙ্গিত পেয়ে এবার আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করেছে, দলীয় প্রতীক না থাকলে দলীয় ও স্বতন্ত্র বিভেদ থাকবে না, বিএনপিও ভোটে আসবে। ফলে বিএনপিকে হাতে গোনা কয়েকটি উপজেলায় জয় দেখিয়ে তারা নির্বাচন জায়েজ করে নেবে। এতে বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলনে তৈরি হওয়া নৈতিক অবস্থানও নষ্ট হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের এই কৌশল কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে এটুকুই বলা যায় যে, এতে স্বস্তিতে নেই বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে দুই দলের অস্বস্তির কারণ আলাদা। টানা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগে তৈরি হয়েছে কিছু সাংগঠনিক সমস্যা আর দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপিতেও জমেছে অনেক আবর্জনা। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে দল দুটি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা সক্ষম হবে, তার ওপর দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির অনেক কিছুই নির্ভর করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত