Ajker Patrika

ইজারার শর্ত মানছেন না কেউ

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪৭
ইজারার শর্ত মানছেন না কেউ

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারার বগাচতর খাল। এই খালটি পাশের লামা পাহাড় থেকে বেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কূলঘেঁষে সমুদ্র উপকূলে নেমেছে। একসময়ের প্রবহমান এ খাল যৌবন হারিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এই খালেই ডুলাহাজারা-২ ও ডুলাহাজারা-৪ নামের দুটি বালুমহাল রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কয়েক বছর ধরে এ মহালগুলোর ইজারাদাররা আহরণ নয়, একেবারে খাল ও আশপাশের পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে বালু তুলে নিয়ে গেছেন।

এখন এই খালে বালু নেই বললেই চলে। তারপরও কোটি টাকায় জেলা প্রশাসন থেকে মহালগুলো ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অনেকের অভিযোগ এর পেছনের উদ্দেশ্য, এই মহালের ইজারার কাগজ ব্যবহার করে পাশের সংরক্ষিত বনভূমি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে বালু ও মাটি লুট করা।

একই অবস্থা জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, সদর, রামু ও উখিয়ার অন্তত আরও ২০টি মহালের। কোথাও ইজারার শর্ত মানা হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ প্রায় সময় অবৈধভাবে বালু তোলার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও মামলা দিয়েও তা রোধ করতে পারছে না।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় ৩৮টি বালুমহাল রয়েছে। প্রতিবছর বাংলা সনে মহালগুলো ইজারা দেওয়া হয়। এ বছরও আগামী ১৪২৯ সনের ইজারা দেওয়ার জন্য গত বুধবার জেলা বালুমহাল মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়েছে। 
এ ছাড়া এসব মহালের বাইরে মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী এবং পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরি থেকে অন্তত ৫০টি স্পট থেকে প্রভাবশালীরা অবাধে বালু লুট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে সবচেয়ে বেশি চকরিয়ায়। এ উপজেলায় রয়েছে ১৫টি বালুমহাল। পাহাড় থেকে নেমে আসা খাল ও ছড়ার এ মহালগুলোতে বালু উত্তোলনের নামে পাহাড় নিধন ও জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল এলাকার দাঙ্গারবিল নামের একটি বিল থেকে প্রায় ৩০ ফুট গভীর করে মাটি ও বালু লুট করা হয়েছে। এই বালু লুটের কারণে এলাকার লোকজনের জমি ও বাড়িঘরের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কও হুমকির মুখে। এর মধ্যে পার্কটির নিরাপত্তা দেওয়াল হেলে পড়েছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ বারবার বাধা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানা গেছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার ছেলে, চকরিয়া উপজেলার এক শীর্ষ নেতার ভাই, কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের হাতেই মহালগুলোর ইজারা

রয়েছে। তাঁরা এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেট করে বালু তুলছে। এতে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। বন বিভাগের দাবি, জেলা বালুমহাল কমিটির ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জায়গায় থেকে বালু তোলার জন্য ইজারা দেওয়া হলেও ইজারাদাররা বন বিভাগের এলাকায় ঢুকে বালু তুলছে, যা মহাল আইনে বেআইনি। কারণ সংরক্ষিত বন থেকে বালু তোলার কোনো বিধান নেই।

কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী প্রধান ইব্রাহীম খলীল মামুন বলেন, চকরিয়ার ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী ও খুটাখালীর পাহাড়ি এলাকায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে এসব এলাকার সমৃদ্ধ সংরক্ষিত বন উজাড়ের পাশাপাশি পাহাড় ধ্বংস হয়ে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

রামু, ঈদগাঁও ও চকরিয়ায় বনভূমির কয়েকটি এলাকা থেকে বালু তোলার কথা জানিয়ে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ড. প্রান্তোষ চন্দ্র রায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব ধ্বংসযজ্ঞ দেখলে মনে হবে কোনো ভিন গ্রহে এসে পড়েছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।’ 
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার আজকের পত্রিকাকে জানান, সংরক্ষিত বনের আশপাশের ১০-১২টি বালুমহাল ইজারা প্রদানে আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, বন বিভাগের আপত্তির বিষয়টি বিবেচনা করা 
হচ্ছে। কেউ ইজারা শর্ত না মানলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সেনাসদস্যের বাড়িতে হামলা-আগুন দেওয়ার অভিযোগ

ফেসবুকে কমেন্টের জেরে বাড়িতে গিয়ে হুমকি, পরদিন ঢাবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ

সরকারি অফিসে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ, নারীসহ গ্রেপ্তার ৩

বাংলাদেশ অধিনায়কের হাতে যে কারণে ‘তামিম নিখোঁজ’ প্ল্যাকার্ড

ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক: লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত