Ajker Patrika

নলেন গুড়ে উৎসবের আমেজ

জিয়াউল হক, যশোর
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ৪০
নলেন গুড়ে উৎসবের আমেজ

খেজুর রসের মৌ মৌ গন্ধে সুবাসিত হয়ে উঠছে যশোরের খাজুরা অঞ্চল। শীতের ঋতু শুরু না হলেও এখানে শুরু হয়েছে আগাম রস সংগ্রহের পালা। গাছিদের ঘরে ঘরে চলছে ‘নলেন গুড়’ তৈরির উৎসব। স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় এ গুড়ের বেশ চাহিদা থাকলেও প্রাকৃতিক কারণেই এর উৎপাদন খুবই সীমিত।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গড়ে ৬ টনের মতো নলেন গুড় উৎপাদন হয়। যা জেলার মোট গুড় উৎপাদনের ১ ভাগেরও কম।

শশ্নুদাহ গ্রামের ওদুদ মোল্লা প্রায় ৩০ বছর ধরে রস সংগ্রহ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে তিনি ৮০টি গাছে ছা দিয়েছেন। প্রায় এক মাস ধরে প্রস্তুতির পর গতকাল বুধবার প্রথম রস সংগ্রহ করতে পেরেছেন তিনি।

ওদুদ মোল্লা জানান, অক্টোবর মাসের শেষের দিকে শীতের আমেজ আসতেই শুরু হয় খেজুরের রস আহরণের প্রস্তুতি। গাছ পরিচর্যা, ছা দেওয়া, চোখ তোলার পর আসে মাহেন্দ্র ক্ষণ। একটু শীত পড়লেই ছা দেওয়া চোখে দেওয়া হয় নলি। সেখান থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে আসা রসকেই বলা হয় নলেন রস। যা দিয়ে প্রস্তুত হয় স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় নলেন গুড়।

ওদুদ মোল্লা বলেন, ‘নলেন রস সংগ্রহের জন্য খুব বেশি একটা সময় পাওয়া যায় না। কেননা, শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকলে গাছে ছা দিতে হয় বেশি। যা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। গাছ শুকানো কিংবা আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে দুই–এক সপ্তাহের মধ্যেই নলেন রস পরিণত হয় জিরেন রসে।’

ষাটোর্ধ্ব রকিব হোসেন বলেন, ‘শুরুতে রস খুবই অল্প হয়। এ সময় অন্তত ৮-১০টি গাছ মিলে মাত্র এক ভাঁড় রস পাওয়া যায়। তবে এর চাহিদা অনেক। ইতিমধ্যে ১৭-১৮ জন আমাকে নলেন গুড় দেওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু সেটি সম্ভব হবে না। কেননা, এক ভাঁড় রসে সর্বোচ্চ এক কেজি নলেনের গুড় তৈরি করা যায়। আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি দিতে গিয়ে আর বিক্রি করার মতো গুড় থাকে না।’

ভবানীপুরের শাহীন হোসেন বলেন, ‘গুড়ের জন্য নলেন খুব ভালো। আর রসের জন্য জিরেন। নলেন রসের গন্ধ অতুলনীয় হলেও তা খেতে অতটা সুস্বাদু নয়। যতটা সুস্বাদু এর গুড়। অন্যদিকে জিরেন রস খেতে খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। কিন্তু জিরেন রস দিয়ে তৈরি গুড়ের স্বাদ, নলেনের থেকে অনেক কম। যে কারণে নলেনের গুড়ের চাহিদা থাকে সব সময়ই। দামের ক্ষেত্রেও নলেনের গুড়, জিরেনের গুড়ের প্রায় দ্বিগুণ।’

বুধবার সকালে ফুলবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, লিপি খাতুন নামের এক বধূ মৌসুমের প্রথম নলেনের গুড় প্রস্তুতে ব্যস্ত। ওই গুড় দিয়ে একই সঙ্গে তিনি পায়েস আর পিঠা তৈরি করছিলেন।

লিপি খাতুন বলেন, ‘নতুন ধান দিয়ে নলেন গুড়ের পায়েস খুবই সুস্বাদু। এ জন্য কয়েক দিন আগেই জামাই-মেয়েকে দাওয়াত দিয়েছি। গতকাল তাঁরা বেড়াতেও এসেছেন। বছরের এই উৎসবটি আমরা পারিবারিকভাবেই পালন করে থাকি।’

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা আফরোজ বলেন, ‘যখন আমন ধান কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করে, অনেকটা তেমন সময়েই মেলে নলেন গুড়। ফলে এ সময়টিতে গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। গত বছর করোনার কারণে এ আমেজে ভাটা পড়লেও চলতি বছর সেই উৎসব আবারও ফিরে আসে।’

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গত বছর যশোরে সাড়ে তিন হাজার টন খেজুরের গুড় উৎপাদন হয়েছিল। এ মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টন। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণেই নলেন গুড়ের উৎপাদন অনেক কম হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে গ্রামে গ্রামে খেজুর গাছ রোপণের কর্মসূচি প্রতি বছরই করা হয়। এভাবে গাছের সংখ্যা বাড়ানো গেলে নলেন গুড়ের উৎপাদনও বাড়বে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বন্দর-করিডর আপনার এখতিয়ারে নেই, বিদেশি উপদেষ্টাকে বিদায় করুন: ইউনূসকে সালাহউদ্দিন

জামায়াতের কেউ ইমাম-মুয়াজ্জিন হতে পারবে না: আটঘরিয়ায় হাবিব

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

দায়িত্ব পেয়েই ‘অনিয়ম-দুর্নীতিতে’ মাসুদ রানা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত