Ajker Patrika

নাব্যতা নেই বৈঠাখালি নদীর

ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ২২
নাব্যতা নেই বৈঠাখালি নদীর

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার বৈঠাখালি নদী মরে যাচ্ছে। এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় কৃষি, যোগাযোগ ও কর্মসংস্থান সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। দিন-দিন এই সমস্যা আরও প্রকট হবে। অবিলম্বে নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা না হলে কৃষি উৎপাদন হবে হ্রাস ও বেকারত্ব বাড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার আবদুল্লাপুরের দক্ষিণে প্রবাহিত কালনী নদীর কলমা ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের পাশ থেকে বৈঠাখালি নদীর শুরু। নদীটি কলমা ইউনিয়নের চণ্ডীপুর, কাকুরিয়া, জলডুব, অষ্টগ্রামের বড় হাওর, কেউডা, পূর্ব অষ্টগ্রামের কবিরখান্দান, বাঁধাঘাট হয়ে আবার ইকুরদিয়ার কালনী (মেঘনা শাখা) নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠাখালি (মাকসা) নদীতে এক সময় কলকাতাগামী জাহাজ চলাচল করত। পূর্ব অষ্টগ্রামের বাঁধাঘাটে ছিল স্টিমার (জাহাজ) স্টেশন। আজমেরিগঞ্জ, মারকলি, কাকাইলছেউ থেকে মিঠামইনের হেমন্তগঞ্জ, কাটখাল, বৈরাটি, অষ্টগ্রামের খয়েরপুর আবদুল্লাহসহ কয়েক ইউনিয়নের মানুষ নৌপথে ভৈরবের সঙ্গে যাতায়াত করে, পণ্য পরিবহন করত এই নদীপথে। কয়েক হাজার হেক্টর বোরো জমির চাষে পানি সেচ হতো এই নদী থেকে। কয়েক গ্রামের শত শত জেলে বংশ পরম্পরায় জীবিকা অর্জন করত এই নদীতে মাছ ধরে।

কিন্তু চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই দেখা যায়, এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী শুকিয়ে প্রায় খাল হয়ে গেছে। দুই দশক আগের কয়েক শ মিটার প্রস্থ নদীর মুখ এখন ৪০ থেকে ৫০ ফুটের নালায় পরিণত হয়েছে। নদীর উৎপত্তি ও মিলনস্থল শুকিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে স্রোত। কৃষকদের আশঙ্কা ভরা সেচ মৌসুমে দেখা দেবে চরম পানি সংকট। তাই দ্রুত নদী খনন করে নদীর নাব্যতা না বাড়ালে জেলে ও কৃষকেরা বিপদে পড়বেন।

কাকুরিয়া গ্রামের জেলে হরিলাল দাস বলেন, ‘বৈঠাখালি গাঙ্গে মাছ ধরে এককালে আমাগো জীবন চলতো। গাঙ্গে পানি না থাকায়, জমি চাষ করে চলি কোনো রকমে। এহন জমিতে পানি সেচ দিতে না পারলে ভাতে মরুম।’

কবিখান্দান চরের কৃষক আশরাফ মিয়া বলেন, ‘এইবার এখনই যেভাবে পানি কমছে, ফাল্গুন চৈত্র মাসে কী অবস্থা হবে! আল্লাহ ভালো জানে। এই নদী না বাঁচলে কৃষক জাইল্ল্যা (জেলে) সবাই পথে বসতে হবে। নদী খুদানি (খনন) এখন ফরজ।’

পরিবেশবিষয়ক সামাজিক সংগঠন ‘হাওরাঞ্চলবাসীর’ ঢাকা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বাবু বলেন, বৈঠাখালী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সময়ের অন্যতম দাবি। এ দাবি যত দ্রুত পূরণ হবে, তত মঙ্গল। তা না হলে, কৃষি উৎপাদন ও যোগাযোগ আরও ব্যাহত হবে। জেলে সম্প্রদায়ের বেকারত্ব বাড়বে।’

কলমা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাধাকৃষ্ণ দাস বলেন, এই নদী মরে যাওয়ায়, শত শত জেলে বেকার হয়ে গেছে। জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করেছে জেলেরা। এখন সেচের অভাবে চাষাবাদও ব্যবহৃত হচ্ছে। নদীটি খনন না হলে বেকারত্ব বাড়ার সঙ্গে কমবে কৃষির আবাদ। এই বিষয়ে সরকারি উদ্যোগ জরুরি।

মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘জেলার অনেকগুলো নদী খনন করা হচ্ছে এবং নতুন করে আরও নদী খনন হবে। বৈঠাখালি এই তালিকায় রয়েছে কী না, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। প্রকল্প তালিকা দেখে নিশ্চিত হতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত