Ajker Patrika

শিল্পবর্জ্যে শীতলক্ষ্যার সর্বনাশ

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
শিল্পবর্জ্যে শীতলক্ষ্যার সর্বনাশ

দখল-দূষণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদী। নদীর পারে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে পানি। আগের মতো নদীতে আর মিলছে না মাছ। এতে বিপাকে পড়েছেন নদীপারের মৎস্যজীবীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালীগঞ্জের মূলগাঁও এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতীরে দেশের খ্যাতনামা একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য কাঁচামাল বহনকারী অসংখ্য মালবাহী জাহাজ যত্রতত্র নোঙর করে রাখা হয়েছে। নদীতীরে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাগুলোতে নেই ইটিপি ব্যবস্থা। কিছু কিছু কারখানায় ইটিপি থাকলেও তা বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখা হয়। তবে প্রশাসনের অভিযানের খবরে সচল হয় ইটিপিগুলো। এদিকে নদীর পাড় দখল করে যে যার মতো করে গড়ে তুলছেন বিভিন্ন স্থাপনা। সেসব স্থাপনার ময়লা-আবর্জনা গিয়ে মিশছে নদীর পানিতে।

শীতলক্ষ্যা নদী পারের বাসিন্দা কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামের বিষ্ণু মণ্ডল (৪৫) জানান, ‘শীতলক্ষ্যায় মাছ ধরে আমার বাপ-দাদারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। বংশপরম্পরায় সেই পেশাকে এখন আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কারণ, নদীপারের শিল্পকারখানার বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে গেছে। তাই আগের মতো আর শীতলক্ষ্যায় মাছ পাওয়া যায় না।’ 
কালীগঞ্জ খেয়াঘাটের মাঝি, নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া গ্রামের বকুল মিয়া (৪৬) বলেন, ‘১৯৮৮ সাল থেকে শীতলক্ষ্যার বুকে বেড়াচ্ছি। একসময় শীতলক্ষ্যা নদী অনেক বড় ছিল; কিন্তু দিনে দিনে নদীর দুই পাড় দখল করে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলায় নদীর আকার ছোট হয়ে গেছে।

দখলের এই ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন হয়তো শীতলক্ষ্যা নদীর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

স্থানীয়রা বলছেন,  অর্থনৈতিক প্রয়োজনে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নদী ও নদীর পানিকে ব্যবহার করলেও নদীর প্রতি তাঁরা কোনো দায়িত্ব পালন করছেন না। নদীতীরবর্তী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ইটিপি নিশ্চিত করার পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন  বলেন, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অফিস, কৃষি অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআরডিবি, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটি ও মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নদী রক্ষার কাজকে এগিয়ে নিতে হবে। নদীদূষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নিলে দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে নদীগুলো।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি আসসাদিকজামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নদী রক্ষা কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএ আলাদাভাবে নদী নিয়ে কাজ করছে। নদী রক্ষায় অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএনও আরও বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী শিল্পকারখানাগুলোর ইটিপি নিশ্চিত করতে কাজ করছি। এটা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরও গুরুত্বসহকারে কাজ করছে। ইটিপির বাইরে যদি কেউ ময়লা পানি, বর্জ্য নিঃসরণ করেন তা হলে তাঁদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

‘ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির’, কারখানার ভেতর আত্মহত্যার আগে শ্রমিকের ফেসবুক পোস্ট

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত