Ajker Patrika

তড়িঘড়ি ধান কাটছেন কৃষক

রাজন চন্দ, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ৪৫
তড়িঘড়ি ধান কাটছেন কৃষক

কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ফলে বাঁধ ভেঙে যেকোনো সময় তলিয়ে যেতে পারে তাহিরপুর উপজেলার শনির, মাটিয়ানসহ কয়েকটি হাওরের বোরো ধান। এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় হাওরের পাকা ধান গোলায় তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কৃষকেরা।

প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জেলার বৃহত্তম হাওর শনির ও মাটিয়ান পাড়ে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশে বোরা ধান কাটা। তবে ধান কাটা শ্রমিকের সংকটের পাশাপাশি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেশি হওয়ায় হতাশ কৃষকেরা।

শনির ও মাটিয়ান হাওর ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা খলায় ধান কাটা, মাড়াই ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমি থেকে ধান মাড়াই করার স্থানে আনতে কৃষকেরা নিজেই পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে মাঠে কাজ করছেন নারী ও শিশুরা।

অনেক স্থানে আবার দেখা যায়, শ্রমিক ধান কাটছেন এবং পাশের খালি জায়গায় রাখছেন। এক দল পুরুষ ধান মেশিনে মাড়াই করছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা এই ধানগুলো খলায় নিয়ে শুকানোর কাজ করছেন। পরে এই ধানগুলো ঠেলা ও ট্রাক্টরে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি পাঁচ হাল জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। রোজার কারণে ও বয়সের ভারে নিজে ধান কাটতে পারছেন না। তাই ১২ জন ধান কাটার শ্রমিক নিয়েছেন। খাবারসহ প্রতিদিন শ্রমিকদের ৫০০ টাকা হারে দিতে হচ্ছে। ফলে ১২ শ্রমিকের প্রতিদিন খাবারসহ খরচ কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা।

মাটিয়ান হাওর পাড়ের বড়দল গ্রামের সামায়ুন কবির পাঁচ বিঘা জমিতে, পুরানহাটি গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ প্রায় দুই একর জমিতে, রতন শ্রী গ্রামের আব্দুস সালাম সাত একর, শামীম মিয়া দুই বিঘা, সুর্যেরগাঁও গ্রামের সত্যরঞ্জন ২২ বিঘা, লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক উসমান আলী ১২ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন।

তাঁরা প্রত্যেকেই জানান, এবার তাঁরা বিআর-১৪, ব্রি-২৯, ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেছেন। এবার চৈত্র মাস থেকে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।

গত ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ থেকে ধান কাটা শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে ধানশ্রমিক খরচ বেশি হওয়ায় তাঁরাও হতাশ। পয়লা বৈশাখ থেকে প্রায় প্রতিদিন রাতে ভারী বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষক সেলিম আখঞ্জী বলেন, ‘প্রতি রাতেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বোরো ধান যেন আরও পোক্ত হয়, সেজন্য অপেক্ষা করছেন অনেকে। কিন্তু বৃষ্টি দেখে ভয় হয়। তবে উপজেলা প্রশাসনের মাইকিং ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই বোরো ধান কিছুটা কাঁচা থাকতেও কেটে ফেলেছেন।’

অনেক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজে গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে আমরা উৎকণ্ঠায় আছি। পানি আসার আগেই বাঁধগুলো ভালো করে তদারকি করলে এখন এমন পরিস্থিতি হতো না।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান কাটতে শ্রমিক-সংকট থাকলেও সরকার ভর্তুকি মূল্যে ধান কাটার যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার) দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০টি কম্বাইন হারভেস্টার দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য ৮০ শতাংশ পাকা ধান কেটে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বোরোচাষিদের দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য আগাম সতর্কতা জারিও করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত