Ajker Patrika

কুড়াল-কাঠের সঙ্গে এক যুগ

আশরাফুল আলম, কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ)
Thumbnail image

সত্তরোর্ধ্ব খোকন ঘোষ। এলাকার সবাই চেনেন প্যাঁচা নামে। এক যুগ আগে ক্যানসার কেড়ে নিয়েছে স্ত্রীকে। বয়সের ভারে শরীর চলে না। দুই বছর ধরে বয়স্ক ভাতার টাকাও পান না। অনলাইনে আবেদনের সময় এনআইডিতে বয়স কম থাকায় নাম কাটা গেছে। বেঁচে থাকার তাগিদে হাতে নিয়েছেন কুড়াল, কাটেন কাঠ। সেই কাঠের লাকড়ি বিক্রি করেই দিনাতিপাত করেন। খোকন ঘোষের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের ভানুডাঙ্গা গ্রামের ঘোষপাড়ায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে আগে কাঁধে বেকারির সদাইপাতি বিক্রি করতেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে যা কেনাবেচা করতেন, সেই টাকা দিয়েই স্ত্রীকে নিয়ে চলতেন। কিন্তু স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর চলার গতি পাল্টে যায়। কাঁধে আর তুলতে পারেননি সদাইয়ের ভাঁড়। দিন এনে দিন খাওয়াই জুলুম। এক যুগ আগে স্ত্রী মারা যান। স্ত্রীশোকে কাতর খোকন ঘোষ শুধু মুছতেন চোখের জল। পেটের দায়ে এবার হাতে তুলে নিয়েছেন কুড়াল। গ্রামের বিভিন্ন রাস্তায় কাটা গাছের অবশিষ্ট গোড়া কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে বের করেন লাকড়ি। সেই লাকড়ি ২০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি করেন। তা দিয়েই চাল, ডাল, লবণ এনে খান। তবে বয়সের ভারে তাঁর শরীর আর পারে না।

গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ভানুডাঙ্গা গ্রামে নবনির্মিত শ্মশান এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে কুড়াল দিয়ে গাছের গোড়া কাটতে দেখা যায় তাঁকে। এ সময় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জমিজুমা কিছু নাই। বাড়িত খালি একটো ঘর আছে। দুই বছর আগে অপিসে জমা দিছিলাম। তারা কম্পিটারে দেয়ার পরে নাম কাইটা গ্যাছে। কইছে আমার বয়স কম। আগে সরহারি টেহা (বয়স্ক ভাতা) পাছি। দুই বছর আগে নাম কাইটা গ্যাছে।’

সন্তানদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটো ব্যাটা আছে। উই কামাই হইরা বউ নিয়া খায়। আমার মতো আমি খাই। বুড়া হইছি দেইহা কেউ কামলা নেয় না।’ 
স্থানীয় বাসিন্দা আয়নাল হক বলেন, আগে প্যাঁচা বাড়ি বাড়ি সদাই বিক্রি করতেন। এখন আর পারেন না। গাছের গোড়া থেকে খড়ি বের করে বিক্রি করে যা আসে, তা-ই দিয়েই সংসার চলে তাঁর।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস ছামাদ বলেন, ‘খোকনের বয়স অনেক। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম থাকায় বয়স্ক ভাতার তালিকা থেকে নাম কেটে গেছে।’ 
চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান মুকুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি তাঁর বয়স হয়ে থাকে, অবশ্যই বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত