Ajker Patrika

স্বস্তিতেও কাটছে না শঙ্কা

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ১৫ মে ২০২২, ০৯: ১১
স্বস্তিতেও কাটছে না শঙ্কা

আড়াই মাস আগেও দেশের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীতে ছিল ঠাসাঠাসি। একটি শয্যা পাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যেত রোগীর স্বজনদের। কিন্তু চিত্র পাল্টে গেছে। বেশির ভাগ হাসপাতালে এখন কোনো রোগীই নেই।

মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা চলমান থাকলেও নেই কঠোর কোনো বিধিনিষেধ। ফলে সাধারণ মানুষও যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। রোগী কমে যাওয়ায় হাসপাতালের নির্ধারিত শয্যাও কমিয়ে আনা হচ্ছে। কিন্তু করোনার উৎপত্তিস্থল চীন, প্রতিবেশী ভারত ও উত্তর কোরিয়ায় কিছুদিন ধরে পরিস্থিতি নতুন করে জটিল হতে থাকায় দেশেও নতুন ঢেউয়ের শঙ্কার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেনের মত, ‘অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। মাস্ক পরা, জ্বর হলে পরীক্ষা করা, অফিস-আদালতে প্রবেশের আগে তাপমাত্রা মাপাসহ অনেকে নির্দেশনা এখনো রয়েছে। কিন্তু আমরা শিথিলতা দেখাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ টিকার আওতায় না আসছে, ততক্ষণ নিরাপদ নই।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে করোনার ওমিক্রন ধরন হানা দিলে পরের দুই মাস পরিস্থিতির খুবই অবনতি হয়েছিল। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ নাগাদ প্রতিদিন দেশে ১৫-১৬ হাজার করে রোগী শনাক্ত হচ্ছিলেন। মৃত্যুটাও বেড়ে দৈনিক ৩০-৪০ জনে পৌঁছেছিল। তবে ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ সংক্রমণ-মৃত্যু দুই অনেক কমে আসে। মার্চ-এপ্রিলে গিয়ে সেটা একেবারে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় চলে আসে। মার্চে ২০ দিনে মারা যান ৮৫ জন। ওই মাসে রোগী শনাক্ত হন ৮ হাজার। এপ্রিলে শনাক্ত কমে ১১৪ জনে নামে, পুরো মাসে চার দিনে মৃত্যু হয় ৫ জনের। গত ২০ এপ্রিলের পর থেকে দেশে এখনো নতুন করে আর কেউ মারা যাননি করোনায়। আর চলতি মে মাসে এখনো আড়াই শ জনের মতো রোগী শনাক্ত হয়েছেন। কারও মৃত্যু হয়নি।

সংক্রমণ-মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আসায় বদলে গেছে হাসপাতালের চিত্রও। কয়েক মাস আগেও যেখানে করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চরম হিমশিম খেতে হয়েছিল চিকিৎসকদের, ব্যাহত হয়েছিল অন্যান্য সেবা, সেখানে এখন রোগীশূন্য শয্যাগুলো ভরে গেছে ধুলোয়। কোথাও কোথাও কোভিড শয্যা নন-কোভিড রোগীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ও এইচডিইউগুলোতে (হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট) রোগী ভর্তির সুযোগ থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় ফাঁকাই রাখা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে সারি সারি দাঁড়ানো অ্যাম্বুলেন্স। চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা অলস সময় পার করছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালের ৫৫৪ শয্যার প্রায় সব খালি। ধুলোর আস্তরণ পড়েছে অনেক শয্যায়। রোগী না থাকায় যত্নও নেওয়া হচ্ছে না ঠিকঠাক।

দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক বলেন, ‘এখন দু-একজন যাঁরা আসছেন, গুরুতর না হলে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না।’

একই চিত্র করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত রাজধানীর বাকি ১৪টি হাসপাতালে। এমনকি করোনা রোগীদের জন্য গড়ে ওঠা হাজার শয্যার অস্থায়ী হাসপাতালও (ফিল্ড হাসপাতাল) এক সপ্তাহ ধরে রোগীশূন্য। এই হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১০ মে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী জুন-জুলাইয়ে করোনার আরও একটি ঢেউয়ের শঙ্কার কথা জানানো হয় সেখানে। সেই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আরও কিছুদিন প্রস্তুতি থাকবে।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশের করোনা পরিস্থিতি এই মুহূর্তে স্বস্তির পর্যায়ে আছে, তারপরও শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ভারত, চীন ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর পরিস্থিতি নতুন করে ভাবাচ্ছে। নতুন ঢেউ আসার আশঙ্কা তাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রুয়া নির্বাচন: বিএনপিপন্থীদের বর্জন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জামায়াতপন্থী ২৭ জন নির্বাচিত

সৌদি আরবের কেনা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান করে কিসের ইঙ্গিত দিল রিয়াদ

‘পাপ কাহিনী’র হাত ধরে দেশের ওটিটিতে ফিরল অশ্লীলতা

বীর্যে বিরল অ্যালার্জি, নারীর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে চিকিৎসকদের নতুন সতর্কতা

আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলের বঁটির আঘাতে এসআই আহত, আটক ২

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত