Ajker Patrika

পদ্মা পাড়ে স্বপ্ন জয়ের প্রস্তুতি

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৭: ৪২
পদ্মা পাড়ে স্বপ্ন জয়ের প্রস্তুতি

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী মাসের শেষের দিকে খুলে দেওয়া হতে পারে পদ্মা সেতু। স্বপ্নের এই সেতু ঘিরে আগ্রহের শেষ নেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের। উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার আগেই এখানকার চায়ের দোকান থেকে অফিসপাড়া—সব জায়গাই আলোচনার কেন্দ্রে এখন পদ্মা সেতু।

মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ, এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধন। আগামী জুনের শেষের দিকে সেতু চালু হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মহলে। ১১ মে বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  উদ্বোধনের আগেই স্বপ্নের সেতুকে নিজ চোখে দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেতুর জাজিরা প্রান্তে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

সেতুকে কেন্দ্র করে এর আশপাশে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। সেতুটি চালু হলে রাজধানীসহ দেশের দক্ষিণের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে শরীয়তপুরের পরিবহন ব্যবসায়ীরা।

পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৪২টি পিলার ও ৪১টি স্প্যানের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু। দুই প্রান্তে উড়াল সড়ক ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

গত মাসে শেষ হয়েছে সেতুতে পিচঢালাই ও ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ। এখন সেখানে চলছে বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপনের কাজ। বর্তমানে চলছে সেতুতে সাইন, সংকেত ও মার্কিংয়ের কাজ। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৭ সালে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সেতুর উভয় প্রান্তের সংযোগ সড়ক। নদী শাসনের কাজও রয়েছে শেষ পর্যায়ে।

জাজিরা প্রান্তে নির্মিত ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটারের এই দৃষ্টিনন্দন নদীর তীর রক্ষা বাঁধ এখন বিনোদনপ্রেমীদের জন্য পর্যটনের উপযুক্ত স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে পদ্মা সেতু। মোংলা সমুদ্রবন্দর ও বেনাপোল স্থালবন্দরের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। সড়ক যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু।

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থেকে পদ্মা সেতু দেখতে আসা নুরুজ্জামান মৃধা বলেন, শুনেছি জুনের শেষের দিকে সেতু উদ্বোধন করা হবে। নিজ জেলায় পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এটা ভাবতেই বুকটা গর্বে ভরে যায়। উদ্বোধনের আগে দেখতে এসেছি পরিবার-পরিজন নিয়ে।

স্থানীয় নাওডোবার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ‘এখন আর আমাদের নদী পার হতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। ফেরিঘাটের দীর্ঘ ভোগান্তির অবসান ঘটবে। আমরা এখন পদ্মা বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষার প্রহর গুনছি।’

জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিল্পোদ্যোক্তা মোবারক আলী শিকদার বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ তৈরি করবে। হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে পদ্মা সেতু।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, প্রকল্প এলাকার আশপাশে অনেকেই কল-কারখানা নির্মাণের জন্য জায়গা কিনে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সেতু চালু হওয়ার পর এই এলাকাটি দেশের অন্যতম একটি বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পাবে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতু দেশের জন্য একটি সম্মান ও গৌরবের অবকাঠামো। এই অঞ্চলের মানুষ সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়। জুনে সেতুটি খুলে দেওয়ার খবরে এই অঞ্চলের মানুষ উচ্ছ্বসিত। পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের জীবযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আনবে।

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত