Ajker Patrika

গরুর হাটও মনে হবে সুপারশপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গরুর হাটও মনে হবে সুপারশপ

গোবর-চোনার কাদার পেস্টের মাখামাখি। সঙ্গে কখনো জুটে যায় গরুর দু-একটা লাথিও। আবার কখনো মাথার ওপর কাঠফাটা রোদ, নয়তো বৃষ্টি-বাদলে কাকভেজা। গরুর হাট যেন এমনই এক যুদ্ধ ময়দান। সেই যুদ্ধ জয় করে ফেরার সময় কারও কারও হাতে ঝুলতে থাকে ছেঁড়া স্যান্ডেল। ঘরে ফিরে তিন সাবানে গোসল না করলে যেন গন্ধও যেতে চায় না।

যুগ যুগ ধরে এ-ই তো ছিল আমাদের কোরবানির পশুর হাট। এখনো মোটামুটি তাই-ই আছে। তবে এখন লেগেছে বদলের হাওয়া। অনলাইনে কোরবানির গরুর কেনা-বেচা বাড়ছে কয়েক বছর ধরে। সঙ্গে যোগ হয়েছে বড় বড় খামার। অনেকে পরিবারের নারী বা শিশুদের নিয়ে সেখানে যাচ্ছেন। বিশাল বিশাল ছাউনির নিচে সুন্দর পরিবেশে ঘুরছেন, ফিরছেন, গরু দেখছেন। পায়ের নিচে নেই ময়লা-আবর্জনা, মাথার ওপর ঘুরছে ফ্যান। কষ্ট হয়ে গেলে চেয়ার-টেবিলে বসে বিশ্রামও নেওয়া যায়। এমন পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার গরু। সব মিলিয়ে এক একটি খামার যেন ছোট ছোট গরুর হাট—গরুর সুপারশপ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরেই আছে এমন কয়েকটি খামার। সাদিক অ্যাগ্রো, আলমগীর র‍্যাঞ্চ, মেঘডুবি অ্যাগ্রো। শহরের অন্যান্য এলাকায়ও এদের শাখা আছে বা অন্যান্য খামার আছে। কয়েক বছর ধরে এসব খামার থেকে কোরবানির গরু বিক্রি বাড়ছে। এসব খামারে ঈদের দুই-দশ-বিশ দিন আগেই গরুর বুকিং দেওয়া যায়। গরু কিনেও সেখানে রাখা যায়। ঈদের এক-দুই দিন আগে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। নির্ধারিত দামের সঙ্গে কোনো হাসিল ও অতিরিক্ত খরচও আদায় করা হয় না। কোনো কোনো খামারে কোরবানির ব্যবস্থাও আছে। ঈদের দিন কোরবানি করে তারাই মাংস পৌঁছে দেয়।

মেঘডুবি অ্যাগ্রোর তত্ত্বাবধায়ক তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের সরাসরি এসে গরু দেখে কিনতে উৎসাহ দিয়ে থাকি। শুরুর দিকে এই বিক্রয় ব্যবস্থায় ক্রেতারা আস্থা না রাখতে পারলেও ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের অগ্রিম বুকিং দেওয়া গরু ডেলিভারি নিতে হলে ঢাকার যেকোনো স্থানে একটি গরু ১ হাজার ৫০০ টাকা চার্জ ধরা হয়।’

মেঘডুবিতে গতকাল গরু কিনতে গিয়েছিলেন সাইফুল ইসলাম নামের বেসরকারি এক চাকরিজীবী। তিনি জানান, এক আত্মীয়ের কাছে খামারের কথা জেনেছেন। তাই এখানে এসে পছন্দমতো গরু কিনেছেন। খামারের পাশে বছিলা হাউজিং সোসাইটিতে বাড়ি হওয়ায় একেবারে ঈদের দিন সকালে গরু নিয়ে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার আশপাশের অনেকে এই খামার ও পার্শ্ববর্তী খামার থেকে এবার কোরবানির গরু কিনেছেন। তাঁদের দেখে আমিও এসে কিনলাম। ঝক্কি ছাড়া বেশ স্বচ্ছন্দে গরু কিনতে পেরে ভালো লাগছে।’

বছিলা এলাকায় এমন অন্তত পাঁচটি খামার আছে, যেখান থেকে সরাসরি কোরবানির গরু কেনা-বেচা হয়। এমন বিকিকিনি থেকে পিছিয়ে নেই ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার বড় খামারগুলো। রাজধানীর অদূরে হেমায়েতপুরে জামাল অ্যাগ্রো খামার এক মাস আগে থেকে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু করেছে। ঈদের আগে তাদের সব গরু বিক্রিও হয়ে গেছে। এই খামারের দায়িত্বে থাকা আব্দুল বারেক মুঠোফোনে বলেন, ‘এবার প্রত্যাশার থেকে বেশি সাড়া পেয়েছি। খামার থেকে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রির জন্য ৪০টি গরু রেখেছিলাম। ঈদের এক সপ্তাহ আগেই সেগুলো বিক্রি ও বুকিং হয়ে গেছে।’

অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে কিনছেন কোরবানির গরু। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের দেলোয়ার জাহান শিক্ষিত তরুণ। ছোট পরিসরে চাষিদের কাছ থেকে কোরবানি উপলক্ষে গরু কিনে অনলাইনে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রান্তিক গরুচাষিদের থেকে নিরাপদ খাদ্য দিয়ে পোষা গরুগুলো সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। আজ পর্যন্ত আমার ১২টি গরু বিক্রি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৪৬ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ৫১ হাজার ২৯৮টি কোরবানির পশুর ছবি আপলোড করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গত ২২ জুন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার ৬৩টি। দেশের বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অর্থাৎ ২৪ হাজার ২৭৩টি কোরবানির পশুর ছবি আপলোড করা হয়েছে। এরপর ঢাকার অবস্থান। রাজধানীতে ছবি আপলোড হয়েছে ১২ হাজার ৯১৬টি কোরবানির পশুর ছবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রুয়া নির্বাচন: বিএনপিপন্থীদের বর্জন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জামায়াতপন্থী ২৭ জন নির্বাচিত

‘পাপ কাহিনী’র হাত ধরে দেশের ওটিটিতে ফিরল অশ্লীলতা

সৌদি আরবের কেনা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান করে কিসের ইঙ্গিত দিল রিয়াদ

আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলের বঁটির আঘাতে এসআই আহত, আটক ২

সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, আটক ৫

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত