Ajker Patrika

মূল্যবৃদ্ধির জাঁতাকলে পিষ্ট গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

ভালো নেই জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কাজলাপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। পানিসহ নানা সংকটে ভুগছেন এখানকার সদস্যরা। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সহায়-সম্বলহীন পরিবারগুলো।

উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে পূর্ব কাজলাপাড়া গুচ্ছগ্রাম। ছিন্নমূল ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হয় এ গুচ্ছগ্রামটি। প্রায় ৫০টি পরিবারের বসবাস এখানে। এ গ্রামের বাসিন্দা মগগু মিয়া। তাঁর কোনো জমিজমা নেই। সরকারি জমিতে টিনের দোচালা ছোট ঘর করে প্রায় তিন যুগ ধরে বাস করছেন ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে। তবে সে ঘরটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। মগগু মিয়া পেশায় রিকশাচালক। সারা দিনে সর্বোচ্চ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন তিনি। তা-ই দিয়েই চলে তাঁর সংসার। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে ৩০০ টাকায় সংসার আর চলছে না তাঁর। এখন খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছে তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের।

মগগু মিয়া বলেন, ‘৩০ বছর থেকে রিকশা চালাচ্ছি। অন্য কোনো কাজ পারি না। সারা দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আসে। তাতে আগে সংসার কোনো রকমে চলে যেত। কিন্তু হঠাৎ করে বাজারে আগুন লাগায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। সে কারণে এখন প্রতিদিনের আয়ের টাকায় আর সংসার চলছেন না। ধারদেনায় পড়ে গেছি।’

এমন অবস্থা শুধু মগগু মিয়ার নয়। এ চিত্র পূর্ব কাজলাপাড়া গুচ্ছগ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবারের।

সহায়-সম্বলহীন এ গ্রামবাসী নিম্ন আয়েরও নিচে বসবাস করে। কেউ রিকশা-ভ্যান, কেউ রাজমিস্ত্রি জোগালি, কেউ দিনমজুরি করে দিন যাপন করেন। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সবার জীবনে নেমে এসেছে হাহাকার। সারা দিনের উপার্জনে সংসার চালাতে না পেরে অনেকে এনজিওসহ ব্যক্তিগত ঋণে জড়িয়ে পড়েছেন। কেউবা জীবন-জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকাসহ অন্যত্র।

কথা হয় একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রজব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার কিছুই নেই। সরকারি জমিতে ঘর তুলে আছি। সে ঘরও নড়বড়ে। এক ছেলে। ওর আলাদা সংসার রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ওর-ই টানাটানির সংসার। ঘরবাড়ির কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানি না। এই বয়সে আমাকে কেউ কাজেও নিতেও চায় না। তারপরও মাঝেমধ্যে কাজ করি। আমার স্ত্রীর বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়েছে। সামান্য আয় আর বয়স্ক ভাতার টাকায় কোনো মতে দিন চলে। কিন্তু বাজারে চাল, ডাল, তেল ও তরিতরকারির দাম বেশি হওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’

গুচ্ছগ্রামের আরেক বাসিন্দা আবু হানিফ। পেশায় রাজমিস্ত্রি জোগাল। আবু হানিফ বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসারের ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। এ বাজারে একজনের আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার শেফা বলেন, গুচ্ছগ্রামের মানুষগুলো সহায়-সম্বলহীন। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার টিসিবির পণ্য ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চাল দিচ্ছে। এতে তাঁরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত