Ajker Patrika

বেনাপোলে ইমিগ্রেশন পার হতেই লাগছে ১০ ঘণ্টা

আজিজুল হক, বেনাপোল
বেনাপোলে ইমিগ্রেশন পার হতেই লাগছে ১০ ঘণ্টা

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে যাতায়াতে দুই পারের ইমিগ্রেশনপ্রক্রিয়া শেষ করতে কখনো কখনো ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে নোম্যান্সল্যান্ডে দীর্ঘ লাইনে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। এমনকি ইমিগ্রেশনপ্রক্রিয়া শেষ করার আগে মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েকজন যাত্রীর। এরপরও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। 

ভুক্তভোগীরা বলছেন, শীত, গরম কিংবা রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। 
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল সম্প্রসারণের কাজ চলছে। আর ভারত অংশে যাত্রীসেবা বাড়াতে তাদেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে।  

বন্দর সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। তাঁদের মধ্যে রোগী ও তাঁদের স্বজনই বেশি।

আগে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেড়ে আসা রাতের বাসগুলো বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাত সকাল ৬টায়। কখনো কখনো আরও দেরি হতো। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর বাসগুলো ভোর সাড়ে ৩টার মধ্যে বন্দরে পৌঁছায়। অথচ বন্দর খোলে সকাল সাড়ে ৬টায়। 

আর বন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল থাকলেও সেখানে পাসপোর্টধারীদের বিশ্রামের সুযোগ নেই। এ কারণে বন্দর খোলার আগপর্যন্ত ৩ ঘণ্টা সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। পরে সকাল সাড়ে ৬টায় বন্দর খুললে যাত্রীদের ভ্রমণ ও বন্দর ট্যাক্স কেটে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়। ইমিগ্রেশন সারতে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।  

একইভাবে ভারত অংশেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ দুর্ভোগ রয়েছে ফেরার সময়ও। ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, দুই পারের সময় ধরে কখনো কখনো ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্তও বিড়ম্বনা সইতে হয়। এ সময় কেউ অসুস্থ হলে বা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে আসার সুযোগ থাকে না। 

ইমিগ্রেশনের তথ্য বলছে, লাইনে অসুস্থ হয়ে জরুরি চিকিৎসা না পেয়ে চার বছরে ৫ জন যাত্রী মারা গেছে। সবশেষ গত ৩০ মার্চ বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করে ভারতে প্রবেশের জন্য নোম্যান্সল্যান্ডে লাইনে অসুস্থ হয়ে মারা যান যশোর কোতোয়ালি থানার বকচর এলাকার গোলাম রসুলের ছেলে নুর ইসলাম। এর আগে ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর হোসেন শেখ নামের এক বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী মারা যান। তিনি খুলনার দৌলতপুর উপজেলার পারমানিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর বেনাপোল সীমান্তে লাইনে অসুস্থ হয়ে মারা যান বিপ্লবী দাস। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফুলবাগান এলাকার রবিতোষের স্ত্রী। এর আগে ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আব্দুর রহিম নামের এক বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী মারা যান। তিনি ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার মো. জহিরুল হকের ছেলে।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের ২ মে বেনাপোল চেকপোস্টে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস নামের এক পাসপোর্টধারী যাত্রী মারা গেছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের ৪২৫/৯ ডিপি রোড এলাকার মৃত শশী চন্দ্র দাসের ছেলে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, ‘নোম্যান্সল্যান্ডে দীর্ঘ লাইনে অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে পাসপোর্টধারীরা। আমরা আন্তর্জাতিক মানের সেবা চাইছি।’ 

বেনাপোল আমদানি, রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করছেন পাসপোর্টধারীরা। ভারত ভ্রমণে প্রত্যেক যাত্রীকে ভ্রমণকর বাবদ বাংলাদেশ সরকারকে ১ হাজার ৫৫ টাকা এবং ভিসা ফি বাবদ ভারত সরকারকে ৮৫০ টাকা দিতে হয়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বেনাপোল বন্দরে যাত্রীছাউনি করতে জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ভারত অংশে সেবার মান বাড়াতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত