Ajker Patrika

তিন বছর ধরে চলছে সংস্কার

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ২০: ২৩
তিন বছর ধরে চলছে সংস্কার

গুলশানের নিকেতন এলাকার বাসিন্দা শরিফুল হাসান। পরিবারসহ এদিকটায় বাসা নেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল ফজলে রাব্বি পার্ক। ছুটির দিনে বাচ্চাকে নিয়ে এই পার্কে হাঁটা, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো—সব মিলিয়ে দারুণ সময় কাটছিল তাঁর। কিন্তু সংস্কারের নামে তিন বছর ধরে পার্কটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা, হতাশ হচ্ছেন শরীফুলের মতো অভিভাবকেরাও। আজকের পত্রিকাকে শরীফুল বলেন, ‘প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি—কবে কাজ শেষ হবে, আবার কবে ছেলেটাকে নিয়ে ঘুরব।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারদের গাফিলতি, নকশায় জটিলতা এবং প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী আমদানির ব্যর্থতায় পার্কটির কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যাচ্ছে না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্র অনুযায়ী, ‘উন্মুক্ত স্থানগুলোর আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় গুলশান পুলিশ প্লাজা-সংলগ্ন ফজলে রাব্বি পার্কের সংস্কারকাজ ২০১৯ সালের শেষ দিকে শুরু হয়। পার্কের উন্নয়নকাজে ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আট একর জায়গার পার্কটিতে নির্মাণকাজ চলায় তিন বছর ধরে সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

গত শনিবার পার্কে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে টিনের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ভেতরে কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিকেরা। পার্কটির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইট, বালু ও সিমেন্টের বস্তা। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চলতি বছরের জুনের মধ্যে পার্কটির কাজ শেষ হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, পার্কের সংস্কারকাজ মাত্র ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হয় কি না, সেটা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

ফজলে রাব্বি পার্কের গেটে পাঁচ বছর ধরে ফুচকা বিক্রি করেন মোহাম্মদ শামীম। তিনি বলেন, পার্ক যখন খোলা ছিল, তখন অনেক মানুষ এখানে আড্ডা দিতে আসতেন। সেই সময় ফুচকাও ভালো বিক্রি হতো। এখন তো লোকজন তেমন আসেন না। এলেও ভেতরে যেতে পারেন না।

ডিএনসিসির উন্মুক্ত স্থানগুলোর আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কাশেম জানান, ২০১৯ সালের শেষ দিকে পার্কের সংস্কারকাজ শুরু হলেও পরিবর্তিত ডিজাইনে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে ছয় মাস আগে। পার্কের নকশায় ওয়াসার পানির পাম্প ছিল, কিন্তু ওয়াসা তা সরাতে রাজি হয়নি। এ ছাড়া প্রথম নকশায় কিছু গাছ কাটা পড়ত। পরে গাছ না কেটে এবং পানির পাম্পের জায়গা বাদ দিয়ে নতুন করে নকশা করা হয়েছে। আবুল কাশেম বলেন, পার্কের নকশা পরিবর্তন এবং নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে প্রকল্প ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে।

নির্মাণকাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমআর কন্সট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি মাহবুব বলেন, ‘সমস্যার কথা তো সবই জানেন, তাই দেরি হচ্ছে। আরও কয়েক মাস লাগবে কাজ শেষ হতে।’ পার্কে অবস্থান করা ডিএনসিসির সহকারী প্রকৌশলী সামিদুল ইসলামও একই কথা জানান।

নকশা অনুযায়ী পার্কটিতে শব্দপ্রতিরোধী দেয়াল থাকবে, যা ইতিমধ্যে জার্মানি থেকে আনা হয়েছে। এ ছাড়া হাঁটার পথ, ব্যায়ামের জায়গা, কৃত্রিম পাহাড়, ব্যবস্থাপনা ভবন ও পাবলিক টয়লেট তৈরি করা হবে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে। নকশা তৈরিতে যুক্ত ছিলেন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক এস এম নাজমুল ইমাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা পরামর্শক হিসেবে নকশা তৈরি করে দিয়েছি। এখন দ্রুত বাস্তবায়নের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কিছু জটিলতার কারণে নতুন করে নকশা করা হয়েছে।’

নাগরিক ভোগান্তি কমাতে দ্রুত কাজ শেষ করা উচিত বলে মনে করেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, একটা পার্ক উন্নয়নের জন্য তিন বছরের দরকার হয় না। কোনো যুক্তি নেই। সিটি করপোরেশন হয়তো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি; যে কারণে স্থানীয়দের ভোগান্তি বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারকে। কাজ শেষ হলেই পার্ক খুলে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শতকোটি টাকার পাওনা বকেয়া রেখেই ‘দেশ ছাড়লেন’ ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিকেরা

‘অনিয়ম হয়নি’ বলায় এলজিইডি কর্মচারীকে পিটুনি

যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কিছুটা শুল্ক ছাড় পাবে বাংলাদেশ: বিজিএমইএ

দলীয় প্রধান আসবেন, তাই পুলিশ এনে খোলা হলো কার্যালয়ের তালা

যেভাবে চীনা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত