Ajker Patrika

সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ
সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। ধানি জমিতে পানির চাহিদা এখনো নদী-বিল থেকে মেটানো গেলেও খাওয়ার পানির জন্য উপজেলাগুলোতে চলছে হাহাকার; বিশেষ করে উজান এলাকায় এই সংকট আরও বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর, নবীগঞ্জ, বাহুবল উপজেলার নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। এ ছাড়া পানি উঠছে না গভীর নলকূপেও। এমনকি কোনো কোনো গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় মোটরেও পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রত্যন্ত হাওর আঞ্চলিক উপজেলা আজমিরীগঞ্জ। এক দশক আগেও এ উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। বছরের অধিকাংশ সময় এলাকার চারপাশে ছিল অথই পানি। অথচ উপজেলায় এখন বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শরীফনগর গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কখনো পানির অভাব হবে চিন্তাও করিনি। অথচ এখন টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। নদীও শুকিয়ে গেছে। কয়েক বছর পর হয়তো আর পানিই মিলবে না।’
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে জানা যায়, নদী ও বিল শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো জমিতে সেচের জন্য তোলা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। জেলার ৯টি উপজেলায় ৩ হাজার ৩৬৮টি সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়েছে 
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, যার মধ্যে ৩ হাজারের অধিক প্রকল্পে পানি উঠছে ভূগর্ভ থেকে।
উপজেলার বাসিন্দারা বলছেন, বিভিন্ন হাওরে বসানো শক্তিশালী সেচ প্রকল্পগুলো ভূগর্ভস্থ পানি টেনে নিচ্ছে। যে কারণে গ্রামের নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না।
শায়েস্তাগঞ্জের ওলিপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব আতাউর মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় নদী না থাকায় জমিতে সেচ নিয়ে সমস্যা হয়। ১০ বছর আগে শৈলজুড়া খাল খনন করে সুতাং নদ থেকে সেচ দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সেই খাল দিয়ে বিভিন্ন শিল্পকারখানার ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে আমরা সেচ দিতে পারি না। এ কারণে গ্রামের চারপাশে অনেকগুলো সেচ প্রকল্প বসানো হয়। এগুলো মাটির নিচ থেকে পানি টেনে নেওয়ায় গ্রামের টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না।’
বানিয়াচংয়ের সুবিদপুর গ্রামের প্রবিন্দ্র সরকার বলেন, ‘গ্রামের কোনো টিউবওয়েলেই পানি ওঠে না। মাঠের মধ্যে একটা টিউবওয়েল আছে, সেখানে কিছুটা পানি ওঠে।’ 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, চারপাশের নদী, খাল-বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় জমিতে সেচের জন্য ভূগর্ভ থেকে পানি তোলা হচ্ছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে গেছে। এতে পানির এই সংকট দেখা দিয়েছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘কৃষিজমিতে সেচের কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি নদী খনন চলছে। এ ছাড়া জেলার সব কটি নদীতেই যাতে সারা বছর পানি থাকে, এর জন্য খনন করা হবে। তখন ভূগর্ভস্থ পানি থেকে সেচনির্ভরতা 
কমে আসবে। পানির এই সংকটও কমে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত